ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৫ বছরেও হয়নি উদ্বোধন, নানা সমস্যায় ভোলার সেই ২৫০ শয্যা হাসপাতাল

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২২
৫ বছরেও হয়নি উদ্বোধন, নানা সমস্যায় ভোলার সেই ২৫০ শয্যা হাসপাতাল

ভোলা: আধুনিক ভবন প্রস্তুত, আছে লিফট সুবিধা। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামও আছে পর্যাপ্ত।

কিন্তু নানা জটিলতায় গত পাঁচ বছরেও উদ্বোধন হয়নি ভোলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল। এ ছাড়া বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে জেলার ২০ লাখ মানুষকে।

উদ্বোধন না হলেও হাসপাতালটির নতুন ভবনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের। এর আগে হাসপাতালটি ১০০ শয্যার ছিল। ২৫০ শয্যায় উন্নিত হলেও বাকি অংশের সুবিধা মিলছে না। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করানো হচ্ছে ভবনটিতে। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও হাসপাতালের উদ্বোধন হয়নি।

জানা গেছে, হাসপাতালটি উদ্বোধনের জন্য তারিখ নির্ধারিত ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হবে। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সেই যে পিছিয়ে গেল; এখন পর্যন্ত নতুন কোনো তারিখ, বা কবে উদ্বোধন হবে- তার ইয়ত্তা নেই।

১০০ শয্যার হাসপাতালতে ২৫০ শয্যায় উন্নিত করে ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য-বিভাগকে ভবন হস্তান্তর করা হয়। এরপর হাসপাতালে প্রশাসনিক ও পরে জনবল নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত রোগীরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

২৫০ শয্যা হাসপাতালটিতে ৫৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও সেখানে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ১৭ জন। ৮৫ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও কাজ করছেন ৬১ জন। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম থাকলেও পর্যাপ্ত ব্যবহার নেই। চিকিৎসকের অভাবে আল্ট্রাসনোগ্রাম বন্ধ, অ্যানেসথেসিয়ার অভাবে সিজারিয়ান অপারেশনও ঠিকমত হচ্ছে না। ফলে একের পর এক সমস্যায় পড়ছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা জনগণ।

অন্যদিকে রোগীদের খাবার নিয়েও রয়েছে জটিলতা। হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার অনুমোদন হলেও খাবার সরবরাহ হচ্ছে ১০০ শয্যার। যে কারণে হাসপাতালের সব রোগী খাবার পাচ্ছেন না। অন্যদিকে বেড কম থাকায় মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হয় রোগীদের।

হাসপাতালে নিজস্ব জেনারেটর ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে। হাসপাতালে গাইনি, জেনারেল সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, চক্ষু ও নাক-কান-গলার অপারেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে আইসিইউ বেড। কিন্তু সমস্যা এক জায়গায়, উদ্বোধন হয়নি হাসপাতালটি।

নতুন ভবন উদ্বোধন না হওয়ায় পুরাতন (১০০ শয্যার) ভবনেই চলছে ২৫০ শয্যা কার্যক্রম। ফলে রোগীদের চাপ বেড়ে গেলে হিমশিম খেতে হয় ডাক্তার ও নার্সদের।

ভোলা-বাসী মনে করছে, ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালটি চালু হলে জেলার ২০ লাখ মানুষ উন্নত চিকিৎসা সেবা পাবে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের আর ঢাকা-বরিশাল যেতে হবে না। কিন্তু পাঁচ বছরেও চালু না হওয়ায় চিকিৎসা সেবা নিয়ে চিন্তিত ভোলার জনসাধারণ।

সূত্র জানায়, ভোলা সদর হাসপাতাল চত্বরে ১৪ একর জমির ওপর ২০১৪ সালে ৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় সাততলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়। এরপর প্রশাসনিক ও জনবল নিয়োগের অনুমোদন হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল, প্রয়োজনীয় আসবাব ও খাবার বরাদ্দ না হওয়ায় বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন না রোগীরা।

এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ লোকমান হাকিম বলেন, হাসপাতালটি চালুর জন্য আমরা বেশ কয়েকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বার বার চালুর আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি। চালুর আগে পর্যাপ্ত জনবল, ফার্নিচার, যন্ত্রপাতিসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ বরাদ্দ দেওয়া জরুরি। চিকিৎসক-নার্স নিয়োগসহ উপকরণগুলো পেলে হাসপাতাল উদ্বোধনে বাধা থাকবে না। আমরাও চাই এটি দ্রুত চালু হোক।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, ১৪ জুন, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।