ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সৈয়দপুরের রাজিয়া পেলেন জয়ী সম্মাননা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২২
সৈয়দপুরের রাজিয়া পেলেন জয়ী সম্মাননা

নীলফামারী: সফল নারী উদ্যোক্ত নীলফামারী সৈয়দপুরের রাজিয়া জয়ী সম্মাননা লাভ করেছেন। সম্মাননা স্বরূপ থ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কাছ থেকে তিনি সম্মাননা স্মারক ও সনদ লাভ করেছেন।

 

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) উই সামিট ২০২২ -এর জয়ী অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। সারা দেশে সফল ২০ নারীকে ওই জয়ী অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।

সৈয়দপুরের রাজিয়া যার মধ্যে অন্যতম। তিনি বেস্ট এক্সপোর্ট অফ দ্যা ইয়ার-২০২২ নির্বাচিত হন।

উইমেন এন্টারপ্রেনিউরশিপ সামিটের সমাপনী দিনে বিজয়ীদের নাম ঘোষণার পর তাদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নারীর ক্ষামতায়নে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে অভিহিত করে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী। তাই তারা সফল হয়।  
নিজে জয়ী হতে না পারার আক্ষেপ প্রকাশ করে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে উই প্রতিষ্ঠাতা

সভাপতি নাসিমা আক্তার নিশা সবাইকে নিজেদের সক্ষমতা ধরে রাখার আহ্বান জানান। তিনি উই পরিচালক ইমানা চৌধুরী, ফুডপ্যান্ডা সহ-প্রতিষ্ঠাতা আম্বারিন রেজা, বিশ্ব ব্যাংকের উইফি প্রকল্প প্রধান হোস্না ফেরদৌস সিমু ও যুক্তরাজ্য দূতবাসের ড্যান পাশার হাতে সম্মেলনের ধন্যবাদ স্বারক তুলে দেওয়া হয়। সব শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেওয়ার পাশাপাশি জয়ী উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, রাজিয়া সৈয়দপুরে গড়ে তুলেছেন ‘নান্দনিক ক্রাফট’ নামে নারীদের স্বাবলম্বী করার প্রতিষ্ঠান। তাঁর প্রতিষ্ঠানে ১২ জন নারী কর্মী কাজ করছেন। নিজেদের তৈরি পাটপণ্য দেশের গণ্ডী পেরিয়ে নজর কেড়েছে বিদেশি গ্রাহকদেরও। ফলে দেশ বিদেশে সমানতালে বিক্রি হচ্ছে রাজিয়ার হাতে তৈরি নজরকাড়া সব পাটজাত পণ্য । নান্দনিক ক্রাফট নামে রাজিয়া সুলতানা এই প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করে ২০১৮ সাল থেকে।

২০২০ সাল। ভয়াবহ কোভিডকাল। কেউ ঘর থেকে বের হন না। এমন পরিস্থিতিতে ঘরে বসেই অনলাইনে প্রচুর বিক্রয় (অর্ডার) আদেশ পেতে থাকেন রাজিয়া সুলতানা। তাঁর প্রতিষ্ঠান নান্দনিক ক্রাফটে তৈরি হয়, সোফার কুশন, নারীদের হ্যান্ড ব্যাগ, টেবিল রানার, পাটের শোপিস, পুতুল, প্লেসমেট, ওয়াল মিরর, শপিং ব্যাগ, প্যাকেজিং ব্যাগ, লাঞ্চ ব্যাগ, মানিব্যাগ, ওয়ালেট, ঝাড়বাতি, শিকা, চটি সেন্ডেল, শিশুদের দোলনা, বীচ দোলনা, হ্যামক দোলনা ইত্যাদি।

প্রথমে অনলাইনে বিক্রয় শুরু হয়। পরে ইভেন্ট ও মোবাইলফোনে চাহিদা আসতে থাকে। রাজিয়ার তৈরি ওই পণ্য অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, কাতার ও জাপানেও রপ্তানি হচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রামেরও অনেক সুপার শপে যাচ্ছে এসব পাটপণ্য। বাংলাদেশের নারী উদ্দ্যোক্তাদের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম উই গ্রুপের লাখ লাখ নারীকে পেছনে ফেলে জিতেছেন সম্মাননা পুরস্কার।

৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে কয়েক বছর আগে রাজিয়া শুরু করেন পাটের পণ্য উৎপাদনের কাজ। এ সময় তিনি বেচাকেনার সুবিধার্থে ‘নান্দনিক ক্রাফট’ নামে ফেসবুকে পেজ ও উইয়ের অফিসিয়াল গ্রুপে পণ্যের প্রচারণা চালাতেন। ধীরে ধীরে এভাবেই রাজিয়ার নান্দনিক ক্রাফট গ্রাহক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে।

নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরে সরকারপাড়া এলাকায় ২০০৬ সালে বিয়ে হয় রাজিয়া সুলতানার। তাঁর গ্রামের বাড়ি পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ উপজেলার সিঙ্গেরগাড়ী গ্রামে। সৈয়দপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল রাজার মেজো ছেলে মালেক উজ জামানের সাথে বিয়ে হয় রাজিয়ার। তখন তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজের দর্শন বিষয়ে সম্মান তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।

বিয়ের পরেও অবশ্যই লেখাপড়া চালিয়ে যান তিনি। একই কলেজ থেকে স্নাকোত্তর করেন ২০০৯ সালে। তাঁর রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে। এরই মধ্যে ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন রাজিয়া সুলতানা। প্রস্তুতি নেন শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হবেন।

রাজিয়া জানান, তাঁর ব্যবসায়ী স্বামী কোনোভাবেই চাচ্ছিলেন না বাইরে গিয়ে চাকরি করেন তিনি। ওই সময় স্বামীর ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে শিক্ষক হতে পারেননি তিনি। ফলে কিছুটা মনোকষ্ট ছিল তাঁর। সারাক্ষণ আনমনা থাকতেন তিনি। কিছুই ভালো লাগতো না তাঁর কাছে।

সহধর্মীনির মনোভাব বুঝে ফেলেন স্বামী মালেকুজ্জামান। মালেক স্ত্রীকে উদ্যোক্তা হতে আহবান জানান। এরপর ধীরে ধীরে হাতের কাজ শুরু করেন রাজিয়া সুলতানা। শুরুতে ছিলেন একা। এখন তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ১২ জন নারী কর্মী।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।