ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

নড়াইলে হেনস্তার শিকার অধ্যক্ষ এখনও বাড়ি ফেরেননি!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৭ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
নড়াইলে হেনস্তার শিকার অধ্যক্ষ এখনও বাড়ি ফেরেননি!

নড়াইল: ফেসবুকে এক ছাত্রের দেওয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে সহিংসতা এবং অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় চলছে।

বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গেছে।  

ঘটনার পর ১২ দিন কেটে গেলেও বাড়ি ফেরেননি ওই অধ্যক্ষ। কোথায় আছেন তাও জানেন না পরিবারের সদস্যরা। তবে পুলিশ বলছে, তিনি এক আত্মীয়ের বাড়িতে আছেন। সেখান থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।  

আতঙ্কে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না তার পরিবারের লোকজন।

ঘটনার ১০ দিন পরে সোমবার (২৭ জুন) বিকেলে সদর থানা পুলিশ বাদী হয়ে সহিংসতার দায়ে অজ্ঞাত ১৭০ থেকে ১৮০ জনের নামে মামলা করেছে। মামলায় ওই রাতেই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

এদিকে অধ্যক্ষ স্বপনের বাড়ির সামনের মন্দিরে থাকছে পুলিশের পাহারা। বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, ঘটনার দিন থেকে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বাড়ি ফেরেননি। পরিবারের সবাই আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তায় আছেন। একেবারে এলোমেলো অবস্থা পুরো পরিবারের। এমনকি ভয়ে দুই মেয়ে পড়ালেখা করতে বাইরেও যেতে পারছে না। আর ১২ দিন ধরে নিখোঁজ হওয়া স্বপনের খোঁজ না পেয়ে তার বৃদ্ধ মা-বাবার খাওয়া-দাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

স্বপনের স্ত্রী সোনালী দাস বাংলানিউজকে জানান, ঘটনার দিন থেকে তিনি বাড়িতে নেই। কোথায় আছেন, কী করছেন তার কিছুই আমরা জানি না। এদিকে আমরাও নিরাপদে নেই। কেমন যেন এক অজানা আতংকের মধ্যে থাকতে হচ্ছে।

স্বপনের মেয়ে জুঁই বিশ্বাস এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। কিন্তু ভয়ে যেতে পারছে না স্কুলে। তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে, ‘আমার পরীক্ষার কী হবে’ বলেই কেঁদে ফেলে।  অষ্টম শ্রেণিতে পড়া আরেক মেয়ে ঘর থেকেই বের হচ্ছে না আর।

অধ্যক্ষের বাবা সুমন্ত বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ভরসা না দিলে কিভাবে সাহস পাবো? পুলিশ পাহারায় থাকার পরেও তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আবারও কিছু ঘটবে না তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

এদিকে পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ কলেজ ও অধ্যক্ষের বাড়ি পাহারায় রেখেছে। অধ্যক্ষকে যখন জুতার মালা পরানো হয়, সে সময় আমি এবং জেলা প্রশাসক দুজনেই ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম। পুলিশ কঠোর হলে গুলি চালানো হতো। এতে হতাহতের আশঙ্কা ছিল। সেটি আরও ভয়াবহ হতে পারতো। আমরা চেয়েছি তাদের নিরাপদে রাখতে।
এছাড়া ওই অধ্যক্ষ তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলেও দাবি করেন তিনি। আর এ তথ্য স্থানীয় পুলিশের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন বলেও জানানো হয়।

অন্যদিকে স্থানীয়রা জানান, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যেই হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে।

উল্লেখ্য, গত ১৮ জুন নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে রাহুল দেব নামে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র নুপুর দেবকে সমর্থন করে ফেসবুকে পোষ্ট দেন। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে কলেজ প্রাঙ্গণ এক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। তাদের দাবির প্রক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসসহ অভিযুক্ত ছাত্রকে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।