ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জিয়ার মরণোত্তর বিচারের জন্য ‘স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ গঠনের দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২২
জিয়ার মরণোত্তর বিচারের জন্য ‘স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ গঠনের দাবি

ঢাকা: বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ঠাণ্ডা মাথার খুনি উল্লেখ করে তার মরণোত্তর বিচারের দাবিতে ‘স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ গঠনের দাবি জানিয়েছে ১৯৭৭ সালে কথিত বিদ্রোহ দমনের নামে সেনা ও বিমান বাহিনীর কারাদণ্ড, চাকরিচ্যুত ও ফাঁসি হওয়া সদস্যদের পরিবারবর্গ।

মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে চন্দ্রিমা উদ্যানের সামনে ‘মায়ের কান্না’ নামে এক সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনে ১৯৭৭ সালে সেনা ও বিমান বাহিনীর চাকরিচ্যুত, কারাদণ্ড ও ফাঁসি হওয়া সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, আমাদের বাবারা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ঢাকায় জাপানি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় তৎকালীন স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পরিকল্পিতভাবে একটি অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তৈরি করেন। পরবর্তীতে তথাকথিত বিদ্রোহ দমনের নামে জিয়াউর রহমান একদিনের সামরিক আদালতে বিচার করে সেই রাতেই ফাঁসি সম্পন্ন করেন ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর ও বগুড়া কেন্দ্রীয় কারাগারে। রাতের আঁধারে কারফিউ দিয়ে ফাঁসি কার্যকর করা হতো। কোনো প্রকার ধর্মীয় সৎকার ছাড়াই লাশগুলো ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে, কুমিল্লার টিক্কারচর কবরস্থানে মাটি চাপা দেওয়া হয়।

সেনা শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের নির্দেশে গঠিত বিশেষ সামরিক ট্রাইব‍্যুনালের কথিত বিচারে ফাঁসি হওয়া ১৯৩ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু ওই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ছিল এক হাজার ১৪৩ জন। এছাড়া কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন সেনা ও বিমান বাহিনীর আড়াই হাজার সদস্য। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তড়িঘড়ি করে ফাঁসি দেওয়ার আগে আত্মপক্ষ সমর্থন কিংবা আইনজীবী নিয়োগের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। অথচ এ মানুষগুলোর ন্যায় বিচারের অধিকার ছিল।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে রাজাকারদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি না আমাদের বাবা ও স্বামীর কবর কোথায়। কোথায় কীভাবে তাদের কবর দেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের বাবার কবরে একটু মোনাজাত করবো, সেই সুযোগ নেই। অথচ সংসদ ভবনের মতো পবিত্র জায়গায় খুনি জিয়ার কবর রয়েছে। অবিলম্বে এখান থেকে তার কবর অপসারণ করা হোক এবং বিনা বিচারে হত্যার দায়ে জিয়ার মরণোত্তর বিচারের জন্য ‘স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ গঠন করা হোক।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ (বীর বিক্রম), মাহাবুব উদ্দীন আহমদ (বীর বিক্রম), ১৯৭৫ সালে ৭ নভেম্বর শহীদ কর্নেল নাজমুল হুদার মেয়ে সংসদ সদস্য (এমপি) নাহিদ এজাহার খান, শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তমের মেয়ে মাহজাবিন খালেদ প্রমুখ।

মানববন্ধনে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক বলেন, আজকে আমরা এখানে জমায়েত হয়েছি বিশ্বের নিকৃষ্ট খুনি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার এবং সংসদ ভবন এলাকা থেকে তার নামে যে স্থাপনা রয়েছে তা সরিয়ে ফেলার দাবিতে। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের মুখোশ পরে পাকিস্তানের চর হিসেবে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষে জিয়া যখনি সুযোগ পেয়েছেন তার পাকিস্তানের প্রভুদের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছেন। জিয়া অগণিত মানুষকে বিচারের প্রহসনের নামে হত্যা করেছেন। এসব হত্যাকাণ্ড থেকে তাকে নিষ্কৃতি দেওয়া যায় না। আমরা তার মরণোত্তর বিচার দাবি করছি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট সাঈদুর রহমানের ছেলে কামরুজ্জামান মিয়া লেলিন বলেন, জিয়াউর রহমানের অবশ্যই বিচার করা উচিত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, বঙ্গবন্ধুহত্যার বিচার হয়েছে। জিয়াউর রহমান যে ১৪০০ সেনা ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাকে হত্যা করেছেন তার বিচারও হওয়ার দরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার বজলুল হক বলেন, জিয়ার দ্বারা যারা নির্যাতিত, তারা যেন সুবিচার পায় এবং হত্যাকাণ্ডে যারা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ছিল তাদেরও যেন মরণোত্তর বিচার করা হয়।

সংসদ সদস্য নাহিদ এজাহার খান বলেন, ৪৭ বছর হলো আমরা বাবা হারা। আমি শুধু একা নই আমার অনেক ভাই-বোনেরাও তাদের বাবাকে হারিয়েছেন, যারা জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের ষড়যন্ত্রের শিকার। আমি দাবি করছি, আমাদের সবার বাবাদের অন্যায়ভাবে জিয়াউর রহমান খুন করেছেন, ফাঁসি দিয়েছেন, এজন্য জিয়াউর রহমানের এবং আরও যারা জড়িত ছিলেন তাদের যেন মরণোত্তর বিচার করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০২২
আরকেআর/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।