ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সরকারি খাবার পাচ্ছে বিরল ‘কালোমুখো হনুমান’

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২২
সরকারি খাবার পাচ্ছে বিরল ‘কালোমুখো হনুমান’

মেহেরপুর: মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে দাঁপিয়ে বেড়ানো বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমানগুলো এখন সরকারি খাবার পাচ্ছে। সেই খাবার খেয়ে খুশির জোয়ারে লাফিয়ে লাফিয়ে জানাচ্ছে অভিনন্দন।

মেহেরপুর বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাফর উল্ল্যাহ বলেছেন,  জেলায় তালিকাভুক্ত ২৭০টি কালোমুখো হনুমান রয়েছে। বন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এসব হনুমানকে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম কলা, ১০০ গ্রাম পাউরুটি, ১০০ গ্রাম বিস্কুট, ২৫/৩০ গ্রাম চিনা বাদাম খাওয়ানো হচ্ছে।

তিনি জানান, বন অধিদপ্তরের আওতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর মেহেরপুর জেলায় ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১৩০ দিনের জন্য এ বাজেট দিয়েছে বন অধিদপ্তর। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এ খাতে ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল।

জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান বন অধিদপ্তরের কাছে ডিও লেটার পাঠানোর কারণে এ বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলে জানান এই বন কর্মকর্তা।

বন বিভাগের কর্মচারী নজরুল ইসলাম ও আনসার আলী মুজিবনগরের বিভিন্ন স্থানে এবং জিল্লুর রহমান সদর উপজেলার নির্দিষ্ট স্থানে এসব হনুমানের জন্য খাদ্য বিতরণ করেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়ার মেসার্স আব্দুল মান্নান এসব খাবার সরবরাহ করে।

বন কর্মকর্তা জাফর উল্ল্যাহ বলেন, জেলায় কালোমুখো হনুমান ও পশুপাখির খাদ্য উপযোগী বিভিন্ন সাড়ে ৪ হাজার ফলজ গাছ রোপন করা হয়েছে। জেলার যেসব এলাকায় হনুমানসহ অন্যান্য পাখির অভয়ারণ্য রয়েছে সেখানে  ২ হাজার বাবলা গাছ, ২০০ শতাধিক পেয়ারা গাছ, ১ হাজার জাম গাছ লাগানো হয়েছে।

সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী বুড়িপোতা ইউনিয়নের কালাচাঁদপুর গ্রামের মরগাঙ খালের উত্তরপাড়ে, সৈয়দ উদ্দীন ডিগ্রি কলেজ থেকে পৌর সীমানা পর্যন্ত, আমঝুপি ইউনিয়নের খোকসা হতে আযান গ্রাম পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশ, মুজিবনগর উপজেলার স্বরসতি খালের পাড়ে, গাংনী উপজেলার করমদী গ্রামের জুবাতলা মাঠ সড়কের উভয় পাশে, ভাটপাড়া নীলকুঠী ইকোপার্ক প্রাঙ্গণে এসব গাছ লাগানো হয়েছে।

তিনি বলেন, এর ফলে পশুপাখির খাদ্য উৎপাদন, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব হতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে। এরই মধ্যে জেলা ও উপজেলাতে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মৃধা মো. মুজাহিদুল ইসলাম, সদস্য সচিব জাফর উল্ল্যাহ। কমিটিতে মোট ৯ জন সদস্য রয়েছেন।

জানা গেছে, বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমানের আদি নিবাস ভারতে। সে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে ১০/১৫ বছর আগে মেহেরপুরে আসে। মুজিবনগর উপজেলার কমপক্ষে ৫টি স্পট, মেহেরপুর শহর ও সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে হনুমানগুলো খাদ্যের অভাবে সারাদিন ছুটোছুটি করে বেড়ায়। খাবারের খোঁজে এসব হনুমান কৃষকদের ফসলের মাঠ, ফলের বাগান এবং বাসা বাড়িতে পর্যন্ত হানা দেয়। বিশেষ করে করোনাকালে বিরাট খাদ্য সঙ্কটে পড়ে হনুমানগুলো।

জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান বলেন, আমাদের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কালোমুখো হনুমানের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পেরে ভালই লাগে। খাবার পাওয়ার পর হনুমানগুলো লাফালাফি করে যেন অভিনন্দন জানায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, ৭ মার্চ, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।