ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ফরেনসিকের বিশেষায়িত শিক্ষার জন্য দেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই: সিআইডি প্রধান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
ফরেনসিকের বিশেষায়িত শিক্ষার জন্য দেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই: সিআইডি প্রধান

ঢাকা: ফরেনসিকের বিষয়ে বিশেষায়িত শিক্ষার জন্য বাংলাদেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই উল্লেখ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের  (সিআইডি) প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেছেন, সাউথ এশিয়ার মধ্যে শুধু ভারতে আছে। আমরা চেষ্টা করছি ফরেনসিক বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার জন্য।

ফরেনসিকের উপরে আপাতত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা স্বতন্ত্র বিভাগ চালু করা এখন সময়ের দাবি। ঢাবির বর্তমান উপাচার্যের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আশা করছি সহসা এ ব্যাপারে একটা উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব হবে।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) মালিবাগে সিআইডি সদর দপ্তরে ‘স্টুডেন্টস অ্যাঙ্গেজমেন্ট  টু কমবেট সাইবারক্রাইম’ শীর্ষক এক সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিআইডি প্রধান।

সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৯১ জন, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ৫৩ জন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০ জন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ জন, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন, বাংলাদেশস্থ কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ জন এবং গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জনসহ মোট ২৪৭ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিআইডি’র সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্টড অপস বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (পদোন্নতিতে অ্যাডিশনাল ডিআইজি) তৌহিদুল ইসলাম, ডিজিটাল ফরেনসিক বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিজিটাল ফরেনসিক বিভাগের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শামসুল হক, প্রশ্নোত্তর পর্বে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন আইএনটিআই ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়ার সহযোগী অধ্যাপক ড. খান সরফরাজ আলী।  

সিআইডি’র অতিরিক্ত ডিআইজি (অ্যাডমিন ও ফরেনসিক) তানভীর হায়দার চৌধুরী সভাপতি হিসেবে সমাপনী বক্তব্য রাখেন।

সিআইডি জানিয়েছে আধুনিক বিশ্বে প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের ফলে মানুষ প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আমাদের দৈনন্দিন সব কাজই কোনো না কোনোভাবে তথ্য প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। এখন মানুষ খুব সহজে সেকেন্ডের মধ্যে বিশ্বের যেকোনো জায়গায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত হতে পারছে। এতে করে মানুষ যেমন সুবিধা ভোগ করছে তেমনি কিছু ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে। দুষ্কৃতকারীরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ যেমন- সাইবার প্রতারণা, অর্থ লোপাট, সাইবার অ্যাটাক, মাদক ও মানবপাচার, পর্নোগ্রাফি, হ্যাকিং, ফিশিং, ম্যালওয়্যার, র‌্যানসমওয়্যার, ডেটা ব্রিচ, সাইবার বুলিং ইত্যাদি সংঘটিত করছে। এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে সিআইডি, বাংলাদেশ পুলিশ অপরাধীদের আইনের আওতায় আনাসহ সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। আজকের ছাত্রছাত্রীরাই আগামীর ভবিষ্যৎ, তারাই হবে জাতির কর্ণধার ও দেশগড়ার কারিগর। সাইবার বুলিং, সাইবার হ্যারেজমেন্ট, আনইথিক্যাল কন্টেন্ট, হ্যাকিং, ফিশিং, ম্যালওয়্যার, র‍্যানসমওয়্যার ইত্যাদি সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে আজকের ছাত্র-ছাত্রীরাই আগামীতে ফ্রন্টলাইন ফাইটার হিসেবে কাজ করবে।

তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম তথা শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল এওয়ারনেস বিল্ডআপের মাধ্যমে সাইবার অপরাধ নিবারণে সক্রিয় হয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সিআইডির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে।

এদিকে, সেমিনারে অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীরা এ প্রশিক্ষণের পর থেকে সিআইডির অ্যাম্বাসেডর হিসেবে সাইবার অপরাধ নিবারণ এবং সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য সিআইডিকে অবহিত করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।  

