ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

২১ আগস্টের হত্যাকারীদের রাজনৈতিক ফ্রন্ট বিএনপি-জামাত

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২২
২১ আগস্টের হত্যাকারীদের রাজনৈতিক ফ্রন্ট বিএনপি-জামাত

ঢাকা : আজ ভয়াল ২১ আগস্ট। ২০০৪ সালের এ দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে ন্যক্কারজনক ঘটনা।

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে চালানো হয় গ্রেনেড হামলা। বঙ্গবন্ধু কন্যা সেদিন কোনোভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন ২৪ নেতাকর্মী। এ ঘটনার পেছনে বিএনপি-জামাত জড়িত বলে গত ১৮ বছর ধরে চর্চিত। ভুক্তভোগীরা আজও সেই ভয়াল দিনের কথা মনে করে কেঁপে ওঠেন।

আওয়ামী লীগের ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠন ছাত্রলীগ গত ১৮ বছর ধরেই এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিকে সোচ্চার। বিগত বছরগুলোয় যারাই এ সংগঠনের বৈঠা হাতে নিয়ে এসেছেন, বলেছেন ২১ আগস্টের হত্যাকারীদের রাজনৈতিক ফ্রন্ট বিএনপি-জামাত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনও নিজের প্রতিক্রিয়ায় একই কথা বলেছেন।

রোববার (২১ আগস্ট) সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আসেন সাদ্দাম। শ্রদ্ধা জানান সেই দিনকার নিহতদের। পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক জিয়ার নির্দেশনায় এ হামলা চালানো হয় বলে উল্লেখ করেন। বিএনপি-জামাতকে ওই কালো দিনটির হত্যাকারীদের রাজনৈতিক ফ্রন্ট বলে আখ্যা দেন।

ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে হত্যা থেকে শুরু করে এ গোষ্ঠী বারবার তার বাকি পরিবারকে হত্যার চেষ্টা করে আসছে।

হত্যার রাজনীতিতে জড়িত ও দেশকে পিছিয়ে দিতে কাজ করা মৌলবাদী চক্রটিকে বিচারের আওতায় আনার দাবিও করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক এজিএস।

সাদ্দামের সঙ্গে কথা বলার সময় অ্যাভিনিউ এলাকায় দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। সকলেই ২১ আগস্টে নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন। সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাহমুদুল রহমান মুন্না রয়েছেন এ দলে। তিনি জানান, রক্তাক্ত ওই দিনটিতে শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য ও দেশকে অকার্যকর করাই ছিল নারকীয় হামলার উদ্দেশ্য।

তিনি বলেন, সেদিন যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রক্তের প্রতি আমাদের ঋণ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি যে দায়বদ্ধতা রয়েছে; সেখান থেকেই ছাত্র সমাজের দাবী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম নিকৃষ্ট এ ঘটনায় জড়িত সবার বিচার শিগগির কার্যকর করা।

যা হয়েছিল ২১ আগস্টে কালো দিনে

২১ আগস্ট ২০০৪ বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর সামনে ট্রাকের ওপর বানানো মঞ্চে নিজের বক্তব্য শেষ করলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা।
স্লোগান দিলেন ‘জয় বাংলা... জয় বঙ্গবন্ধু’ মুহূর্তেই বিকট শব্দে কেঁপে উঠল মঞ্চটি। এরপর একে একে আরও বেশ কয়েকটি জোরালো শব্দ, চারদিকে ধোঁয়া। এর মাঝ থেকে ছুটে আসছে শত শত মানুষের আর্তনাদ। রাস্তায় পড়ে আছেন আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী-সমর্থক। ট্রাকের ওপর মানব দেয়াল ঢেকে রেখেছে বাংলাদেশের স্থপতির মেয়েকে।

তার আগে বিকেল ৩টা থেকে দলের মধ্যমসারির নেতারা বক্তব্য দেন। বিকেল ৪টার দিকে শুরু হয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের বক্তৃতার পালা। যে ট্রাকে সমাবেশের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল, তার পেছনে বাঁ দিকে একটি সিঁড়ি ছিল ওপরে ওঠার জন্য। ট্রাকের শেষ মাথায় ডানদিকে রাখা টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন নেতারা।

সমাবেশের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা আসেন বিকেল ৫টায়। বিকেল ৫টা ২ মিনিটে মঞ্চে উঠে বক্তব্য শুরু করেন। টানা ২০ মিনিট বক্তব্য দিলেন। তার দুই পাশে ছিলেন মোহাম্মদ হানিফ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। পুরোটা সময় ওই টেবিলের পাশে বসেছিলেন শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার আব্দুল্লাহ আল মামুন। মঞ্চ থেকে নামার সিঁড়ির কয়েক গজের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা ছিল আওয়ামী লীগ সভাপতির বুলেট প্রুফ মার্সিডিজ গাড়ি। সেখানে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা)।

বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে নিজেই জয় বাংলা..জয় বঙ্গবন্ধু  স্লোগান দিয়ে হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে মাইক নামাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই শুরু জঘন্যতম সময়ের মুহূর্ত। ট্রাকের বাঁ পাশে পড়ে গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকে থাকা জ্যেষ্ঠ নেতা এবং নিরাপত্তাকর্মীরা বঙ্গমাতার হাসুকে ট্রাকের মধ্যে ঘিরে ফেলেন। তৈরি করেন মানব দেয়াল। তারপরও অপূরণীয় ক্ষতি হয় শেখ হাসিনার। ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার কান ও চোখ।

৭৫ এ নিহত ছোট্ট শেখ রাসেলের বোন সেদিন কোনোভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন ২৪ জন। ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। বাকিরা বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন হাসপাতালে। হামলার আগে রাস্তায় নিজ নেতাকর্মীদের নিয়ে বসেছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমান। মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ঘটনার তিন দিন পর (২৪ আগস্ট) জীবনের কাছে হার মানেন তিনি। দেড় বছর পর মৃত্যু হয় ন্যক্কারজনক ওই হামলার শিকার ও ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের।

২১ অগাস্ট হামলায় নিহত অন্যরা হলেন- শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রহমান, হাসিনা মমতাজ, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসিরউদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। একজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।

শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে গিয়ে সেদিন গ্রেনেডের অসংখ্য স্প্লিন্টারবিদ্ধ হন তারিক আহমেদ সিদ্দিক, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শোয়েব মো. তারিকুল্লাহসহ অনেক নেতাকর্মী। স্প্লিন্টারের আঘাত পেয়েছিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও। তিনিও আজ না ফেরার দেশে।

বাংলাদেশ সময় : ১২৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২২
এনবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।