রাঙামাটি: পার্বত্য জনপদের মধ্যমণি অঞ্চলের নাম রাঙামাটি। এ জেলার প্রকৃতি এমনভাবে সেজেছে যেন স্বর্গীয় রূপের প্রতিচ্ছবি।
প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক রাঙামাটি পরিভ্রমণ করে যাওয়ার সময় একবার হলেও ঝুলন্ত সেতুটি পরিদর্শন করে এবং সেতুর ওপর পায়ের ছাপ ফেলে।
কিন্তু এ ঝুলন্ত সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে পর্যটকদের পড়তে হয় চরম বিপাকে। ঝুলন্ত সেতুর আশপাশে দীর্ঘ বছর ধরে নেই কোনো ‘শৌচাগার’। বোট পারাপারে নেই কোনো ‘খেয়াঘাট’। প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে যেমন পর্যটকদের চরম বিপাকে পড়তে হয় তেমনি খেয়াঘাট না থাকায় বোট থেকে নামার সময় অনেক পর্যটক দুর্ঘটনার শিকার হন। পর্যটকরা এ বিষয়ে অভিযোগ এবং দাবি জানালেও কোনো সুরাহ করেনি পর্যটন করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ঝুলন্ত সেতু দেখতে রাজধানী ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক বেসরকারি চাকরিজীবী আনিস রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সারাদিন পুরো শহর ঘুরে এসে প্রশান্তির জন্য ঝুলন্ত সেতুটি দেখতে আসি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ঝুলন্ত সেতুর আশপাশে নেই কোনো শৌচাগার। যে কারণে আমরা যারা দূর-দূরান্ত থেকে আসি তাদের প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে চরম লজ্জ্বায় পড়তে হয়।
একই অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী শাহেদা আনিস। তিনি বলেন, পুরুষরা যেখানে-সেখানে কাজ সাড়তে পারলেও আমাদের মতো নারীদের চরম বিপাকে পড়তে হয়। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ; পর্যটকদের কথা ভেবে দ্রুত যেন এখানে শৌচাগার নির্মাণ করে দেয়।
ঝুলন্ত সেতু দেখতে চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা ব্যবসায়িক পর্যটক দলের অন্যতম সদস্য ব্যবসায়ী ফোরকান আহম্মেদ বাংলানিউজকে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমাদের মতো পর্যটকরা এলে এ অঞ্চলের পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু আমরা যদি এখানে এসে সঠিকভাবে পরিসেবা না পাই তাহলে কেন আসবো? এখানে কোনো শৌচাগার নেই। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে পর্যটকদের বিপাকে পড়তে হয়।
পর্যটক রেহানা পারভীন বাংলানিউজকে বলেন, আমি বোট থেকে নামতে গিয়ে ব্যথা পেয়েছি। এখানে যদি বোটগুলো রাখার জন্য খেয়াঘাট থাকত তাহলে আমরা বোট থেকে সরাসরি ঘাটে নামতে পারতাম। কোনো দুর্ঘটনা ঘটত না।
রাঙামাটি বোট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রমজান আলী বাংলানিউজকে বলেন, পর্যটকরা বেড়াতে এসে যখন শৌচাগার খুঁজে পান না তখন তারা লজ্জ্বায় পড়ে যান। তারা আমার কাছে এসে জানতে চান কিন্তু যেহেতু সে ব্যবস্থা নেই আমিও তাদের ঠিকানা দিতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, বোট পারাপারের জন্য এখানে কোনো খেয়াঘাট নেই। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি- পর্যটকদের সুবিধার জন্য দ্রুত এ সব সমস্যা নিরসন করে দেয়।
পর্যটন করপোরেশন রাঙামাটি শাখার ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, ঝুলন্ত সেতুর আশপাশে শৌচাগার স্থাপনের জন্য ট্যুরিজম বোডর্কে জানানো হয়েছে। করোনার কারণে আমাদের কাজ এগোয়নি।
বোট পারাপারে নির্দিষ্ট ঘাট নেই কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আমি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে বলেছি এখানে বোট পারাপারে জন্য পন্টুন (খেয়াঘাট) নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা আমাদের কাছ থেকে বোট পার্ক বাবদ টাকা চায়। যে কারণে আমরা পন্টুন স্থাপনে নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। নিজেদের উদ্যোগে পন্টুন নির্মাণ করবেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- আপাতত পরিকল্পনা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২২
আরএ