ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে জেলা পরিষদ বিল পাস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২২
প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে জেলা পরিষদ বিল পাস -ফাইল ছবি

ঢাকা:  প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল-২০২২ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। পাশাপাশি এই আইনে জেলা পরিষদে বিদ্যমান ১৫ জন সাধারণ সদস্যের স্থলে উপজেলার সমান সংখ্যক সদস্য থাকার বিধান করা হয়েছে।

বুধবার (৬ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বিলটি পাসের জন্য প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।

জেলা পরিষদের বিদ্যমান আইনে প্রতি জেলায় ১৫ জন সাধারণ সদস্য এবং পাঁচ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য থাকার বিধান রয়েছে। এটি সংশোধন করে প্রত্যেক উপজেলায় (জেলার মোট উপজেলার সমনসংখ্যক) একজন করে সদস্য এবং চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের মোট সংখ্যার এক তৃতীয়াংশ (নিকটবর্তী পূর্ণসংখ্যা) ও কমপক্ষে দুই জন নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনকে ভোটার তালিকা তৈরির কথা বলা হলেও পাস হওয়া বিলে নির্বাচন কমিশনকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

এই বিলে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে রুটিন কার্যক্রম পরিচালনায় সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে। জেলা পরিষদের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী প্রত্যেক জেলায় একজন চেয়ারম্যান, ১৫ সদস্য ও ৫ জন নারী সদস্য অর্থাৎ মোট ২১ সদস্যের পরিষদ রয়েছে। আইন অনুযায়ী জেলার অন্তর্গত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলররা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা জেলা পরিষদের ভোটার।

বুধবার পাস হওয়া বিলটিতে একটি নতুন উপধারা যুক্ত করে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে পরিষদের সভায় অংশ নিতে পারবেন। তবে তাদের ভোটাধিকার থাকবে না।

এ বিলে জেলা পরিষদের কার্যক্রম সরকারের নিবিড় পর্যাবেক্ষণে আনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের ৩৭ ধারার পর ৩৭ক যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- পরিষদ প্রতি অর্থ বছর শেষে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে সম্পাদিত কার্যাবলীর ওপর একটি বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিল করবে। এতে বিদ্যমান আইনের কর্মকর্তাদের পদবির পরিবর্তন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ‘একজন সচিব’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘সিনিয়র সহকারী সচিব’ পদমর্যাদার একজন নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যবহারের বিধান রাখা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে কেবল নতুন জেলা পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগের বিধান থাকলেও চলমান কোনো পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রশাসক নিয়োগের বিধান নেই। বিলে জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে প্রশাসক নিয়োগের সুযোগ যুক্ত করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে ৮২ নম্বর ধারা সংশোধন করে বলা হয়েছে- এতে কোনো জেলা পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে এবং পরবর্তী পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত পরিষদের কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সরকার একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোন কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে। প্রশাসকের মেয়াদ ও অব্যাহতি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হবে।

সংসদে প্রস্তাবিত বিলে প্রশাসকের মেয়াদ ছিল না। তবে সংসদ সদস্যদের দাবির প্রেক্ষিতে মন্ত্রী একটি সংশোধনী গ্রহণ করায় এখন ‘প্রশাসকের মেয়াদ ১৮০ দিনের বেশি হবে না’। একই সঙ্গে ‘একাধিকবার কেউ প্রশাসক থাকতে পারবেন না’ যুক্ত করা হয়েছে।

বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, বিদ্যমান আইনে জেলার আয়তন, জনসংখ্যা ও উপজেলার সংখ্যা ইত্যাদি নির্বিশেষে সব জেলা পরিষদে সমসংখ্যক মোট ২১ জন সদস্য রয়েছে। কিন্তু বৃহৎ আয়তনের তুলনায় ক্ষুদ্র আয়তনের জেলা পরিষদগুলোর রাজস্ব আয়ের সংস্থান খুবই কম। ফলে ক্ষুদ্র জেলার পরিষদের পক্ষে সদস্যদের সম্মানি পরিশোধ ও অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহের পর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ সম্ভব হয় না। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে প্রত্যেক জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

এছাড়া আরও বলা হয়েছে, জেলা পরিষদগুলোকে আরও কার্যকর ও জনবান্ধব করার জন্য জেলা পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট জেলার সব উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের মধ্যে আন্তঃসমন্বয় সুসংহত করা প্রয়োজন। বিদ্যমান আইনে জেলা পরিষদগুলোর মেয়াদ পাঁচ বছর শেষ হওয়া সত্ত্বেও নতুন পরিষদের প্রথম সভায় মিলিত না হওয়া পর্যন্ত, পূর্বের পরিষদ দায়িত্ব পালন করতে পরে। এ শর্তটি সংশোধনক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে পরবর্তী নতুন পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগ করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২২
এসকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।