ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চাকরি দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ, দম্পতি আটক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২২
চাকরি দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ, দম্পতি আটক

নীলফামারী: সরকারি হাসপাতালে চাকরি দেওয়ার নামে ৩২ জনের কাছ থেকে ১৪ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক দম্পতিকে আটক করেছে প্রতারণার শিকার কয়েক যুবক। পরে খবর পেয়ে পুলিশ আটক স্বামী-স্ত্রীকে সৈয়দপুর থানায় নিয়ে আসে।

আটকরা হলেন- মো. জাহিদুল ইসলাম (৪৮) ও তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস (৪০)।  

সোমবার (২১ মার্চ) দিবাগত রাতে সৈয়দপুর শহরের রেলওয়ের বাজার থেকে আটক করে তাদের স্টেডিয়াম এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।  

জানা যায়, পঞ্চগড় সদরের পাটোয়ারিপাড়ার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম ঢাকাস্থ মতিঝিলের ৩৫ দিলকুশা (৪ তলা) ঠিকানার ‘গোল্ডেন সার্ভিস লিমিটেড’ কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক পরিচয়ে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চাকরি দেওয়ার নামে দিনাজপুর, সৈয়দপুর, জয়পুরহাট ও কুড়িগ্রামের প্রায় ৩২ জনের কাছ থেকে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দীর্ঘদিন থেকে আজকাল করে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। এর মধ্যে দুইজনকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক 'ওয়ার্ড বয়' পদে চাকরি দিয়েছেন। এর বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে তিন লাখ ৫০ হাজার করে সাত লাখ টাকা নিয়েছেন জাহিদুল ইসলাম।

তারা হলেন- দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার রুহিগাঁও এলাকার মহেন্দ্র নাথ রায়ের ছেলে দুলাল চন্দ্র রায় (৩০) ও সিশেন চন্দ্র রায়ের ছেলে স্বপন চন্দ্র রায় (২৮)।  

গত ১৭ মার্চ তারা যোগদান করেছেন। এছাড়াও একইভাবে তিন থেকে ৫ লাখ করে টাকা নিয়ে আরও ৩ জনকে ইতোমধ্যে চাকরি দিয়েছেন। যারা গত তিন মাসে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা করে বেতন পেয়েছেন। যা চুক্তি অনুযায়ী একেবারে নগন্য।  

মূলতঃ এই চাকরি ও নামকাওয়াস্তে বেতন দেওয়াটা অন্য  চাকরিপ্রার্থীদের হাতে রাখতে আইওয়াস মাত্র বলে অভিযোগ। যাতে হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরতে চাপ দেওয়া না হয়। অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দুই একজনকে এভাবে ভুয়া নিয়োগ দিয়ে বিশ্বাস জিইয়ে রেখে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়াই জাহিদুলের কারবার।

এমতাবস্থায় গত ১৭ মার্চ সৈয়দপুরের পার্শ্ববর্তী দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার বিন্যাকুড়ি এলাকার আজিজার রহমানের ছেলে আতিকুর রহমানকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে যোগদানের জন্য নিয়োগপত্র প্রদান বাবদ ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। আতিকুর ইতোপূর্বে নিয়োগপ্রাপ্তদের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারে যে নিয়োগের নামে এটা প্রতারণা। কারণ নিয়োগপ্রাপ্তদের চুক্তিমত বেতন না দেওয়ায় মানবেতর অবস্থায় পড়ে অনেকে চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এতে চাকরির জন্য দেওয়া টাকা মার যায়। সেইসঙ্গে অনেকে নিয়োগপত্র নিতে চাহিদামত টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাদের চাকরি যেমন হয় না তেমনি অগ্রীম দেওয়া ৩০-৫০ হাজার টাকাও ফেরত পায় না।
 
অনেকে চাকরিতে যোগদান করেও বছর শেষে লাভবান হওয়া তো দূরের কথা চাকরির জন্য দেওয়া মূল টাকাও তুলতে পারে না। মাঝখান থেকে সময় ও শ্রম নষ্ট করে চুক্তির মেয়াদ শেষে খালিহাতে বাড়ি ফিরতে হয়। সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালেরই এমন ২৮ জন কর্মচারী দীর্ঘ ৮ মাস যাবত বেতন না পেয়ে চরম দূর্বিসহ পরিস্থিতিতে দিনাতিপাত করছেন।  

এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চাকরির নিয়োগপত্র নিতে দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে কৌশলে জাহিদুলকে সৈয়দপুরে ডেকে আনে আতিকুর রহমান। ওই রাতে জাহিদুল সস্ত্রীক সৈয়দপুরে আসলে আশপাশের আরও অনেক চাকরিপ্রার্থী উপস্থিত হয়ে তাদের সৈয়দপুর স্টেডিয়ামে নিয়ে যায়।

সেখানে তারা অগ্রীম দেওয়া টাকা ফেরত চায়। এতে জাহিদুল ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ২ লাখ টাকা দিতে চায়। বাকি টাকা দিতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। এতে বাধ্য হয়ে যুবকরা স্বামী-স্ত্রীকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত খান বলেন, আটক জাহিদুল চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে এখনও প্রতারণার বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। কারণ অভিযোগকারীদের কাছে তেমন কোনো প্রমাণপত্র নেই। কিন্তু ঘটনা সত্য হওয়ায় স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই আদালতে পাঠানো হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।