ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শর্ত ভেঙে উত্তরা আবাসনের ২২৪ বাড়ি বিক্রি!

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২২
শর্ত ভেঙে উত্তরা আবাসনের ২২৪ বাড়ি বিক্রি!

নীলফামারী: ভূমিহীন ছিন্নমূল মানুষদের জন্য গড়ে তোলা উত্তরা আবাসন প্রকল্পের ২২৪টি বাড়ি বিক্রি হয়ে গেছে। নতুন বাসিন্দাদের অনেকেই ওই বাড়িগুলোতে করছেন মাদকের ব্যবসা।

বসছে আখড়া চলছে অসামাজিক কাজ। এসব অভিযোগ নিরীহ প্রতিবেশীদের।  

এ নিয়ে প্রশাসনকে অভিযোগ করেও কোনো ফল মিলছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সৈয়দপুর উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, দেশের বৃহত্তম উত্তরা আবাসন প্রকল্পটি ২০০৪ সালে সৈয়দপুরে গড়ে ওঠে। ১০০০ ভূমিহীন পরিবারকে ওই প্রকল্পে পুনর্বাসন করা হয়। ব্যারাক হাউজগুলোতে ২ শতক জমিসহ একটি করে বাড়ির মালিকানা দেওয়া হয় বাসিন্দাদের। ওই সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি গড়ে ওঠে।

সূত্র জানায়, ব্যারাক হাউজের বরাদ্দপ্রাপ্তরা অবশ্যই ভূমিহীন হবেন। তাঁরা কোনোক্রমেই বরাদ্দকৃত বাড়ি বিক্রি ও হস্তান্তর করতে পারবেন না। অথচ এরই মধ্যে ২২৪ জন তাঁদের বসতবাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন। যারা কিনে নিয়েছেন তাঁদের অনেকেই আবার জড়িয়ে পড়েছেন মাদক ব্যবসাসহ নানান অসামাজিক কাজে।  

সরেজমিনে গেলে উত্তরা আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা জিকরুল হক অভিযোগ করেন তাঁর বাড়ির অপরপ্রান্তে বসবাসকারী ব্যক্তি মাদক ব্যবসায় জড়িত। গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাঁর মাদকের আখড়া। মাতালরা অশ্রাব্য, অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করে। এতে এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকা দায় হয়ে গেছে।  

তিনি বলেন, বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

একই এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আবাসনে বসবাস করা এখন দায় হয়ে গেছে। মাদক ব্যবসা তো চলছেই অবৈধ বাসিন্দারা চুরি ছিনতাইও করছে। কিছুদিন আগে এক বিকাশ কর্মী হাবিবুর রহমান বাবুকে হত্যা করে ২০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।  

আবাসনের ২৯/১০ নম্বর বাড়ির মূল মালিকের কাছে থেকে কিনে নেন নুর আমিন (৪০) নামে এক ব্যক্তি। তিনি একজন মাদক ব্যবসায়ী। ওই ব্যক্তি বিকাশ কর্মীকে গুলি করে হত্যা করে। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন।  

এলাকার বাসিন্দারা জানান, আবাসনের যারা বরাদ্দ পয়েছেন তাঁদের অনেকেরই নিজেদের বাড়ি রয়েছে। এদের কয়েকজনের আবার রয়েছে চারতলা বাড়িও। উত্তরা আবাসন এলাকা ঘুরে ২৬টি বাড়ি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ৩৪/২ নম্বর বাড়িতে গেলে কথা হয় আকবর হোসেন (৩৫) নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, বাড়িটি তাঁর নামে বরাদ্দ নয়। এর মূল মালিক হচ্ছেন কলিম উদ্দিন। মূল মালিক কলিম উদ্দিনের কাছ থেকে তিনি ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বাড়িটি কিনেছেন। এভাবে ২/৭ নম্বর বাড়িটি ছিল রশিদুল হকের নামে। বাড়িটি কিনে নিয়েছেন আয়াস আলী। ২/৬ নম্বর বাড়িটি বরাদ্দ ছিল মমেনা বেগমের নামে। আশরাফুল ইসলাম বাড়িটি কিনে গোডাউন বানিয়েছেন। ২/৯ বাড়িটি বরাদ্দ ছিল জাহানারা বেগমের নামে। তিনি মাঝিয়া বেগমের কাছে তা বিক্রি করেছেন।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা জানান, নিচের ১ লাখ থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আবাসনের বাড়ি। এসব জানে না এমন কেউ নেই। তিনি তদন্ত করে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের দাবি করেন।

এ নিয়ে সৈয়দপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম হুসাইনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, শর্ত ভেঙে আবাসনের বাড়ি বিক্রি হয়েছে এ অভিযোগ আমি পেয়েছি। এছাড়াও এলাকাটি অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। যারা অপরাধে জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সার্বিক বিষয় আমরা তদন্ত করে দেখছি। পাশাপাশি উচ্ছেদ প্রক্রিয়াও চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।