ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

পোস্তায় কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা শুরু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩১ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২২
পোস্তায় কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা শুরু

ঢাকা: কোরবানি হওয়া পশুর চামড়া কেনাবেচা শুরু করেছেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ও পোস্তার মালিকরা। পশুর চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম ঈদুল আযহা।

দেশে সারা বছর যে পরিমাণ পশু জবাই হয়, তার ৬০ শতাংশই হয় ঈদুল আজহায় কোরবানির মাধ্যমে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের নামাজের পরপরই পশু জবাইয়ের মাধ্যমে শুরু হয়েছে রাজধানীসহ সারা দেশে কোরবানি।

ঈদের দিন দুপুর থেকে পোস্তায় আসতে শুরু করেছে রাজধানী শহর ঢাকা ও এর আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার চামড়া। বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করে লালবাগের পোস্তায় নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে আড়তদাররা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দুপুরের পর থেকেই চামড়া কেনা শুরু করেছে। যা চলবে আগামী এক মাস।

রোববার (১০ জুলাই) দুপুরে লালবাগের পোস্তায় গিয়ে দেখা যায়, লালবাগের পোস্তায় বিকেল ৩টার পর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির চামড়া আসতে থাকে। আড়তদারদের হাঁকডাকে সরব হয়ে উঠেছে লালবাগের শায়েস্তা খান, রাজ নারায়ণ ধর রোডসহ আশপাশের বিভিন্ন রোড। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ শুরু করেছেন। তবে পশু কোরবানি এখনো পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় পোস্তায় এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি কাঁচা চামড়ার কেনাবেচা। রাতের দিকে পুরোদমে চামড়া কেনাবেচা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

পোস্তার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও বিকেল ৫টার পর থেকে চামড়া কেনাবেচা জমে ওঠে। গভীর রাত পর্যন্ত চামড়া সংগ্রহ করা হবে। এখানে চামড়া সংগ্রহের পর প্রথমে লবণজাত করা হবে। পরে তারা সাভারের ট্যানারিগুলোতে পাঠিয়ে দেবেন। এছাড়া দেশের সবচেয়ে বড় কাঁচা চামড়ার আড়তে গতবারের মতো এবারো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ হবে না বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।  
 
এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা শহর ও এর আশেপাশের কোরবানির পশুর চামড়া পোস্তায় আসতে শুরু করেছে। দুপুর থেকেই আমরা কাঁচা চামড়া কেনা শুরু করেছি। বিকেল দিকে কেনাবেচা জমে উঠেছে। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া যত তাড়াতাড়ি আমাদের কাছে আনবেন তত ভালো। আমরা আগেও বলেছি চামড়া কেনার সময় যেন ভেবেচিন্তে কেনে। চামড়ার মান বুঝে আমরা দাম দেব।

তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে লবণযুক্ত চামড়া ৪৭ থেকে ৫৫ টাকা ফুট ফড়িয়াদের কাছ থেকে কেনা হবে। এখন যে সব চামড়া আসছে সেটা লবণ ছাড়া সেজন্য এ চামড়ার দাম প্রতিফুট লবণযুক্ত চামড়া থেকে ৫ থেকে ৭ টাকা কমে ব্যবসায়ীরা কিনছেন। তবে শহরের চামড়া সন্ধ্যা ৬টা এবং শহরের বাইরের চামড়া যদি রাত ১০টার মধ্যে পোস্তায় আনা যায় তাহলে পচন রোধ করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে দামও ভালো পাবে। আর যারা পারবে না তারা যে যেখানে রয়েছে, সেখানেই চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। নইলে গরমের কারণে চামড়া নষ্ট হতে পারে।

তিনি বলেন, ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় প্রতিবছর অন্তত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কোরবানির চামড়া নষ্ট হয়। বর্তমানে গরম অনেক বেশি, এ ছাড়া জ্যামের কারণে চামড়া নিয়ে আসতেও অনেক সময় লাগে। তাই পোস্তা এলাকায় সবাইকে চামড়া না এনে নিজ নিজ এলাকায় লবণজাত করার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। এবছর চামড়া ব্যাবস্থাপনা আশা করছি ভালো হবে। সরকার এক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

চামড়া ব্যবসায়ীরা বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর লবণের দাম বস্তাপ্রতি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে। গত বছর কোরবানির সময় ৭৪ কেজির একটি লবণের বস্তার দাম ছিল ৬৭০ থেকে ৭০০ টাকা। গত রোজার ঈদ পর্যন্ত দাম ছিল বস্তাপ্রতি প্রায় ৮০০ টাকা। কিন্তু গত দেড় মাসে ক্রমান্বয়ে দাম বেড়ে এখন বস্তাপ্রতি লবণের দাম হয়েছে ১ হাজার ৭০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা।  

চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, লবণের সরবরাহ ঠিক আছে। তবে লবণের দাম বাড়ায় সেটা চামড়ার সঙ্গে যোগ হবে। সরকার লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে। তখন আমরা বলেছিলাম লবণ ছাড়া চামড়ার দামটাও নির্ধারণ করে দেন। কিন্তু সরকার সেটা করেনি। তারপরও আশা করছি এবার চামড়া নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হবে না।  

এবছরও ট্যানারি মালিকরা সব টাকা পরিশোধ করেনি জানিয়ে আবতাব খান বলেন, কিছু কিছু ট্যানারি মালিক চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য খারাপ করেছে। তারা সব টাকা পরিশোধ করেনি। ফলে কোনো অঞ্চলে চামড়া কেনার টাকার সংকট হতে পারে। এছাড়া তেমন কোনো সমস্যা নেই। ট্যানারিমালিকরা শুধু গত বছরের টাকা পরিশোধ করেছে। তার আগের বকেয়া এখনও পরিশোধ করেনি।

এবার সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৭ থেকে ৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার বাইরেও বকরি ও খাসির চামড়ার দর একই থাকবে।

গতবছর ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। গত বছর যা ছিল ৩৫ থেকে ৪০টাকা। ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে গত বছর যা ছিলো ২৮ থেকে ৩২ টাকা। এ ছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা।  

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যানুসারে, এ বছর কোরবানির জন্য গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি পশু প্রস্তুত করা ছিল। গত বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কোরবানি হয় ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশুর।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, বছরে বাংলাদেশে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশে এক কোটির কিছু বেশি পশু কোরবানি হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১০,২০২২
জিসিজি/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।