ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সীতাকুণ্ডে বিপর্যয়: দগ্ধ পুলিশসহ শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউটে ভর্তি ৩

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২২
সীতাকুণ্ডে বিপর্যয়: দগ্ধ পুলিশসহ শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউটে ভর্তি ৩

সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনায় দগ্ধ তিনজনকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। রোববার (৫ জুন) সকালে অ্যাম্বুলেন্সে করে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান (৩৭),
মাগফারুল ইসলাম (৬৫) ও খালেদুর রহমান (৬০) নামে দগ্ধ তিনজনকে শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়।

আসাদুল হক নামে এক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন তার ভাই মাগফারুল ইসলাম। তিনি ওই ডিপোতে সিকিউরিটি ইনচার্জ হিসেবে কাজ করতেন। ডিপোর ভেতরেই একটি কোয়ার্টারে বসবাস করতেন। শনিবার (৪ জুন) রাতে বিস্ফোরণের পর আগুনে দগ্ধ হলে মাগফারুলকে একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান স্থানীয়রা। এরপর সকালে সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় এনে শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়। মাগফারুলের হাত-পাসহ শরীর বেশ কিছু অংশ পুড়ে গেছে।

আহত খালেদুর রহমানের মেয়ের জামাই মিনহাজুর রহমান জানান, তার শ্বশুর বিএম ডিপোতে অ্যাডমিন বিভাগে কাজ করতেন। পরিবারসহ চট্টগ্রামের মোজাফ্ফর নগরে বসবাস করেন তিনি। ঘটনার সময় তিনি আগুনে পুড়ে যান।

এসআই কামরুল হাসানের খালাতো ভাই নেয়ামত উল্লাহ জিসান বাংলা নিউজকে বলেন, দুর্ঘটনার খবর শুনে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান তার ভাই। তখন বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। এ সময় আগুনে দগ্ধ হন কামরুল হাসান। সেখান থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে নিয়ে যান অন্যান্যরা। পরে সেখান থেকে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পরে তাকে শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউটে পাঠিয়ে দেন।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, আহত মাগফারুল ও খালেদুরের শরীরের প্রায় ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে। পুলিশ সদস্যের দুই পা পুড়েছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিএম কনটেইনার ডিপোয় লাগা আগুনের ঘটনায় আরও আহত হাসপাতালে আসতে পারে বলেও জানান সামন্তলাল সেন।

এদিকে, সীতাকুণ্ডে এ বিপর্যয়ে এখন পর্যন্ত ৩৭ নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এখনও উদ্ধার অভিযান চলছে।

ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, রোববার (৫ জুন) সকালেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। কিছুক্ষণ পর পর বিস্ফোরণের কারণে আগুন নেভাতে সমস্যা হচ্ছে। ডিপোতে বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড দাহ্য রাসায়নিক রয়েছে।  

বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনায় আহত ৫২ জনকে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ১০ জন।

হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ৫২ জন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। তাদের বেশিরভাগেরই শ্বাসনালী পোড়া। তাদের বাঁচাতে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।  

গাউসিয়া কমিটির অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার বাংলানিউজকে বলেন, বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিএম ডিপো থেকে ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। আমাদের কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক ডিপোসহ বিভিন্ন হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। এখন যে মরদেহ পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো বীভৎস। চেনার উপায় নেই।

মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চকবাজার জোনের সহকারী (এসি) কমিশনার শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পাঁচলাইশ থানা পুলিশ মরদেহের সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) মর্গে পাঠাচ্ছে। সেখানে মরদেহ শনাক্তের জন্য ডিএনএ সংগ্রহ করা হবে। যাদের স্বজন নিখোঁজ রয়েছেন তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, ৫ জুন, ২০২২
এজেডএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।