ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নতুন জীবন ফিরে পেলেন সন্তানের ফেলে যাওয়া অসুস্থ মা

জহিরুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২২
নতুন জীবন ফিরে পেলেন সন্তানের ফেলে যাওয়া অসুস্থ মা

পটুয়াখালী: ৮০ বছর বয়সি গোল বানু বেগমের স্বামী মারা গেছেন ২০ বছর আগে। এক মাত্র ছেলেটাও ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পাওনাদারদের ভয়ে তাকে একা ফেলে রেখে চলে যান।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার জৈনকাঠি ইউনিয়নের জরাজীর্ণ একটি ঘরে দিনের পর দিন না খেতে পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পাড়া প্রতিবেশী আর আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতায় মাঝে মধ্যে খাবার‌ পেলেও বেশিরভাগ সময়েই থাকতেন অভূক্ত।

ক্ষুধার তাড়নায় মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে খাবার সংগ্রহ করতেন গোল বানু। শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে এটিও আর সম্ভব হচ্ছিল না। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর যন্তনায় ভুগছিলেন তিনি।

পরে স্থানীয় এক তরুণদের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে এই অসহায় বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ায় সমাজসেবক মোজাম্মেল নাসরিন এমা ও পটুয়াখালীবাসী নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাদের তত্বাবধানে ওই বৃদ্ধার চিকিৎসা ও তিন বেলা খাবারের ব্যাবস্থা হয়। পরে নিয়মিত পরিচর্যায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন গোল বানু।

স্থানীয়রা জানান, গোল বানু সরকারি বয়স্ক ভাতাটাও নিজে পেতেন না। সন্তানের ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য এনজিও কর্মীরা সেই বয়স্ক ভাতা নিয়ে নিত।

প্রতিবেশী মহিমা বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন হাট বাজারে ভিক্ষা করেই চলতেন গোল বানু। কিন্তু বৃদ্ধ ও অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেটিও আর করতে পারছিলেন না তিনি। এর পর যখন টাকার অভাবে নিজের সন্তানও ছেড়ে চলে গেলে আমরা যতটুকু পারি দেখাশোনা করতাম।

তিনি আরও বলেন, একটি সংস্থা তার দেখাশোনা ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছে। প্রতি মাসে তারা বাজার করে দিয়ে যান। বর্তমানে অনেকটাই সুস্থ হয়েছেন গোল বানু।

দায়িত্ব নেওয়া সমাজসেবক মোজাম্মেল নাসরিন এমা বাংলানিউজকে বলেন, সন্তান ফেলে রেখে যাওয়া অসহায় এই নারীর পাশে দাঁড়াতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। যাদের সামর্থ্য আছে তারাও যেন এরকম অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান সেই আহ্বান জানাই।

পটুয়াখালীবাসী সংগঠনের সদস্য সাবরিনা মেহজাবিন স্বর্ণা বলেন, গোল বানুর তথ্য পেয়ে আমরা তার কাছে আসি এবং স্থায়ীভাবে সহযোগিতার ব্যবস্থা করে দেই। তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করি। প্রতিমাসে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা তার বাড়িতে বাজার করে দেন। তাকে সার্বিক দেখাশোনার জন্য আমাদের ভলান্টিয়ার আসলাম দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন।

সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শীলা রানি দাস বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে এই বয়স্ক মহিলার তথ্য জানতে পেরে আমি তার বাড়িতে যাই। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এনজিও কর্মীর মোবাইলে তার যাওয়া সব টাকা উদ্ধার করে গোল বানুর হাতে তুলে দেই। এছাড়াও চিকিৎসা সেবার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করা হয়। এখন থেকে তিনি বয়স্ক ভাতা তার নিজের মোবাইলেই পাবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।