ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আত্মঘাতী আনিসের নামেও রয়েছে প্রতারণার অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২১ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২২
আত্মঘাতী আনিসের নামেও রয়েছে প্রতারণার অভিযোগ গাজী আনিসুর রহমান

কুষ্টিয়া: ‘কী হতে পারে ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করা গাজী আনিসুর রহমানের মৃত্যুর কারণ? তিনি কি শুধু টাকা না পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন? নাকি এর পেছনে অন্যকিছু রয়েছে- এমন প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।  

তবে শুধু টাকার জন্য এমন ঘটনা ঘটবে এটা মানতে নারাজ তার সহকর্মীরা।

তবে মৃত্যুর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন আনিসুর রহমান যে, ‘হেনোলাক্স কোম্পানি মালিকের কাছ থেকে পাওনা টাকা উদ্ধারে ব্যর্থ এবং তাকে ব্লাক মেইল করা হচ্ছে। ’

গাজী আনিসুর রহমানের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি এলাকায় মৃত ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে। তবে তিনি কুষ্টিয়া শহরে থাকতেন। তবে গত ৪ বছর ধরে তিনি কুষ্টিয়ায় থাকেন না। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যশোরে থাকতেন।

নিহতের ভাই নজরুল ইসলাম দাবি করছেন, গাজী আনিসুর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও কখনও দলীয় পরিচয় দেননি। খুবই শান্ত স্বভাবের ছিলেন এবং নিজেই চেষ্টা করতেন সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য। আনিস ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা দিয়েছিলেন হেনোলাক্স কোম্পানিতে অংশীদার হতে। সব মিলিয়ে লভ্যাংশ হিসেবে এখন ৩ কোটি টাকা পাওনা হয়েছে। সেই টাকা না পাওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন আনিস। ’

তিনি বলেন, ‘বিনিয়গের প্রথমে কিছুদিন আনিসকে লভ্যাংশ দিলেও পরে তা বন্ধ করে দেন আমিন। এরপর টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করেও না পেয়ে কুষ্টিয়ায় মামলা করেন। ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনও করেন গত ২৯ মে। ’

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ৭ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে আনিস ছিলেন তৃতীয়। তিনি একা কুষ্টিয়া শহরে থাকতেন। তার স্ত্রী ও তিন কন্যা যশোরে থাকতেন। তবে বেশিরভাগ সময়ই তিনি যশোরে থাকতেন।

নিহত আনিসের ভাই আব্দুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ব্যবসার জন্য টাকা দিয়ে, সেটা ফেরত না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত ছিলেন আনিস। আমিন সাহেব একাধিক চেক দেন। একটি চেক মনে হয় ভাঙাতে পেরেছিলেন। বাকি চেকগুলো বাউন্স করে। এনিয়ে তিনি কুষ্টিয়ায় মামলাও করেন। ’

আনিসের ব্যাপারে কথা হয় কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক ও গাজী আনিসুর রহমানের আগের ঘনিষ্ঠ ডা. আমিনুল ইসলাম রতনের সঙ্গে।

তিনি জানান, ‘১৯৯৩ সালের দিকে গাজী আনিসুর রহমান কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তারপর তিনি গ্রামীন ব্যাংকে চাকরি করতে যান। ২০০০ সালের পরে আমার সঙ্গে কথা হয় তার। সে সময় তার সঙ্গে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়। পরে ২০১১ সালে তিনি কুষ্টিয়ায় ফিলে আসেন এবং আমার সঙ্গে রাজনীতি শুরু করেন। আমি তাকে বলেছিলাম তুমি সৎভাবে রাজনীতি করতে চাইলে তুমি করতে পারো। পরে তিনি আমার সঙ্গে চলতে শুরু করেন। এবং কিছু টাকা বিনিয়োগও করেন। পরে তিনি আমার খুবই ঘনিষ্ঠজন হয়ে ওঠেন। কিছুদিন পরে আমার সঙ্গে কিছুটা দূরুত্ব তৈরি হয় তার। সে সময় তিনি অনেক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ওঠা-বসা শুরু করেন। ’

তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে তার ১০ বছরের ব্যবসায়ীক চুক্তি ছিল। তার বিনিয়োগের কারণে প্রতি মাসে কিছু লভ্যাংশ পেতেন আমার কাছে। কিছু কিছু সময়ে এসে টাকা দিতেন আবার নিয়ে নিতেন। তার কাছে আমার তারিখবিহীন ৩৫ লাখ টাকার চেক ছিল। বেশ কয়েকজন সাক্ষীর সামনে আমি তার পাওনা টাকাটা দিয়ে দেই। কিন্তু তিনি আমার চেকটা ফেরত দিতে টালবাহানা করেন। এই চেক ২০১৬ সালে দিয়েছিলাম। সেটা ২০১৯ সাল পর্যন্ত তাকে লভ্যাংশ দিয়েছি। এবং ২০১৯ সালে টাকাটা পরিশোধ করি। তারপরে আমি জানতে পারি যে, এর আগে এবং বর্তমানেও এমন প্রতারণা করে গাজী আনিসুর রহমান। বিষয়টা জেলা পরিষদে একটা সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে আমাকে চেকটা ফেরত দেওয়ার কথা বলে।  

তারপর তিনি চেকটা না দিয়ে যশোরে চলে যান। এবং ২০২১ সালে ওই চেক নিয়ে একটি জাল দলিল করে একটি মামলা করেন। যেটি চলমান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি জেনেছি আনিসুর রহমান অনেকের সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছেন। তার লেনদেন আর স্বচ্ছ নেই। আমাদের এক আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে প্রতারণা করে ৩ লাখ টাকা নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান পুলকও তার প্রতারণার স্বীকার হয়েছে। ’

তিনি বলেন, তিনি যে কী ধরনের ব্যবসায় করেন এখনও সেটা বলেনি। শুনেছি- যশোরে থাকেন এবং প্রায়ই ভারতে আসা-যাওয়া করেন। তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কও অবনতি রয়েছে। সেই কারণেও ডিপ্রেশনে ছিলেন।

তবে তার এভাবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হয়নি বলেও জানান আমিনুল নামে এই আওয়ামী লীগ নেতা।

এদিকে জানা গেছে, গত ০১ জুলাই তার ব্যবহৃত ১০ লাখ টাকার গাড়ি ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। সেই সঙ্গে তার মোটরসাইকেলটিও ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন।

গাজী আনিসুর রহমান রাজনীতির পাশাপাশি লেখালেখিও করতেন। তার বেশ কিছু কবিতার বইও প্রকাশ হয়।

গত ০৪ জুলাই ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন তিনি। পরদিন ০৫ জুলাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের ভাই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় হেনোলাক্স কোম্পানির মালিক ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তার জানাজা শেষে পান্টি কবর স্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।