ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আনন্দের হাসিতেও চোখের কোনায় জল!

জহিরুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২২
আনন্দের হাসিতেও চোখের কোনায় জল! টাকা ছাড়াই পুলিশ কনেস্টবল পদে চাকরি হয়েছে অভি লালের -বাংলানিউজ

পটুয়াখালী: নতুন প্রবর্তিত ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রথম বার বাংলাদেশ পুলিশে শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে শারীরিক যোগ্যতা সম্পন্ন ও মেধাবীদের কনেস্টবল পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এবারের নিয়োগ কার্যক্রমে পটুয়াখালীতে যে ৩২ জন পুলিশ কনেস্টবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন তারা সবাই নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র পরিবারের সন্তান।

বৈষম্যহীন ও দুর্নীতি মুক্ত নিয়োগের জন্য নির্বাচিত হয়ে আনন্দিত তারা ও তাদের পরিবার।

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের বাসিন্ধা শিবু লাল। বাজারে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান দিয়ে চলে তার সংসার। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চা, চিনি নিয়ে তার কাজ। অসুস্থ শরীরেও কোন দিন দোকান বন্ধ রাখেননি। কারণ চার ছেলেমেয়ের লেখাপড়াসহ সংসারের বোঝা শিবু লালের মাথায়। হাট-বাজারের দিনে ছেলে অভি লালও তার সঙ্গে দোকানে কাজ করেন। তবে এবার বাংলাদেশ পুলিশের কনেস্টবল পদে চাকরি হয়েছে অভি লালের। ১শ টাকার ব্যাংক ড্রাফট খরচ করে পুলিশে চাকরি পাওয়ায় সোনালী দিনের স্বপ্ন দেখছে তার পরিবার।

অভি লাল বলেন, আমরা বাবা আরও ৮ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভাঙা পা নিয়ে চায়ের দোকান দিয়ে কষ্ট করে আমাদের পড়ালেখা শিখিয়েছেন। আমার ভাই বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে চাকরি পাচ্ছে না। আমার পরিবারের অবস্থা খুবই নাজুক। আমি পুলিশে আবেদন করে সব পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয়ে এখন সর্বশেষ তালিকায় আছি। আমার আনন্দ বলে শেষ করতে পারব না। চাকরির জন্য কোন টাকা পয়সা তো দূরের কথা, কাউকে দিয়ে সুপারিশও করাইনি।

অভির বাবা শিবু লাল বলেন, আমি পুলিশের ও সরকারের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

নিজের দোকানে চা তৈরিতে ব্যস্ত বাবা শিবু লাল

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ পুলিশের এ বছরের নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে। যে কারণে অভি লালের মত মেধাবী এবং শারীরিক যোগ্যতা সম্পন্ন তরুণ-তরুণীরা নিয়োগ পেয়েছেন। তাইতো রিকশা চালক, রং মিস্ত্রী কিংবা দিন মজুরসহ নানান পেশার কাজ করেও ছেলের সাফল্যে এসব পরিবারে খুশির বন্যা বইছে।

অভি লালের মতো আরও ৩২ জনের মুখে আনন্দের হাসি, তবে এ হাসিতেও যেন তৃপ্তির কান্না চলে আসছে। চোখের কোনায় কৃতজ্ঞতা আর ধন্যবাদের জল ছল ছল করছে।

পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার জানান, বর্তমান আইজিপি ড. বেনজির আহম্মেদের প্রচেষ্টায় নতুন এই নিয়াগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পটুয়াখালী জেলায় অনলাইনে প্রথমে ৫৪৪৫ জন চাকরির আবেদন করেন। যাদের মধ্যে ১২৮০ জনের শারিরিক স্বক্ষমতা যাছাই করে তাদের থেকে ৩২৫ জনের লিখিত পরীক্ষা এবং তা থেকে ৬২ জনের মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৩২ জনকে নিয়োগের জন্য বাছাই করা হয়।

‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার পুলিশ হবে জনতার’ এমন শ্লোগানকে বাস্তবে রূপ দিতে এবং  আগামী দিনের আধুনিক রাষ্ট্রের পুলিশী ব্যবস্থার কাঠামো তৈরিতেই বাংলাদেশ পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এই আধুনিক পদ্ধতি প্রবর্তন বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, ১৬ এপ্রিল, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।