ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

রাষ্ট্রপতি-স্পিকার-আমিও কালো টাকার মালিক: চুন্নু

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২২
রাষ্ট্রপতি-স্পিকার-আমিও কালো টাকার মালিক: চুন্নু

ঢাকা: অর্থমন্ত্রীর নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী একটা প্লট থাকায় কালো টাকার মালিক হলে রাষ্ট্রপতি, মাননীয় স্পিকার আপনি, আমিও কালো টাকার মালিক বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।  

‘কলো টাকার মালিক’ সংক্রান্ত অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্যের শুরুতেই তিনি এ প্রসঙ্গ তোলেন। চুন্ন তার বক্তব্যে এরশাদকে স্বৈরাচার বলায় আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।  

এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।  

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ঢাকায় যার ফ্ল্যাট-প্লট আছে সে কালো টাকার মালিক। আমি পাঁচবার এমপি তিনবার মন্ত্রী। আমার ঢাকায় কোনো বাড়ি নেই। ২০১১ সালে আমি পূর্বাচলে প্লট পেয়েছিলাম। তার মানে অর্থমন্ত্রীর নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী আমি কালো টাকার মালিক হয়ে গেছি। মাননীয় স্পিকার, আমরা ঢাকায় যারা আছি আপনি, রাষ্ট্রপতি, আমি সবাই কালো টাকার মালিক। তবে আমি  আইন লঙ্ঘন করে কালো টাকার মালিক হয়েছি কি-না সংসদে এর ব্যাখা চাই।

চুন্নু বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট দিয়েছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে, কথার ফুলঝুরি দিয়ে এই বাজেট প্রণয়ন করেছেন, যার পাঠোদ্ধার করা কঠিন। সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা ছিল চলতি বাজেটে, এবারের বাজেটে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি করা হয়েছে। ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা যখন ছিল তখন ছিল জিডিপির ৩.১১ শতাংশ। এবার নিচে নেমে গেছে। এবার জিডিপির ২.৫৫ শতাংশ। মূল্য স্ফীতি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে সেটা বাজেটে উল্লেখ করেন নাই। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ৭ শতাংশ ট্যাক্স দিলে পাচারকৃত অর্থ বৈধ হয়ে যাবে। ৪০ বছর যাবৎ সব সরকার (আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি) কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু কালো টাকা সাদা হয়েছে কম। আমি যখন ব্যবসা করি ২৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। তাহলে বিদেশে টাকা পাঠিয়ে ৭ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে হালাল করবো। এটা মানি লন্ডারিং আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আইন সংশোধন করা না হলে এটা বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ নেই। কিভাবে বিদেশে পাচার করা টাকা আনবেন। আইন সংশোধন না হলে এই আইন বাস্তবায়ন হবে না। এই সুযোগ দেওয়া সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বেআইনি অনৈতিক।  

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, টাকা বিদেশে যায় সুখের জন্য। তাহলে যারা বিদেশে টাকা সুখের জন্য নিয়েছে এরা কি দেশে ফিরে আনবেন? এই টাকা কী ফিরিয়ে আনতে পারবেন? আনলেও কিছু আনবেন। এতে দেখা যাবে ভবিষ্যতে এই সুযোগ নিয়ে অনেকে টাকা পাচার করছে।  

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এক এমপি বিএনপির কথা বলতে গিয়ে এরশাদ সাহেবকে স্বৈরাচার বলেছেন। ‘যার লগে করলাম চুরি, সেই যদি বলে চোর’, তাহলে কোথায় যাই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে এতো খাতির করলাম, তিনবার চারবার জোট করলাম। নির্বাচন করলাম ক্ষমতায় আনলাম, আসলাম। আর সেই আওয়ামী লীগের ভাইয়েরা যদি জিয়াউর রহমানকে গালি দিতে গিয়ে এরশাদকেও গালি দেন, তাহলে আর যাই কোথায়? তাহলে তো নতুন করে ভাবতে হবে, কী করবো কোথায় যাবো।  

এসময় আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, কি... ভালো লাগে না! লাগবে। সময় আসতেছে চিন্তা কইরেন না।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, তিন-চারবার এমপি থাকলে এরপর আর কোনো ভাতা পায় না। প্রধানমন্ত্রী তারও পরে আর কোনো ভাতা নাই। রাষ্ট্রপতিরও একই অবস্থা। রাষ্ট্রপতি অবসরে গেলে সরকারি কোনো বাড়ি পান না। ভারতে রাষ্ট্রপতি অবসরের পর বাড়ি দেওয়া হয় পাকিস্তানেও দেওয়া হয়। আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতিদের কোনো সুযোগ নেই। অবসরে গেলে যানবাহনের সুবিধা দেওয়া হয় না। ভারতে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ভ্রমণের কোনো সুযোগ পান না। অথচ ভারতের রাষ্ট্রপতি পান। যিনি প্রধানমন্ত্রী, দুইবার তিনবার প্রধানমন্ত্রী, তার যদি কোনো বাড়ি না থাকে, রাষ্ট্রপতির যদি কোনো বাড়ি না থাকে তাহলে তিনি কোথায় থাকবেন? আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলছি বিষয়গুলো ভাবার দরকার।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২২
এসকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।