ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় আকতারুল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় আকতারুল আকতারুল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের নিমইল গ্রামের দিনমজুর সাইফুদ্দিন। চার ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার।

বর্তমানে বয়সের ভারে ক্লান্ত তিনি। নিজের জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করেন।

সাইফুদ্দিনের তিন ছেলে ইতোমধ্যে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। ছোট ছেলে আকতারুল বাবা-মায়ের সঙ্গে থেকে তাদের কাজে সহযোগিতা করেন। তাদের সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে। এতো কষ্টের মধ্যেও আকতারুল লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। ছাত্র হিসেবে মেধাবী হওয়ায় ও অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে সে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। আকতারুলের শিক্ষা জীবন শুরু হয় সোনানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। ২০১৪ সালে পিএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে মৃধাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সেখান থেকে ২০১৭ সালে জেএসসিতে জিপিএ-৫ এবং ২০১৯ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তীতে তার যোগ্যতায় সে রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। সেখান থেকে সে ২০২১ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। অভাবের কারণে সে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়িয়ে এবং অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে তার লেখাপড়ায় খরচ জোগায়। এছাড়া সে এসএসসি পরীক্ষার পর নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে তার এইচএসসি ভর্তির টাকার জোগাড় করে। সে সময় নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ড. শাহাদাৎ হোসেন তাকে ছাত্রাবাসে থাকার সুযোগ করে দেন।  

মেধাবী আকতারুল বলে, আমি দারিদ্র্যতার মধ্যে বড় হয়েছি। অন্যের জমিতে বাবার সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করেছি। আমার বাবা-মা আমার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। করোনার সময়ে কলেজ বন্ধ থাকায় গ্রামের বাড়িতে এসে প্রাইভেট পড়িয়ে ও দিনমজুরের কাজ করে এইচএসসির খরচ জুগিয়েছি। দুটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। কারণ ছোট থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ঢাকায় পড়াশোনা করার। মহান আল্লাহ আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। এখন আপনাদের সবার দোয়া ও ভালোবাসায় বিসিএস দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে অংশ নিতে চাই।  

আকতারুলের বাবা সাইফুদ্দিন বলেন, অভাবের কারণে আমার ৬ সন্তানের মধ্যে আকতারুল ছাড়া অন্য সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারিনি। কিন্তু আকতারুলের লেখাপড়ার প্রতি চরম আগ্রহ থাকায় আর থেমে থাকিনি। কষ্ট হলেও তাকে লেখাপড়া করিয়ে গেছি। এখন একটাই স্বপ্ন আকতারুল লেখাপড়া শিখে একটি চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। দিনমজুর বাবা হিসেবে আমি যেন গর্ববোধ করতে পারি।

মৃধাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, শুরু থেকেই মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে আকতারুল। আজ সে নিজ যোগ্যতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এজন্য আমিসহ আমার স্কুলের সব শিক্ষক গর্ববোধ করি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ফলাফল প্রকাশের পর তার ভর্তির টাকা নিয়ে সে দুশ্চিন্তায় পরে। সংবাদ পেয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা প্রশাসন ও রহনপুর পৌরসভা তার পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন রেজার উপস্থিতিতে উপজেলা নিবার্হী অফিসার আসমা খাতুন তার হাতে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন। একইভাবে রহনপুর পৌর মেয়র মতিউর রহমান খাঁন আকতারুলকে আর্থিক সহায়তা করেন। এসময় গণমাধ্যম কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।

ইউএনও আসমা খাতুন জানান, মেধাবী ছাত্র আকতারুলের পাশে কিছুটা হলেও থাকতে পেরে গর্ববোধ করছি। দোয়া করি সে যেন তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। একই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন রহনপুর পৌর মেয়র মতিউর রহমান খাঁন।

বর্তমানে তিনি তাদের আর্থিক সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু এখনো চিন্তা রয়েছে তার মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার খরচ জোগানো নিয়ে। মেধাবী এই শিক্ষার্থীর পাশে সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।