ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

২০ মিনিটের পথ, অথচ সময় লাগে এক ঘণ্টা

জি এম মুজিবুর, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
২০ মিনিটের পথ, অথচ সময় লাগে এক ঘণ্টা মিরপুরের কাজিপাড়া-শেওড়াপাড়া ঘুরে ছবিগুলো তুলেছেন জি এম মুজিবুর

ঢাকা : মেট্রোরেলসহ নানা উন্নয়নের কারণে খোঁড়া-খুঁড়ি চলছে মিরপুরের কাজিপাড়া-শেওড়াপাড়া এলাকায়। মিরপুর ১০ নম্বর হয়ে এ দুই এলাকার সড়ক পাড়ি দিয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত যেতে খুব বেশি হলে সময় লাগে ২০ মিনিট।

কিন্তু এখন সময় লাগে ১ ঘণ্টা। কোনো কোনো কারণে ঘণ্টা পার হয়ে যায়, ভোগান্তিতে থাকে মিরপুরবাসী।

উন্নয়নের কাজে এসব খোঁড়াখুঁড়ির কারণে যানজটের হাবে পরিণত হচ্ছে কাজিপাড়া-শেওড়াপাড়া ও মিরপুর ১০ নম্বর। এর প্রভাব পড়ছে মিরপুর ১১, পল্লবী, মিরপুর-১২, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, মিরপুর-১ নম্বর পর্যন্ত।

যানজট নিরসনে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবমুখী উন্নয়নের উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করলেও যত্রতত্র যথেচ্ছা কাজ করছে ঠিকাদাররা। যে কারণে রাস্তাগুলো যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। ট্রাফিক জ্যামও অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

মিরপুর এলাকার মেট্রো-রেলের কাজ প্রায় শেষের পথে। কিন্তু বিগত কয়েকমাস ধরে শেওড়াপাড়া বাস স্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ধীরলয়ের কাজ এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের ফেলছে ব্যাপক ভোগান্তিতে। যানজটের কারণে এলাকাবাসীও রয়েছেন দুর্ভোগে। একই অবস্থায় কাজিপাড়া এলাকাতেও।

যানজট নিরসনে সম্ভাব্য কর্ম সম্পাদনে নগরকর্তাদের আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে, যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ন্ত্রণে তাদের সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ।

উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির পর দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় দুঃসহ জীবনযাপন করছেন মিরপুরের এ অঞ্চলবাসী। বর্তমান অবস্থার কারণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা। দ্রুত এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে স্থানীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চান তারা।

মিরপুর থেকে গুলিস্থানগামী বাস যাত্রী মো. আবুল কাশেমের দাবি, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে এ দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে আসত। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমার অফিস গুলিস্তানে, প্রতিদিন বাসে করে যাতায়াত করতে হয়। বহুদিন ধরে মিরপুর পার হতেই এক দেড় ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমার চাকরিটা যেকোনো সময় চলে যেতে পারে।

শেওড়া পাড়ার স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিকল্প রাস্তা তৈরি না করে খোঁড়াখুঁড়ি ও সংযোগ সড়ক বন্ধ করে দিয়ে সংস্কার বা নির্মাণ কাজ করায় গত কয়েক মাস ধরে তারা যে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন, তা অসহনীয়। এমন অবস্থা দেখার কেউ নেই। যারা কাজ করছেন, নিজেদের ইচ্ছামতো রাস্তা বন্ধ করে কাজ করছেন। ইট, বালু, সিমেন্ট, বিটুমিন, আলকাতরা, নির্মাণ মেশিন যত্রতত্র ফেলে রেখেছেন। একমুখী রাস্তায় যানবাহন আসা যাওয়া করছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। যে কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সারাদিন এ এলাকায় ধুলা ওড়ে। এতে শিশুদের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্করাও নানা সমস্যা পোহাচ্ছেন।

পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা ও হাজী আশরাফ আলী হাইস্কুলের এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলে, মেট্রো-রেলের কাজের কারণে দীর্ঘদিন ধরে তার স্কুলে যেতে সমস্যা হচ্ছে। রিকশা দিয়ে সরাসরি স্কুলে যেতে পারছে না তার মতো আরও অনেক শিক্ষার্থী। তার বাসা এলাকার এক ধার বন্ধ করে রাখায় পারাপারে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

খোঁড়াখুঁড়ি ছাড়াও যানজটের আরও বড় একটি কারণে যত্রতত্র পার্কিং। অবৈধভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের গাড়ি, বাস খুঁড়ে রাখা রাস্তায় পার্ক করা থাকে। ভালো রাস্তায়ও গাড়ির লম্বা লাইন দেখা যায়। শেওড়াপাড়া থেকে এগিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর ও আশপাশের এলাকাগুলোর মূল সড়কে অবৈধভাবে পার্কিং করা যানবাহনের কারণেও ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। অর্থ এসব দেখার কেউ নেই!

মিরপুর বিভাগের ট্রাফিক পুলিশ ইনচার্জ (টিআই) বিমল চন্দ্র সাহা বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে মিরপুরের যানজট নিরসনে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। মেট্রো-রেলের কাজ অনেকাংশে শেষ। কিন্তু ওয়াসার কিছু কাজ বাকি থাকায় ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। শেওড়াপাড়ার একটি সড়ক বন্ধ করে সিটি করপোরেশন কাজ করছে বিধায় যানজট বেশি হচ্ছে।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছেন, এটা ঠিক। একই অবস্থা মিরপুর বিভাগেরও। যানজট নিরসনে আমাদের জনবল বাড়াতে হয়েছে। ট্রাফিকের পক্ষ থেকে লেন তৈরি করে ভোগান্তি এড়ানোর চেষ্টা করছি।

উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির পর দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় বর্তমান দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।

বাংলাদেশ সময় : ১৬২৫ ঘণ্টা, ১৪ আগস্ট, ২০২২
জিএমএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।