ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ধসে পড়া সেতুটি নিজ খরচে ভেঙে নতুন করে বানাতে হবে ঠিকাদারকে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৭ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২২
ধসে পড়া সেতুটি নিজ খরচে ভেঙে নতুন করে বানাতে হবে ঠিকাদারকে

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল শহরের বেড়াডোমা এলাকায় লৌহজং নদীর ওপরের ধসে পড়া নির্মাণাধীন সেতুটি নিজ খরচে পুরোটা ভেঙে আবার নতুন করে নির্মাণ করতে হবে ঠিকাদারকে।

ধসে পড়া সেতুটি মঙ্গলবার (২১ জুন) সকাল ১১টায় পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক একেএম রশিদ আহম্মদসহ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন।

তবে ধসে পড়া সেতুটির ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ায় কয়েক ধাপে ৬০ শতাংশ বিল পরিশোধ করা হয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। সেতুটি পুনরায় সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাদের বাকি বিল পরিশোধ করা হবে।

পৌরসভা সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় টাঙ্গাইল পৌরসভা সেতুটির কাজ বাস্তবায়ন করছে। আট মিটার চওড়া ও ৪০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে তিন কোটি ৬০ লাখ ১৮ হাজার ৮৪১ দশমিক ৩৩ টাকা। ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর থেকে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে ঢাকার ‘ব্রিক্স অ্যান্ড ব্রিজ লিমিটেড’ এবং ‘দ্যা নির্মিত’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজটি বাস্তবায়ন শুরু করে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি সাব ঠিকাদার টাঙ্গাইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিরুল ইসলাম খান ও প্যারাডাইস পাড়ার মো. জামিলুর রহমান জামিলকে দায়িত্ব দেয়।

গত ৩০ মার্চ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরিচালক একেএম রশিদ আহম্মদ স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ পাঠানো হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, স্লাব/গার্ডার ঢালাই কাজের জন্য সেন্টারিং-এ এমএস পাইপ ব্যবহার এবং স্টিল সাটার স্থাপন করতে হবে। এসব নির্দেশনা থাকলেও তা না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএস পাইপের পরিবর্তে গাছের গুঁড়ি ব্যবহার করছে। এ জন্য তাদের দ্রুত সেগুলো অপসারণ করে এমএস পাইপ ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এর আগে ১৫ মার্চ টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী স্বাক্ষরিত একই নির্দেশনা দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তবে সেই নোটিশ গ্রহণ করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি শহরের প্যারাডাইস পাড়ার মো. জামিলুর রহমান জামিল। দুই বার নোটিশ পাওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে গত ১১ মে টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর একটি অঙ্গীকারনামা পাঠানো হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, এমএস পাইপের পরিবর্তে গাছে গুঁড়ি ব্যবহারে ঢালাই চলাকালে সেতুটির কোনো ক্ষতি হলে এর সমস্ত ক্ষতিপূরণ তারা (ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান) বহন করবে।

নোটিশ পাওয়ার পরও সাব ঠিকাদার বেশি লাভের আশায় প্রকল্পের নির্দেশনা না মেনেই গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অ্যাবাটমেন্টসহ অ্যাবাটমেন্ট ক্যাপ/পায়ার ক্যাপ নির্মাণ করা হয়। এরপর গত ১৬ মে থেকে ১৮ মে পর্যন্ত গার্ডারসহ সেতুটির টপস্লাব ঢালাই করা হয়। এরপর গত ১৬ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে সেতুটির টপস্লাবসহ গার্ডার ধসে যেতে থাকে এবং রাত দেড়টার দিকে এক হাজার ৩০ মিলিমিটার ডাউন হয়ে যায়। এরই মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দুই কোটি টাকা বিল পরিশোধ করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে কাজের মেয়াদ গত ১১ মে শেষ হলেও ঢালাইয়ের এক মাস পড়েই সেতুটি ধসে পড়ে। এতে পশ্চিম টাঙ্গাইলের লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটি নির্মাণের কাজ পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এ কাজটি সাব কন্ট্রাক্ট নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েজন নেতা। তারা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কোনো নির্দেশনা না মেনে ইচ্ছেমতো কাজ করেছেন। এ কারণেই ঢালাইয়ের পরপরই সেতুটি ধসে পড়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মো. সোলায়মান হাসান জানান, মূল ঠিকাদারকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে বর্তমান ঠিকাদাররা কাজটি হাতিয়ে নেন। কিন্তু যারা কাজ করছেন, তারা কোনোদিন সেতু নির্মাণ। এমনকি তাদের কালভার্ট নির্মাণেরও অভিজ্ঞতা নেই। আবার তারা কর্তৃপক্ষের নিদের্শনা না মেনে নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করেছেন। তিনি দ্রুত তদন্তপূর্বক ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

সাব ঠিকাদার টাঙ্গাইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিরুল ইসলাম খান জানান, কাজটি করছেন জামিলুর রহমান জামিল ও আব্দুর রাজ্জাক। তবে তিনি কাজটি পাইয়ে দেওয়ার জন্য মধ্যস্ততা করেছেন। এছাড়া কাজটি খুবই সুন্দরভাবে হয়েছিল। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সেতুটি ধসে পড়েছে।

ব্রিক্স অ্যান্ড ব্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মোস্তফা মুহাম্মদ মাসুদ বলেন, আমরা এবার নিজেদের তত্ত্বাবধানে সেতুটি পুনরায় নির্মাণ করব। আমাদের সঙ্গে টাঙ্গাইলের ঠিকাদাররাও থাকবেন। তবে সবকিছু আমিই দেখাশোনা করব। এছাড়া আগের মতো আর সাব ঠিকাদারদের ওপর নির্মাণ কাজ ছেড়ে দেব না। আগে এ নিয়ে কিছু বলতে পারিনি, কিন্তু এখন জবাব দেওয়ার সুযোগ এসেছে। তাই সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব কিছুই আমার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।  

তিনি আরও বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যেই সেতুটি ভেঙে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ে কোনো অঙ্গীকারনামা চায়, তাহলে তাই দেওয়া হবে। আর সেতুটি পুনরায় নির্মাণ করার সময় দরপত্রে উল্লেখিত সব শর্ত মেনেই কাজ করা হবে।

টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী বাংলানিউজকে জানান, সাব ঠিকাদারদের কয়েকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ঢালাইয়ের সময় এমএস পাইপ ও স্টিল সাটার ব্যবহার করেন। কিন্তু তারা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করার কারণে সেতুটি ধসে পড়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক বরাবর একটি আবেদন পাঠানো হয়।  এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, ধসে পড়া সেতুটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হবে। তবে সেতুটি ভেঙে ফেলতে সব ব্যয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বহন করবে। এছাড়া সব নির্দেশনা মেনে সেতুটি যাতে দ্রুত পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়, সেজন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একটি অঙ্গীকারনামা দেবে।

আরও পড়ুন:
টাঙ্গাইলে ঢালাইয়ের ১ মাস পরেই দেবে গেলো সেতু

যে কারণে ধসে পড়ে সাড়ে ৩ কোটির নির্মাণাধীন সেতুটি

বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২২
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।