ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ওসমানীনগর ট্র্যাজেডি:

জেনারেটরের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে ৩ প্রবাসীর মৃত্যু হয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২২
জেনারেটরের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে ৩ প্রবাসীর মৃত্যু হয় সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।

সিলেট: জেনারেটরের ধোঁয়া ও অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে সিলেটের ওসমানীনগরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।  

গত ২৫ জুলাই রাতে ওই পরিবারের মোট ৫ সদস্য হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।

সেখানেই মারা যান তিন জন। বাকি দুজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনে সিলেটের পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন এ কথা জানান।

পুলিশ জানিয়েছে, ২৫ জুলাই রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় দীর্ঘক্ষণ (প্রায় ২ ঘণ্টা) জেনারেটর চলছিল। রুমের ভেতর কোনো ভেন্টিলেটর ছিল না। যে কারণে জেনারেটরের ধোঁয়া রুমের ভেতরে আস্তে আস্তে প্রবেশ করে। আর জেনারেটরের ধোঁয়ার কারণে অক্সিজেন স্বল্পতায় প্রবাসী পরিবারের পাঁচ সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রথমে বাবা ও ছেলের মৃত্যু হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়ে সামিরারও মৃত্যু হয়।  

ফরিদ উদ্দিন বলেন, তিন প্রবাসীর মরদেহে রাসায়নিক বা বিষক্রিয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তাদেরকে বাইরে থেকে এসেও কেউ মারেনি। তদন্তে প্রবাসী পরিবারের স্বজন ও আশপাশের সংশ্লিষ্ট সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদে পূর্ব-শত্রুতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাহলে তারা মারা গেলেন কীভাবে? এই প্রশ্নকে সামনে রেখে তদন্ত চালায় পুলিশ। অবশেষে আলামত হিসেবে একমাত্র জেনারেটরের ধোঁয়া ছাড়া আর কোনো ক্লু মেলেনি।

তিনি জানান, দীর্ঘক্ষণ জেনারেটর চালু থাকায় ধোঁয়ায় অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দেয়। ফলে শ্বাস নিতে না পেরে দম বন্ধ হয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ও তার ছেলে মাইকুলের মৃত্যু হয়। অচেতন হয়ে পড়েন স্ত্রী ও আরেক ছেলে এবং মেয়ে। পরে তাদের উদ্ধার করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়ে সামিরাও মারা যান।  

জেনারেটরের ধোঁয়া থেকে দেশের অন্য একটি স্থানেও ৪/৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলেও জানান তিনি।  

এসপি বলেন, ১২ জুলাই রফিকুল পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন। ১৮ জুলাই তাজপুর স্কুল রোড এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন তারা। ২৫ জুলাই রাতের খাবার খেয়ে স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাসার একটি কক্ষে শুয়ে পড়েন। পরদিন তাদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রফিকুল ও তার ছেলে মাইকুলের মৃত্যু ঘোষণা করেন। তাদের মধ্যে সামিরাকে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে সামিরার মৃত্যু হয়।

এছাড়া প্রবাসীর স্ত্রী হোসনে আরা এবং বড় ছেলে সাদিকুল সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এখন তারা বাড়িতে আছেন। এ ঘটনাটি দেশ-বিদেশে অনেকটা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। প্রবাসীদের মধ্যে অনেক ধরনের অনাস্থা তৈরি হয়েছিল বিভিন্ন কারণে। দেশে নিরাপত্তাবোধের প্রশ্ন এসেছিল।  

তিনি বলেন, আমরা সর্বাত্মক পেশাদারিত্ব বজায় রেখে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছিলাম। হাসপাতাল থেকেও বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছিল। এগুলোর কেমিক্যাল বিশ্লেষণ প্রতিবেদন ইতোমধ্যে ওসমানী হাসপাতালে এসেছে। সেখানে বোর্ড গঠন করা হয়েছে, দু’একদিনের মধ্যে প্রতিবেদন পাবো।  

এসপি ফরিদ উদ্দিন বলেন, এখনো পর্যন্ত আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে বলতে পারি, এ ঘটনাটি একটি দুর্ঘটনা। আমাদের সবগুলো উইংয়ের তদন্তে কোনো বিষক্রিয়ার বিষয়বস্তু পাওয়া যায়নি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২২
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।