ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাংবাদিক শিরিনকে হত্যার কথা স্বীকার করছে ইসরায়েল, তবে...

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২
সাংবাদিক শিরিনকে হত্যার কথা স্বীকার করছে ইসরায়েল, তবে...

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েল। তবে দেশটির দাবি, তাদের একজন সেনা শিরিনকে ‘জঙ্গি’ ভেবে গুলি করেছিলেন।

স্থানীয় সময় সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়।

আল জাজিরা জানিয়েছে, ঘটনার দিন সশস্ত্র ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের চিহ্নিত করে সন্দেহভাজনদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তখন এক সেনার গুলিতে তার মৃত্যু হয়। পুরো ঘটনাই ‘দুর্ঘটনাবশত’ ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

গত ১১ মে পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত হন আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ। শুরু থেকেই তার নিহত হওয়ার দায় অস্বীকার করে আসছিল ইহুদি রাষ্ট্রটি। কিন্তু ৫১ বছর বয়সী শিরিনের সহকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, সংবাদ সংগ্রহের সময় ইসরায়েলি সেনার গুলিতে তিনি প্রাণ হারান। তার মাথায় গুলি করা হয়েছিল।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর গুলিতেই প্রাণ হারান শিরিন। বিশ্বব্যাপী এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর তদন্তের পরিকল্পনা ছিল না। যদিও কয়েক মাস পরে ‘কার্যত’ নিজেদের দোষ স্বীকার করলো ইসরায়েল।

ইসরায়েলের একজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, কোন বন্দুকের গুলিতে শিরিন নিহত হন, সেটি নির্দিষ্ট করা সম্ভব না। কিন্তু একজন আইডিএফ সেনা ‘ভুল করে’ তাকে গুলি করে। তিনি শিরিনকে সাংবাদিক হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেননি।

অথচ নিহত হওয়ার পর শিরিনের যে ছবি প্রকাশ পেয়েছে, তাতে দেখা যায় তিনি  ‘প্রেস’ লেখা একটি বুলেটপ্রুফ ভেস্ট ও হেলমেট পরিহিত ছিলেন।

এদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিবেদনের তথ্য মিথ্যা বলে দাবি করেছে সাংবাদিক শিরিনের পরিবার। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা ‘ইসরায়েল এ হত্যাকাণ্ডের দায় নিতে অস্বীকার করছে’ বলে অভিযোগ করেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ‘বিশ্বাসযোগ্য’ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

আইডিএফ’র তদন্ত প্রতিবেদনের সমালোচনা করছে নিউইয়র্কভিত্তিক কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)। শেরিফ মনসুর নামে সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার প্রোগ্রাম সমন্বয়কারীর দাবি, আইডিএফ’র অপরাধ স্বীকারের বিষয়টি অনেক দেরিতে এসেছে; তা ছাড়া এটি অসম্পূর্ণ। তারা শিরিনের হত্যাকারীর নাম জানায়নি। নিজেদের ভাষ্য ছাড়া অন্য কোনো তথ্যও দেয়নি। এটিও বলছে না হত্যাকাণ্ডটি তাদের বড় ভুল ছিল।

সেনাবাহিনীর এ প্রতিবেদনকে ‘হোয়াইটওয়াশ’ বলে নিন্দা করছে ইসরায়েলেরই একটি মানবাধিকার গ্রুপ। শিরিনকে হত্যা কোনো ভুল ছিল না এবং এটি নিতান্তই একটি রাজনীতি ছিল বলে গ্রুপটি মন্তব্য করেছে।

শিরিনকে যখন গুলি করা হয়, তখন সশস্ত্র ফিলিস্তিনিদের কাছাকাছি কোনো কার্যক্রমের প্রমাণ ছিল না বলে গত জুনে জানায় জাতিসংঘের একটি তদন্ত টিম।

সোমবার ইসরায়েলি প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, মর্মান্তিক এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা ইসরায়েলি পর্যালোচনাকে স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে ফের বিষয়টি নিয়ে জবাবদিহিতার ওপর জোর দিচ্ছি। এ ধরনের ঘটনা যাতে আবার না ঘটে- সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

সূত্র : আল জাজিরা

বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।