সেমিনারের প্রশ্নোত্তর এবং উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে আগত তরুণ শিক্ষার্থীরা প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ করেন। সেমিনারে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা সাইবার অপরাধ সম্পর্কে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করেন এবং তাদের মতামত প্রকাশ করেন।  

সেমিনার শেষে প্রধান অতিথি অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সনদ প্রদান করেন এবং শিক্ষার্থীরা সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবগুলো পরিদর্শন করেন।

সেমিনারে সোশ্যাল মিডিয়াসহ ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে নানা ধরনের জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ, সাইবার অপরাধ, সাইবার চাঁদাবাজি, মাদকপাচার, অর্থপাচার, নানা ধরনের প্রতারণার ফাঁদ ও হ্যাকিং নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। সিআইডি’র পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, তথ্য শেয়ারিং ও নিজ নিজ জায়গা থেকে চেঞ্জ মেকার হিসেবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।

মেধাস্বত্ত্ব পাচার, পাইরেটস বই পাচার হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিকার কী? বা সিআইডি কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে? সেমিনারে ঢাবির এক শিক্ষার্থী জানতে চাইলে প্রশ্নোত্তর পর্বে সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আমাদের আছে। মানি লন্ডারিং আইনের মধ্যেই এ সংক্রান্ত কপিরাইট সংক্রান্ত ধারা আছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে বা অভিযোগ করা হলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সাধারণত এ সংক্রান্ত মামলা থানায় হয় না। এ সংক্রান্ত মামলা আদালতে হয়।

সেমিনার শেষে সাইবার নিরাপত্তায় করণীয় সম্পকে পরামর্শ দেওয়া হয়। পরামর্শগুলো হলো-

১. সফটওয়্যার এবং অপারেটিং সিস্টেম সবসময় আপডেট রাখুন।

২. অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন ।  
 
৩. সোশ্যাল মিডিয়া, ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ সব জায়গায় শক্তিশালি পাসওয়ার্ড ব্যাবহার করুন।

৪. অনলাইন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার সেনসিটিভ তথ্য শেয়ার থেকে বিরত থাকুন।

৫. কখনোই স্প্যাম ইমেইলের অ্যাটাচমেন্ট খুলবেন না।

৬. স্প্যাম মেইলের কোনো লিঙ্ক এবং অবিশ্বস্ত কোনো ওয়েবসাইটের লিঙ্কে ক্লিক করবেন না।

৭. সম্পূর্ণ নিরাপদ মনে না হলে কখনোই কোথাও বা কাউকে ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না।

৮. আপনি কোন ওয়েবসাইটগুলোতে ভিজিট করেন সে ইউআরএলগুলো নিয়ে সতর্ক থাকবেন।

৯. আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্টের ওপর নজর রাখুন।

১০. আপনার নিকটাত্মীয় ও পরিবারের সদস্যদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে জানান এবং তা থেকে পরিত্রাণের উপায়গুলো শেয়ার করুন।

১১. পাবলিক নেটওয়ার্ক (ফ্রি ওয়াইফাই) ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

১২. নিজের ছাড়া অন্যের ডিভাইসে কোনো অ্যাকাউন্ট যেমন ফেসবুক, ইমো, ইনস্ট্রাগ্রাম, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লগইন করলে ব্যবহার শেষে অবশ্যই লগআউট করবেন।

১৩. এসএমএস এর মাধ্যমে যদি পরিচিত কারো বিপদের কথা বলে টাকা চায় তাহলে টাকা দেওয়ার আগে অবশ্যই যাচাই করে নিবেন।

১৪. আপনার ডিভাইসে অজানা কেউ লগইন আছে কিনা তা যাচাই করুন।

১৫. থার্ড পার্টি অ্যাপস ব্যবহারে সতর্ক থাকুন।

১৬. পরিবর্তীত আইইএমআই মোবাইল সেট ব্যবহার করা হতে বিরত থাকুন।

১৭. টু-ফ্যাক্টর অথেনটিক পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।

১৮. অপরিচিত কাউকে পিন কোড/পাসওয়ার্ড শেয়ার করবেন না।

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
এসজেএ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।