ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সরকারি ঘরের নামে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ গ্রামপুলিশের বিরুদ্ধে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২২
সরকারি ঘরের নামে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ গ্রামপুলিশের বিরুদ্ধে

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে টাকা নেওয়ার (ঘুষ) অভিযোগ উঠেছে হরদেব চন্দ্র বর্মন নামে এক গ্রামপুলিশের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের পর ভুক্তভোগীকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামবাসীর গণস্বাক্ষরে লিখিত একটি অভিযোগ উপজেলা ও জেলা প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে।

 

এ ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

ঘটনাটি ঘটেছে জেলার আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে। অভিযুক্ত গ্রামপুলিশ হরদেব চন্দ্র বর্মন মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) কর্মরত রয়েছেন।

অভিযোগে জানা যায়, কৃষ্ণনগর গ্রামের পাশে ৬ নম্বর ধামোর ইউনিয়নের জুগিকাটা ওয়ার্ডে ৭১ এর গ্রাম উন্নয়নে সরকারি ঘর হতে যাচ্ছে। এ ঘর দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কৃষ্ণনগর ওয়ার্ডের রোহিতা রানী নামে এক নারীর কাছ থেকে গ্রামপুলিশ হরদেব চন্দ্র বর্মন গত ৬ আগস্ট  ৩১ হাজার টাকা নেন। ওই নারীর সঙ্গে তার স্বামীর বিচ্ছেদ হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযোগ রয়েছে, কৃষ্ণনগর ওয়ার্ডের কয়েকজন সাধারণ মানুষকে ঘরসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন হরদেব। সেই টাকা পরে আত্মসাৎ করে সাধারণ মানুষকে ঘর ও সরকারি সুযোগসুবিধা না দিয়ে হয়রানি করারও অভিযোগ উঠেছে হরদেব চন্দ্র বর্মনের বিরুদ্ধে।  

ঘর না পেয়ে রোহিতা রানী ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানান। পরে গত ৮ আগস্ট চেয়ারম্যানের মাধ্যমে হরদেবের ওপর চাপ প্রয়োগ করলে ওই নারীকে ৩১ হাজার টাকা ফেরত দেন তিনি। তবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করায় এবং টাকা আত্মসাৎ করায় গ্রামপুলিশ হরদেব চন্দ্রের বিচার দাবি করেন এলাকাবাসী।

অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, ঘটনার পর থেকে গ্রামপুলিশ হরদেব কৃষ্ণনগর বাজারে আড্ডা দেওয়ার সময় এলাকাবাসীসহ অভিযোগকারীদের হুমকি দিয়ে থাকেন। একই সঙ্গে নারী-পুরুষের সামনে নিজের পরনের কাপড় তুলে অশালীন আচরণ করেন।  

রোহিতা রানী বাংলানিউজকে বলেন, আমাকে খবর দেয় সরকারি ঘর দেওয়া হবে। এরপর আমার কাছে টাকা চায় হরদেব। স্বামী না থাকায় অনেক কষ্টে ৩১ হাজার টাকা ম্যানেজ করে ওই গ্রামপুলিশকে দেই। কিন্তু ঘর পাওয়া তো দূরের কথা কোনো খবরই পাইনি। পরে বিষয়টি স্থানীয়দের মাধ্যমে চেয়ারম্যানকে জানালে সে টাকা ফেরত দেয়।

সাদেকুল ইসলাম নামে আরও একজন বাংলানিউজকে বলেন, হরদেব চন্দ্র বর্মন সরকারি বিভিন্ন সুযোগসুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে অনেকের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা নিয়েছে। যার কোনো হিসাব নেই। অভিযোগ করলে রোহিতা রানীর টাকা ফেরত দেয় সে। তবে তার এমন কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে স্থানীয়রা। কোনো কাজ থাকলেও তাকে আর বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করায় আমরা তার বিচার দাবি করছি।  

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে গ্রামপুলিশ হরদেব চন্দ্র বর্মন বাংলানিউজকে বলেন, যে ২৫৭ জন স্বাক্ষর করে অভিযোগ করেছে, তাদের অনেকের স্বাক্ষরই জাল। রোহিতা রানী আমার চাচাতো বোন। আমার ২০ শতক জমি বন্ধক চেয়েছিল। সে হিসেবে তার সঙ্গে কথা হয়। বন্ধক হিসেবে ৫০ হাজার টাকার কথা হলে সে ৩০ হাজার টাকা আমাকে দেয়। কিন্তু স্থানীয় কিছু কুচক্রী মহলের মাধ্যমে আমাকে ফাঁসাতে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। তার ৩১ হাজার টাকা দাবি ছিল, তাই চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে পুরো টাকা ফেরত দিই।

অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ আজাদ।

এ বিষয়ে আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসফিকুল আলম হালিম অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে এ বিষয়টি তদন্তের জন্য কমিটি করা হয়েছে। সোমবার তদন্তের জন্য ওই এলাকায় যাচ্ছেন কমিটির সদস্যরা। কমিটি আগামী তিনদিনের মধ্যে আমার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২২
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।