ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

খাস ইজারায় অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২২
খাস ইজারায় অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায়  সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে হাট-বাজারের খাস ইজারায় অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার(১৪ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কুষ্টারীরহাটে খাস ইজারা করে স্থানীয় মহিষখোচা ভূমি অফিস।

জানা গেছে, উপজেলার সর্বাধিক রাজস্ব আদায় হয় মহিষখোচা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী কুষ্টারীরহাট-বাজার থেকে। এ হাট থেকে সরকার প্রতি বছর ভ্যাট ট্যাক্সসহ প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ইজারা বাবদ রাজস্ব আদায় করে থাকে। প্রতি বাংলা সনের শুরু থেকে নতুন ইজারা দেওয়া হয়। চলতি ১৪২৯ সনে ইজারাদার নিয়োগ দিতে দরপত্র আহ্বান করা হলেও কেউ দরপত্র দাখিল করেননি। হাটটি খাস ইজারায় নিতে স্থানীয় একটি চক্র সমন্বয় করে সব গ্রুপকে দরপত্র কেনা থেকে নিবৃত করে। ফলে উপজেলার সব হাট-বাজার ১৪২৯ সনের জন্য ইজারা দেওয়া হলেও কুষ্টারীরহাটের একাধিকবার আহ্বান করা দরপত্রেও কোনো ইজারাদার পাওয়া যায়নি।

অবশেষে খাস ইজারার জন্য বুধবার (১৩ এপ্রিল) হাটটি দুইদিনের জন্য উন্মুক্ত ইজারার আহ্বান করা হয়। সেই অনুযায়ী সব গ্রুপের ইজারাদাররা প্রস্তুতি নিয়ে যথাসময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে যান। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো আয়োজন করা হয়নি। উল্টো পুরনো ইজারাদারের বড় ভাই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের সহায়তায় খাস আদায়ের গোপন সিদ্ধান্ত হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবার টোল আদায় শুরু হয়।

প্রথম দিন বৃহস্পতিবার হাটে গিয়ে দেখা যায়, মহিষখোচা ভূমি অফিসের লোকজন নামে ইজারার টেবিলে বসলেও মূলত আদায় করছেন পুরনো ইজারাদারের লোকজন।

নিয়মানুযায়ী নতুন বছর নতুন রশিদ বইয়ে টোল আদায় করার কথা থাকলেও সাবেক ইজারাদারের পুরনো রশিদ মূলেই আদায় হয় সরকারি খাস ইজারা। যেখানে নেই আদায়ের পরিমাণ। এতেই শেষ নয়, গরুর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ক্রেতার কাছ থেকে তিনশ’ টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও নেওয়া হচ্ছে গরু প্রতি পাঁচশ’ টাকা করে। যার মধ্যে ক্রেতার চারশ’ এবং বিক্রেতার একশত টাকা। এ অভিযোগ শুধু গরুর হাটে নয়, পুরো হাটের সব ক্ষেত্রেই আগের ইজারাদার ঘোষিত অতিরিক্ত টোল আদায় হচ্ছে খাস কালেকশনেও। এমন অভিযোগ হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের।

মহিষখোচা ইউনিয়নের চন্ডিমারী গ্রামের সাজু মিয়া কুষ্টারীরহাটে ৩৭ হাজার পাঁচশ’ টাকায় একটি গরু কিনেছেন। তিনি বলেন, গরুর রশিদ করতে আমার কাছে চারশ’ টাকা এবং গরুর বিক্রেতার কাছে একশ’ টাকা নিয়েছেন ইজারাদার। সেখানে সরকারি অফিসার ও চেয়ারম্যান বসেছিলেন। গরিব মানুষ। অনুরোধ করেও ৫০ টাকা কম দিতে পারিনি।

অতিরিক্ত অর্থ আদায় হলেও হাটটির বার্ষিক সরকারি দর কমাতে সরকারি খাতায় নাম মাত্র টাকা জমা করা হবে বলেও অভিযোগ উঠেছে। মূলত সরকারকে রাজস্ব কম দিতেই চলছে সব আয়োজন, অভিযোগ ক্রেতা-বিক্রেতাদের।

কুষ্টারীরহাটের প্রাক্তন ইজারাদার তমিজার রহমান বলেন, খাস কালেকশন সরকারি লোকজন করবে। সেখানে পুরনো  ইজারাদারের লোকজন কেন? পুরনো রশিদই প্রমাণ করে কারা টোল আদায় করছেন। নামের খাস কালেকশন। যে কোনো এক পক্ষের কাছে টোল আদায় করা যাবে। গরু প্রতি তিনশ’ টাকার বেশি না। বর্তমান পরিবেশ অনুযায়ী খরচ বাদে এ হাটে দৈনিক ৩০ হাজার টাকা আদায় হতে পারে।

মহিষখোচা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) রেজাউল আলম বলেন, হঠাৎ খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত হওয়ায় রশিদ বই তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তাই পুরনো ইজারাদারের রশিদ বইয়ে আদায় করা হচ্ছে। তবে অতিরিক্ত টোল আদায় হচ্ছে না। যা আদায় হবে, সমূলে সরকারি কোষাগারে জমা করা হবে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জি আর সরোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, কুষ্টারীরহাট খাস কালেকশন স্থানীয় ভূমি অফিসের মাধ্যমে আদায় করা হচ্ছে। পুরনো রশিদে আদায়ের নিয়ম নেই। অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২২
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।