ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাংবাদিক শিরিন হত্যাকাণ্ড: প্রশ্নবিদ্ধ পশ্চিমা গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৭ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২২
সাংবাদিক শিরিন হত্যাকাণ্ড: প্রশ্নবিদ্ধ পশ্চিমা গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা

ঢাকা: আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পশ্চিমা গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে কড়া সমালোচনার ঝড়।

এ সমালোচনায় যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীসহ শিক্ষক ও ছাত্ররা।

তারা বলছেন, শিরিন হত্যায় ইসরায়েলকে পরোক্ষ দায়মুক্তি দিতে চেষ্টা করেছে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো।

ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহে (৫১) আল জাজিরার আরবি বিভাগে কর্মরত ছিলেন। বুধবার (১১ মে) সকালে অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান কভার করার সময় ইসরায়েলি সেনার গুলিতে নিহত হন তিনি।

‘শিরিন ‘সংঘর্ষে’নিহত হয়েছেন’এমন ভুল তথ্য পশ্চিমা গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশ করার বিষয়টি জানায় আল জাজিরা। পরে হত্যার খবরটি তারা সংশোধন করলেও সেখানে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়নি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) শিরোনাম করে, খ্যাতিমান ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ ‘বন্দুকের গুলিতে নিহত হয়েছেন’।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের প্রভাষক শিবলী নোমান বলেন, শুধুমাত্র শিরিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে করা সংবাদ ছাড়াও অপশ্চিমা মানুষদের নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমের সাংবাদিকতা বা উপস্থাপন বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। আর যদি এটি মুসলিম বা ফিলিস্তিন ইস্যুতে হয়, তাহলে তো কথাই নেই।

জন্মসূত্রে খ্রিস্টান হয়েও পশ্চিমা গণমাধ্যমের মালিক শ্রেণির ব্যবসায়িক স্বার্থের ইস্যুটির সম্পর্ক ছিল গভীর। এ কারণে ফিলিস্তিনি নাগরিক ও আল জাজিরার সাংবাদিক হওয়ায় শিরিন পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর সু-নজরে আসতে পারলেন না বলেও মন্তব্য তিনি।

লেখক অদিতি ফাল্গুনী বলেন, শিরিন হত্যাকাণ্ডের পরে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর নানামুখী দ্বিচারিতা ফুটে উঠেছে। তার শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানটিও ইসরায়েলি বাহিনী শান্তিপূর্ণভাবে করতে দেয়নি। এ খবরটিও পশ্চিমা গণমাধ্যম এড়িয়ে গেছে। খ্রিস্টান হয়েও শিরিন আরব জাতীয়তাবাদের সমর্থক হওয়ার পশ্চিমা গণমাধ্যম এমন আচারণ করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাংবাদিক হাসান আহমেদ বলেন, বস্তুনিষ্ঠতা নয় বরং দ্বিচারিতার প্রমাণ দিয়েছে পশ্চিমা গণমাধ্যম। সিএনএন ও বিবিসি ইসরায়েলি সেনা বাহিনীকে জড়িয়ে সরাসরি কিছু বলেনি। সত্যিকার অর্থে, পশ্চিমা গণমাধ্যম যে তল্পিবাহক তা এই ঘটনায় স্পষ্ট।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আফগানিস্তানেরও নিচে এমন জরিপ করেছে পশ্চিমা গণমাধ্যম। এ জরিপের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকতা ভয়মুক্ত যেমন না, তেমনি খুব বাধা আছে তাও কিন্তু নয়। আর র‌্যাংকিং বিষয়টি বেসিক্যালি একটি পশ্চিমা ইনফ্লুয়েন্সিং টুলস।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রেস ক্লাবের সাবেক সদস্য ও সংবাদকর্মী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আফগানিস্তানে নারী সাংবাদিকতা নিষিদ্ধ করা ছাড়াও নারী সাংবাদিকদের হত্যা করা হচ্ছে। তারপরেও কীভাবে তারা র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকে! কিংবা ইসরাইলের সংবাদপত্রও কী স্বাধীন, তাদের ভূমিকা কী? পশ্চিমা গণমাধ্যম সবসময় নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে।

পশ্চিমা গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনায় মুখর সেখানে কর্মরত সাংবাদিকরাও।

ইহুদি ভয়েস ফর পিসের রাজনৈতিক পরিচালক বেথ মিলার নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি শিরোনামের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি লেখেন, শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান কাভার করার সময় এক ইসরায়েলি সেনা স্নাইপারের গুলিতে শিরিনকে হত্যা করেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক, আইনি মানবাধিকার ও বেসরকারিকরণ প্রকল্পের সহ-পরিচালক বাসাম খাজাও তার নিজের পত্রিকার সমালোচনা করেন। এক টুইট বার্তায় তিনি লেখেন, একজন সাংবাদিককে মাথায় গুলি করে হত্যার পরেও ‘৫১ বছর বয়সে মৃত্যু’এমন বলাটা সত্যিই অদ্ভুত।

আমেরিকান সাংবাদিক কেভিন গোসজটোলা বলেন, শিরিনের মৃত্যুর খবরটি আরও ভালো কাভারেজের দাবি রাখতো। এ ঘটনা যদি ইউক্রেনে ঘটতো, তাহলে পশ্চিমা গণমাধ্যম এটিকে হত্যাকাণ্ড হিসেবেই প্রতিবেদন করতো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২২
এফআর/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।