ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সংঘর্ষে পড়ে গেলে নাহিদকে রড দিয়ে পেটান সিয়াম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪১ ঘণ্টা, মে ৫, ২০২২
সংঘর্ষে পড়ে গেলে নাহিদকে রড দিয়ে পেটান সিয়াম মাহমুদুল হাসান সিয়াম

ঢাকা: রাজধানীর নিউমার্কেটে ঢাকা কলেজ ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের সময় পড়ে যান কুরিয়ারকর্মী নাহিদ। ইটের আঘাতে আহত নাহিদকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান সিয়াম (২১)।



সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) জানায়, নাহিদকে প্রথমে রড দিয়ে পেটায় সিয়াম। এরপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে পড়ে থাকা নাহিদকে কোপ দেন ইমন।

বুধবার (৪ মে) রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর অভিযানে শরীয়তপুর থেকে সিয়ামকে গ্রেফতার করা হয়।  প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

বৃহস্পতিবার (৫ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ১৯ এপ্রিল দুপুরে আহত হন নাহিদ। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ইটের আঘাতে আহত নাহিদকে রড দিয়ে বেধড়ক আঘাত করেছেন সিয়াম। প্রহারের পর যখন সিয়াম চলে আসছিল, তখন নাহিদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেন ইমন।

সিয়ামের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, আবেগের বশবর্তী হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইন্ধনে হামলায় অংশ নেন সিয়াম। ঢাকা কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তিনি। তবে হলে তিনি থাকতেন না,অনাবাসিক ছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইমনের দেশত্যাগের কোন তথ্য নেই আমাদের কাছে। আমাদের কাজ চলমান আছে। আমরা ইমনকে খুঁজছি, পুলিশও তাকে খুঁজছে।

সিয়ামের মারধর আর ইমনের কোপেই নাহিদ মারা গেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু ঘটনাস্থলে নাহিদের মৃত্যু হয়নি, রাতে হাসপাতালে মারা গেছেন, সেহেতু সামগ্রিকভাবে সব আঘাতেই তার মৃত্যু হয়েছে। সিয়াম এবং ইমনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিই আমরা ফুটেজ আকারে পেয়েছি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিয়ামের কোন পলিটিক্যাল পরিচয় আমরা পাইনি। এ ঘটনার পর ছবি ছড়িয়ে পড়লে ও নাম চলে এলে সিয়াম আত্মগোপনে চলে যায়।

নিহত আরেকজন মুরসালিনের বিষয়ে তিনি বলেন, মুরসালিন হত্যার বিষয়ে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় আমরা স্পেসিফিক কে জড়িত এখনও এমন কোন ফুটেজ পায়নি। বিভিন্ন দিক থেকে আসা ইটপাটকেল বা বিভিন্নজনের মারধরে মারা যেতে পারেন। এখনও এ সংশ্লিষ্ট আমরা ক্লিয়ার ফুটেজ পায়নি।

গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, অবশ্যই তাদের অনেকে আমরা শনাক্ত করেছি, তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। হামলায় অংশ নেওয়া অধিকাংশই বহিরাগত। বহিরাগতরাই ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য সহিংসতা চালায়।

র‌্যাব জানায়, গত ১৮ এপ্রিল রাত থেকে শুরু হয়ে প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে চলমান এ সংঘর্ষে ২ জন নিহত এবং গণমাধ্যমকর্মী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ প্রায় দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর এবং কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় দুইটি হত্যা মামলাসহ মোট পাচঁটি মামলা দায়ের করা হয়।

মূলত ১৮ এপ্রিল বিকেলে ক্যাপিটাল ও ওয়েলকাম নামে দুটি ফাস্ট ফুডের দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে ইফতার বিক্রির টেবিল বসানো নিয়ে বাগ-বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে দোকানের কর্মচারী সজীব ও বাপ্পী ফোন করে বহিরাগত কিছু দুষ্কৃতিকারীদের আসতে বলেন।

রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে ১০/১৫ জন দুষ্কৃতিকারী এসে ক্যাপিটাল ফাস্টফুড দোকান কর্মচারীদের মারধর করেন। পরবর্তীতে মারামারিকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল কৌশলে গুজব ছড়িয়ে ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য ও কন্টেন্ট ছড়িয়ে ইন্ধন দেওয়ার ফলে চরম সহিংসতার রূপ নেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৯ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০২২
পিএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।