ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ব্রিজ নির্মাণ না করেই বরাদ্দের ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা লোপাট

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২২
ব্রিজ নির্মাণ না করেই বরাদ্দের ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা লোপাট এই বাঁধের জায়গায় ব্রিজটি হওয়ার কথা ছিল।

বরগুনা: বরগুনার তালতলী উপজেলায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপির) আয়রন ব্রিজ প্রকল্পের কাজ শুরু না করেই টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় একটি প্যাকেজে টয়লেটে, টিউবওয়েল ও আয়রন ব্রিজের জন্য ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

উপজেলার কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর ঝাড়াখালী গ্রামের আমজেদ বয়াতী বাড়ির সামনে একটি আয়রন ব্রিজ নির্মাণ করার জন্য ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই এলাকার একটি পুরোনো আয়রন ব্রিজের মালামাল সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।  

নির্মাণকাজ করার জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে বরগুনার মেসার্স আকন্দ ট্রেডার্স ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেন্ডার পায়। সেই মেসার্স আকন্দ ট্রেডার্সের প্রোপাইটার মো. রেদোয়ান ঠিকাদারের থেকে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদীন মিঠু ও তার পাটনার সোহেল কাজটি সম্পন্ন করে দেওয়ার কথা বলে চুক্তিতে কাজটি নেন। এর পরে নিয়ম অনুসারে তৎকালীন অর্থবছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। টয়লেট ও টিউবওয়েল নির্মাণ করা হলেও ব্রিজটি নির্মাণ না করেই জুন মাসের শেষে পুরো প্যাকেজের টাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এলজিইডি অফিসের সঙ্গে যোগসাজশে বিল উত্তোলন করে নেন। এই প্রকল্পের কাজের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন সহকারী প্রকৌশলী মুরাদ হোসেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে কাজ না করে সরকারি লাখ লাখ টাকা কীভাবে ওঠালেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাগজপত্র অনুযায়ী গত তিন অর্থবছর আগে কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর ঝাড়াখালী এলাকায় আমজেদ বয়াতী বাড়ির সামনে একটি লোহার আয়রন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেই ব্রিজের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অথচ ২০১৯-২০ অর্থবছরে কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে প্রকল্পের পুরো টাকা তুলে নিয়েছেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক।  

কড়ইবাড়িয়ার দক্ষিণ ঝাড়াখালী ইউনিয়নের লিটন হাওলাদার ও নান্নু হাওলাদারসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, বয়াতী বাড়ির সামনে একটা লোহার আয়রন ব্রিজ হওয়ার কথা ছিল তিন বছর আগে। ঠিকাদার এসে শুধু মেপে গেছেন কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ব্রিজ হয়নি। তাই আমাদের চলাচলের জন্য এই স্থানে বাঁধ করে দেওয়া হয়েছে।

তারা আরও বলেন, দেশের সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলায় সরকারের দেওয়া টাকা হরিলুট হয়ে যায়। আর এটা আমাদের দেখতে হয়। কেন এ উপজেলা দরিদ্র থাকবে না। সরকারের বরাদ্দ কোনো কাজ করে না।

ওই সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য জালাল গাজী বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আলতাফ হোসেন আকন এডিপির বরাদ্দের এই ব্রিজটি স্কিমে দিয়ে যান। তিনি মারা গেছেন তিন বছর আগে কিন্তু আজ পর্যন্তও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্রিজটি করেনি।

ঠিকাদার থেকে চুক্তিতে নেওয়া কাজের সহকারী ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদিন মিঠু বলেন, আমি ও আমার পাটনার সোহেল বরগুনার এক ঠিকাদার থেকে কাজটি ক্রয় করেছি। ওই প্যাকেজের দুটি কাজ হলেও ব্রিজটি নির্মাণ হয়নি। তবে বৃষ্টি শেষ হলেই ব্রিজটি নির্মাণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমার এক লাখ টাকা জামানত আছেন। এছাড়াও আমার নামে পে অর্ডার কেটে জমা দিয়েছি। সেটা এলজিইডি অফিসে আছে। আপনাদের বিশ্বাস না হলে ব্যাংকে গিয়ে দেখতে পারেন।  

মেসার্স আকন্দ ট্রেডার্সের প্রোপাইটার মো. রেদোয়ান হোসেন বলেন, আমার লাইসেন্স নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা ওই এডিপির প্যাকেজটি পেয়েছেন।

কীভাবে কাজ না করে বিল উত্তোলন করলেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রে-অর্ডার জমা দিয়ে বিল নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আপনারা মিঠুকে জিগ্যেস করেন তিনি ভালো বলতে পারবেন। এছাড়া আপনারা নিউজ না করে ব্রিজটি নির্মাণ করার জন্য সহযোগিতা করেন।

এ বিষয়ে আয়রন ব্রিজ নির্মাণ কাজের তদারকি কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মুরাদ হোসেন জানান, বরগুনার এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদিন মিঠু এই কাজটি পেয়েছেন। কাজ না হলেও তিন অর্থবছর আগে বিল ঠিকাদারকে দেওয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেন। তাছাড়া প্রকল্পের সমস্ত টাকাই ফেরত যেত। গত তিন অর্থবছরে কাজ সম্পন্ন না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন বর্ষা শেষ হলে কাজ শুরু করা হবে।

তিনি আরও বলেন, মিঠুর থেকে পে অর্ডার রাখা হয়েছে।  

সদ্য বিদায়ী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আহম্মদ আলী বলেন, কাজের সমপরিমাণ পে অর্ডার রেখে বিল দেওয়া হয়েছে। আগামী শুকনো মৌসুমে ব্রিজের কাজ করা হবে। কাজ না করে প্রে অর্ডার রেখে বিল দেওয়া যায় কি না? এ বিষয়ে তিনি বলেন, কাজ শেষ না হলে সরকারি কোনো আইনে পে অর্ডার রেখে বিল দেওয়ার বিধান নেই। তবে স্থানীয়ভাবে এই পে-অর্ডার রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা শুধুমাত্র ছাত্রলীগ সেক্রেটারিকে চিনি। তবে তিনি কাজটি দ্রুত করে দেবেন।  

উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী ইমতিয়াজ হোসাইন রাসেল বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। এই বিষয়টি আমার জানা নেই তবে খতিয়ে দেখে বলা যাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম সাদিক তানভীর বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আমি পাইনি। এডিপির অর্থ দিয়ে প্রকল্পগুলো স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বাস্তবায়ন করে থাকে। কাজ সম্পন্ন না করে টাকা উত্তোলনের সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।