ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঠেকানো যাচ্ছে না লিবিয়ায় মানবপাচার

তৌহিদুর রহমান, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২২
ঠেকানো যাচ্ছে না লিবিয়ায় মানবপাচার

ঢাকা: নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও কোনোভাবে ঠেকানো যাচ্ছে না লিবিয়ায় মানবপাচার। প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ থেকে উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে মানবপাচার হচ্ছে।

অবৈধ উপায়ে দেশটিতে গিয়ে বহু বাংলাদেশি কারাবরণ করেছে। এ সংবাদ পেয়েও থেমে নেই লিবিয়া যাত্রা।

২০১১ সালে লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ৩৬ হাজারেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালে লিবিয়ায় জনশক্তি পাঠানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু বিষয়টিকে পাত্তা না গিয়ে কিছু অসাধু চক্র বিভিন্নভাবে অবৈধ উপায়ে দেশ থেকে লিবিয়ায় মানবপাচার করে আসছে। চলতি বছর থেকে অবশ্য ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে যারা লিবিয়া যান, তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়া। ইউরোপের দেশটিতে যেতে তাদের ট্রানজিট মূলত লিবিয়াই। কিন্তু সেখানে গিয়ে যে পথ মসৃণ হয়, তা নয়। দেশটির পুলিশের কর্তৃক গ্রেফতার হন অনেকেই। আবার অনেকেই হন অপহরণের শিকার। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে থাকে অনেক।

লিবিয়ায় মানবপাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম- জনসচেতনতা বৃদ্ধি। লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার প্রবণতা বেশি মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার যুবকদের। সে কারণে এ দুই জেলায় গণসচেতনতা আনতে কর্মসূচিও চালিয়ে আসছে সরকার। কেউ যেন অবৈধ পথে লিবিয়া না যান, সে লক্ষ্যেই এ কর্মসূচি।

বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারকারীরা বেশ কয়েকটি রুটে প্রত্যাশীদের লিবিয়া নিয়ে যান। এর মধ্যে ঢাকা থেকে দুবাই, তুরস্ক, মিশর ও ভারত হয়ে বেশিরভাগ লোককে নিয়ে যাওয়া হয়। আর লিবিয়া থেকে পরে নিয়ে যাওয়া হয় ইতালি। ইতালি পর্যন্ত পৌঁছাতে এক একজনকে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা দিতে হয়।

লিবিয়ায় বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক আটক রয়েছেন। বেশ কয়েক দফায় বাংলাদেশ দূতাবাস লিবিয়ার ডিটেনশন সেন্টার থেকে এসব বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে এনেছেন। অনেক বাংলাদেশি লিবিয়ায় গিয়ে জেল খাটার পর খালি হাতে দেশে ফিরেছেন। এখনও প্রায় ৩০০ বাংলাদেশি সেখানের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটকা রয়েছেন। তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

লিবিয়ায় এখন তিনটি সরকার দেশটির বিভিন্ন অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এসব সরকারের সমর্থক গোষ্ঠী একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। দেশটিতে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। এই অবস্থার মধ্যে কখনো কখনো বাংলাদেশিরা আটক হয়ে থাকেন। কোন পক্ষের হাতে বাংলাদেশিরা আটক হয়েছেন, সেটা জানাও অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। আবার বাংলাদেশিদের আটক করে মুক্তিপণও আদায়ের ঘটনাও ঘটছে।

লিবিয়ায় মানব পাচার ঠেকাতে মূলত জনসচেতনতাকেই জোর দিচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশে মানবপাচার প্রতিরোধে আমরা এক যোগে কাজ করছি। আমরা নিরাপদে অভিবাসনে আগ্রহী। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে কোনো অভিবাসন আমরা চাই না। অবৈধ পথে অভিবাসনের ঝুঁকি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে আমরা কাজ করছি। লিবিয়া হয়ে অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি কেউ যেন না যান, সেই লক্ষ্যে মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলায় জনসচেতনতা বাড়ানোর কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২২
টিআর/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।