ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সুলভ মূল্যে পণ্য: চাহিদা বেশি গরুর মাংসের

গৌতম ঘোষ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২২
সুলভ মূল্যে পণ্য: চাহিদা বেশি গরুর মাংসের

ঢাকা: স্বল্প আয়ের মানুষদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে রমজান উপলক্ষে রাজধানীর ১০টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে সুলভ-মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি শুরু করছে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। সরকারের এ উদ্যোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

বাজারের চেয়ে কম দামে পণ্য পাওয়ায় স্বল্প আয় মানুষদের ভিড় বাড়ছে এই বিক্রয়কেন্দ্রে। তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা গরুর মাংস, দুধ ও ডিমের। চাহিদার তুলনায় এসব বিক্রয়কেন্দ্রে পণ্য কম থাকায় কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে অনেককে। এজন্য এসব বিক্রয়কেন্দ্রে পণ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা।

বুধবার (০৬ এপ্রিল) সরেজমিনে সচিবালয়ের পাশে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সামনে সুলভে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের গাড়ির পেছনে মানুষের দীর্ঘ লাইন। সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস কিনতে কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের।  বাজারের থেকে কম দামে পণ্য পাওয়া যায় বলে এ বিক্রয় কেন্দ্রের লাইনে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও পণ্য কিনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। তবে বিক্রয়কেন্দ্রে যে পরিমাণ পণ্য সরবরাহ করা হয় তার থেকে অনেক বেশি মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। ফলে কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য ছাড়াই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে অনেককে।

প্রসঙ্গত, পশু ও হাঁস-মুরগির খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে গেছে মাংস, ডিম, দুধ ও মাছের দাম। এর প্রভাব পড়েছে রোজার বাজারেও। এমন পরিস্থিতিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এসব পণ্য সুলভে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল এ কাজে সহায়তা করছে।

মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমান ভ্যান থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে গরুর মাংস ও দুধ কিনলেন বিদ্যুৎ ভবনের পরিচ্ছন্নকর্মী রেখা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ৫৫০ টাকায় এক কেজির গরুর মাংস, ১৫০ টাকায় ২০ টা ডিম ও ১২০ টাকা দিয়ে দুই কেজি দুধ নিলাম। এতে  আমার সাশ্রয় হয়েছে ১৯৫ টাকা। যা দিয়ে আমি অন্য কিছু কিনতে পারবো। জিনিস পত্রের দাম বেশি হিসেব করে না চললে জীবন বাঁচানো যাবে না। এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে এসব কিনেছি। কষ্ট হয়েছে তবে সাশ্রয়তো হলো।  

রেল ভবনে কাজ করেন মিরণ আপন। তিনি বাংলানিউজকে জানান, আমাদের মতো গরিব মানুষের কথা চিন্তা করে সরকারের এই উদ্যোগ অনেক ভালো। তবে গাড়ির সংখ্যা আরো বাড়ালে মানুষের ভোগান্তি কমবে, পণ্য না পেয়ে কাউকে খালি হাতে ফিরতে হবে না। রমজানে সবাই চায় ভালো মন্দ খেতে।  কিন্তু দ্রব্যমূল্য এতো বেশি যে আমরা চাইলেই বাজার থেকে ৭০০ টাকা কেজি গরুর মাংস কিনে খেতে পারি না। কম দাম দেখে রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে গরুর মাংস, দুধ ও ডিম কিনেছি।

অভিযোগ করে শিক্ষা ভবনে কর্মরত আজম বাংলানিউজকে বলেন, সুলভে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ ভালো। কিন্তু গাড়িতে পণ্যের পরিমাণ খুব কম। এক ঘণ্টাও হয়নি গাড়ি এসেছে। এখন শুনছি গরুর মাংস শেষ। লাইনে যারা দাঁড়িয়ে আছি। মাংস শেষ শুনে অনেকে লাইন ছেড়ে চলে গেছে। তাই গাড়িগুলোতে মাংসের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিলে কাউকে আর খালি হাতে ফিরতে হবে না৷ 

ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে মনিটরিং-এর দায়িত্বে থাকা মৎস্য অধিদপ্তরের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দীপক কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের এ উদ্যোগ সাধারণ মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আজ আমাদের গাড়িতে ১০০ কেজি গরুর মাংস, এক হাজার ২০০ পিস ডিম এবং ২৩০ লিটার দুধ নিয়ে আসছি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। তবে এসব পণ্যের মধ্যে গরুর মাংস ও দুধের চাহিদা বেশি। তাই বিক্রি শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যেই গরুর মাংস বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। আমরা প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৮০ জনকে চাহিদা মতো পণ্য দিতে পারি।  

তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ এক কেজি গরুর মাংস, ২০টি ডিম এবং দুই লিটার দুধ কিনতে পারছেন। ১৫০ টাকা মিল রাখতে একজনকে ২০টি ডিম দেওয়া হয়। স্বল্প দাম হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন। কিন্তু চাহিদার তুলনায় পণ্য কম থাকায় অনেককেই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।  

রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকা, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, বাজারে প্রতি লিটার দুধ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং প্রতি হালি ডিম ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

এদিকে মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে  প্রতি কেজি গরুর মাংস পাওয়া যাচ্ছে ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২০০ টাকা, ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে দুধ প্রতি লিটার ৬০ টাকা এবং ডিম প্রতি হালি ৩০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে।

পবিত্র রমজান উপলক্ষে রাজধানীতে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রি কার্যক্রম পরিচালনা করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। রাজধানীর ১০টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে করে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে। স্থানগুলো হলো- সচিবালয়সংলগ্ন আবদুল গণি রোড, খামারবাড়ি গোলচত্বর, মিরপুর ৬০ ফুট রাস্তা, আজিমপুর মাতৃসদন, পুরান ঢাকার নয়াবাজার, আরামবাগ, নতুন বাজার, মিরপুরের কালশী, যাত্রাবাড়ী ও জাপান গার্ডেন সিটি। রোজার প্রথম দিন শুরু হওয়া এই উদ্যোগ চলবে ২৮ রমজান পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২২
জিসিজি/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।