ঢাকা, শুক্রবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

উরুতে ছুরিকাঘাতেই মারা গেলেন চিকিৎসক বুলবুল!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫২ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
উরুতে ছুরিকাঘাতেই মারা গেলেন চিকিৎসক বুলবুল!

ঢাকা: গরীব মানুষকে বিনা টাকায় চিকিৎসা দিয়ে ‘গরীবের ডাক্তার’ হিসেবেই পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন আহমেদ মাহী বুলবুল। এর বাইরে পথশিশুদের জন্য কাজ করাসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে যুক্ত এই দন্ত চিকিৎসক রাজধানীর সড়কে ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান।

রোববার (২৭ মার্চ) ভোরে নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসা থেকে বেরিয়ে আর ঘরে ফেরা হয়নি এই গরীবের ডাক্তার বুলবুলের। দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে আহত হলে চিকিৎসা পেতে দেরী হওয়ায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ৩৮ বছর বয়সী এই চিকিৎসক।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে পুলিশ বলছে, ভোরে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন চিকিৎসক বুলবুল। একপর্যায়ে তার ডান পায়ের উরুতে ছুরিকাঘাত করা হয়।

এদিকে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসক জানান, বুলবুলকে একটি ছুরিকাঘাত করা হলেও চিকিৎসা পেতে দেরী হওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান।

পরিবারের সদস্যরা জানান, স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ শেওড়াপাড়ার বাসায় থাকতেন চিকিৎসক বুলবুল। রোববার (২৭ মার্চ) ভোর ৫টায় নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। মিরপুরের কাজীপাড়া মূল সড়কে বুলবুল ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। তিনি তখন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে বুলবুলের বন্ধু মোহাম্মদ সিরাজ জানান, কাজীপাড়া মূল রাস্তায় বুলবুলের ডান পায়ের উরুতে ছুরিকাঘাত করা হয়। এরপর বুলবুলের চিৎকারে তিন জন পথচারী ধরাধরি করে তাকে ঘটনাস্থলের পাশেই আল হেলাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশ কেইস বুঝতে পেরে চিকিৎসা না দিয়েই ফিরিয়ে দেয়।

চিকিৎসা না দিয়ে ৯৯৯-এ ফোন

বুলবুলের বন্ধু সিরাজ বলেন, বুলবুলকে আহত অবস্থায় আল হেলাল হাসপাতালে নেওয়া হলে তারা চিকিৎসা না দিয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশকে খবর দেয়। সেখানে চিকিৎসা হবেনা জানিয়ে বুলবুলকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বলা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

৯৯৯-এ ফোন পেয়ে হাসপাতালে যাওয়া কাফরুল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শ্যামল কুমার হালদার জানান, তিনি বুলবুলকে প্রথমে পেয়েছেন আল হেলাল হাসপাতালের সামনে। সঙ্গে তিন জন ছিলেন, যারা বুলবুলকে ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে নিয়ে যান। আল হেলালের চিকিৎসক প্রচুর রক্তক্ষরণের কথা বলে বুলবুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। সেখান থেকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বুলবুলের উরুতে একটি ছুরিকাঘাত

মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুলবুলের ডান পায়ের উরুতে আনুমানিক এক ইঞ্চি জখম। এছাড়া, শরীরের অন্যান্য কোথাও কোনো আঘাতের কথা সুরতহালে উল্লেখ করা নেই।

মরদেহের ময়নাতদন্তের পর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সেলিম রেজা বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। মানুষের মেজর কতগুলো রক্তনালী আছে। এগুলোর কোনটা কেটে গেলে ব্লিডিংয়ে মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

‘ছিনতাইকারী’ তিন জন

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত ও ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে তিন জন ছিল, যারা ছিনতাইকারী বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সম্ভবত ঘটনার সময় বুলবুলের চিৎকারে ছিনতাইকারীরা মোবাইল-টাকা কিছু না নিয়েই চলে যায়। ওই তিন জন ঘটনার পর পাশের গলিপথ ধরে পালিয়ে যায়।

ইতোমধ্যে এ ঘটনায় বুলবুলের স্ত্রী বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। সোমবার (২৮ মার্চ) রংপুরে গ্রামের বাড়িতে বুলবলকে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছে পরিবার।

ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আ স ম মাহাতাব উদ্দিন বলেন, আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করছি। আশা করছি শীঘ্রই জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

>>> সন্তানদের জন্য গরুর খাঁটি দুধ আনা হলো না ডা. বুলবুলের
>>> শেওড়াপাড়ায় ছুরিকাঘাতে চিকিৎসক খুন

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
পিএম/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।