ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

৩ বছর ধরে লোহার শিকলে বন্দি ফারুকের জীবন

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২
৩ বছর ধরে লোহার শিকলে বন্দি ফারুকের জীবন

ফরিদপুর: মানসিক ভারসাম্যহীন ৫০ বছর বয়সী মো. ওমর ফারুক তিন বছর ধরে লোহার শিকলে বন্ধী জীবন কাটাচ্ছেন। ঘরের পেছনে একটি টিনের খোলা ছাউনির নিচে কোমরে শিকল আর তালা দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে।

সেখানেই চলে তার খাওয়া-দাওয়া আর প্রসাব-পায়খানা। এমনকি শরীরে কোনো কাপড় রাখতেও চান না তিনি। প্রায় সময়েই থাকেন বস্ত্রহীন।

স্বামীর এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে ১৭ বছরের সংসার ছেড়ে চলে গেছেন স্ত্রী। একমাত্র ছেলের পড়ালেখাটাও মাটি হয়ে গেছে এ পরিস্থিতির কারণে।

ফারুক ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের সদরবেড়া গ্রামে মৃত শেখ আমিন উদ্দিনের ছেলে। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে ফারুক ছিলেন দ্বিতীয়। অভাবের কাছে হার মেনে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পাশ করে বাবার সঙ্গে সংসারের হাল ধরেন তিনি। প্রায় ২০ বছর আগে উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের কুঞ্জনগর গ্রামে বিয়ে করেছিলেন। তার সুখের সংসারে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান জন্ম হয়েছিল। ফারুকের জীবন কাহিনীর এসব তথ্য জানান প্রতিবেশীরা।

ফারুকের ৮০ বছর বয়সী মা ফুলি বেগম বলেন, ২২-২৩ বছর আগে একদিন গভীর রাতে বাড়ির পাশের ফসলি মাঠে ধানের খড় আনতে গিয়েছিল ফারুক। সেখান থেকে বাড়ি ফিরেই সে পাগলামি শুরু করে। পরনের কাপড় ছিড়ে ফেলে ও ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর শুরু করেছিল। পরে চিকিৎসা করালে সে সুস্থ হয়। তখন তাকে বিয়ে করিয়ে দেই। পরে গত তিন বছর আগে ফারুক আবার পাগলামি শুরু করে। দুই-তিনবার তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিলেও সে ভালো হয় না। তারপর থেকে বাধ্য হয়েই তাকে শিকলবন্ধী করে রেখেছি। শিকল খুলে দিলে কারো ক্ষতি করবে, অথবা কোথাও চলে যাবে।

তিনি বলেন, টাকা-পয়সার অভাবে ফারুককে সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছি না। অভাবের তাড়নায় তার বউ রাশিদা বেগম সংসার ছাড়েন। শুনেছি সংসার ছেড়ে তিনি নাকি সৌদি আরব চলে গেছেন। এখন এই বয়সে এসেও ওর দেখাশুনা খাওয়া-দাওয়া সবই আমার করাতে হয়।

তিনি আরও বলেন, ফারুক ভালো থাকতে তার ছেলে ইলিয়াস শেখ ভালোভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিল। ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছির সে। এরই মধ্যে তার বাবার পাগল হয়ে পড়ায় তার পড়ালেখা বাদ দিয়ে ঢাকায় মামার দোকানে কাজ করা শুরু করতে হয়। আর ছয় বছর বয়সী মেয়েটা ওর নানার বাড়িতে একটি কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। ফারুকের চিকিৎসার জন্য কোনো সাহায্য পাওয়া গেলে হয়তো এমন দিন আর দেখতে হবে না।

তালমা ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন মিয়া বলেন, বিষয়টি জানার পর ফরুকের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তার সু-চিকিৎসার জন্য আমার পক্ষ থেকে সহযোগিতা করবো।

নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম ইমাম রাজি টুলু বাংলানিউজকে বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন ফারুকের খোঁজ-খবর নিতে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। ওর ভালো চিকিৎসার করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।