ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জাতীয় হিন্দু মহাজোটের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০২২
সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জাতীয় হিন্দু মহাজোটের

ঢাকা: হিন্দু সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রক্ষা ও নির্যাতন বন্ধে জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একটি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।

শনিবার (০২ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টর্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট আয়োজিত শিক্ষক লাঞ্চনা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। তিনি জানান, প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো স্থানে ঘটছে হৃদয়বিদারক ঘটনা। হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মঠ-মন্দিরে হামলা, ভাংচুর, হত্যা, হত্যা প্রচেষ্টা, জমি দখল, দেশ ত্যাগে বাধ্যকরণসহ নানা নির্যাতন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। নির্যাতন নিপীড়নে অতিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায় দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে দিন যাপন করছে। এর মধ্যে নতুন উপসর্গ হিন্দু শিক্ষকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত করতে অভিনব কৌশল। যার দৌরাত্ম দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। পুলিশ ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে ও সক্রিয় সহযোগীতায় গলায় জুতার মালা পড়ানোসহ নানাভাবে হেনস্থা, অপমান-অপদস্থ্যের মধ্য দিয়ে শিক্ষকদের মান মর্যাদা ধূলিস্যাৎ করা হচ্ছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, সাভারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরামহীনভাবে প্রতিনিয়ত একটার পর একটা ঘটনা ঘটেই চলেছে।

হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায় বলেন, দেশে একের পর এক সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক নীপিড়িনের ঘটনা ঘটলেও আজ পর্যন্ত সেসব ঘটনা নিরসনে জাতীয় সংসদ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি, কোনো আলোচনা হয়নি, ভূমিকা রাখে নাই। রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যালঘু সমস্যার স্থায়ী সমাধান না করে হিন্দু সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক দলসমূহ ফুটবলের মত ব্যবহার করছে।  

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ও অসাম্প্রদায়িক সরকারের সময়ে পাংশা কলেজের অধ্যক্ষ অরুণ প্রামাণিক, নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি, কলেজ শিক্ষিকা লতা সমাদ্দার, হৃদয় মণ্ডল, আমোদিনী পাল, অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সঞ্জয় সরকার, উমেশ রায়সহ অর্ধশত শিক্ষককে জুতার মালা পরানোসহ নানাভাবে অপমান-অপদস্থ করা হয়েছে। গত বছর সাভার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মনকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে ৫ টুকরো করে কলেজ চত্ত্বরেই পুতে রেখেছিলো, এক বছর পরে এই সাভারেই অধ্যাপক উৎপল কুমার সরকারকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হলো। সবচেয়ে বেদনার বিষয় সরকার অতীতের কোনো ঘটনারই বিচার করেনি। কাউকে শাস্তি দেয়নি।  

তিনি বলেন, শেষ ভরসা হিসেবে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় আপনাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। হিন্দু সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রক্ষা করতে তাদের ওপর সহিংসতা ও নির্যাতন নিরোধ কল্পে, গণতন্ত্র অর্থবহ করতে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃ প্রতিষ্ঠা এবং একটি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি।

হিন্দু সম্প্রদায় আশা করে সরকার হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরোক্ত দাবি দুটির প্রতি সম্মান দেখিয়ে আগামী অধিবেশনে বিল পাশ করে এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের দীর্ঘদির আশা আকাঙ্খা পুরন করবে। এতে করে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ হবে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে, ধর্মীয় সংখ্যাতত মানুষদের সঙ্গে সংখ্যালঘু জনগনের সম্প্রীতির বন্ধন আরও উজ্জ্বল হবে।

সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায়, সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রদীপ কুমার পাল, প্রধান সমন্বয়কারী বিজয় কৃষ্ণ ভট্টাচার্য, প্রেসিডিয়াম মেম্বার অভয় কুমার ল কুমার মন্ডল, পল্টন দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক সুশান্ত চক্রবর্তী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রতীভা বাকচী, হিন্দু মহাজোট ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল ঘোষ, হিন্দু যুব মহাজোটের সভাপতি প্রদীপ শঙ্কর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০২২
জিসিজি/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।