ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ধর্ষণের শিকার নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন নয়, ডিজিটাল রেকর্ড হবে সাক্ষ্য

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২২
ধর্ষণের শিকার নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন নয়, ডিজিটাল রেকর্ড হবে সাক্ষ্য প্রতীকী ছবি

ঢাকা: দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্য চিহ্নিতকরণ, গ্রহযোগ্যতা নির্ধারণ, অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি ও আদালতের সাক্ষ্য উপস্থাপনসহ অন্য বিষয়ে প্রাসঙ্গিকতা নির্ধারণ করা হয় ‘এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২’ এর মাধ্যমে।

সাক্ষ্য সম্পর্কিত এমন বিধিবদ্ধ একক আইন এই উপমহাদেশ ব্যতীত পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই।

১৫০ বছর আগে প্রণীত আইন ও বিচার ব্যবস্থায় ডিজিটাইজেশন একটি নতুন বাস্তবতা এবং এই বাস্তবতার নিরিখে এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ সংশোধন করে ‘এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০২২’ এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

খসড়া অনুযায়ী, ধর্ষণ মামলার ভিকটিমকে চরিত্র এবং অতীত ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন করার সম্পর্কিত বিধান বাতিল হবে। এছাড়া ডিজিটাইজেশনের এই যুগে ডিজিটাল রেকর্ড ও ফরেনসিক বস্তু সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য করা হবে।

খসড়া আইনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত প্রদান-সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশের জন্য সার-সংক্ষেপ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে দিয়েছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ খসড়া আইন যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করবে বলে জানা গেছে।

আইন ও বিচার বিভাগ থেকে পাঠানো খসড়া আইনের সার-সংক্ষেপে বলা হয়, দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্য চিহ্নিতকরণ ও গ্রহযোগ্যতা নির্ধারণ, প্রমাণের দায়ভার, অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি ও আদালতের সাক্ষ্য উপস্থাপনসহ অন্য বিষয়ে প্রাসঙ্গিকতা নির্ধারণ করা লক্ষ্যে এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ প্রণয়ন করা হয়। সাক্ষ্য সম্পর্কিত এমন বিধিবদ্ধ একক আইন এই উপমহাদেশ ব্যতীত পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই।  

১৫০ বছরে পূর্বে প্রণীত আইনটি বর্তমান সময়ে কার্যকরভাবে প্রাসঙ্গিক হলেও বিচার ব্যবস্থায় ডিজিটাইজেশন একটি নতুন বাস্তবতা এবং এই বাস্তবতার নিরিখে এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ সংশোধনের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে।

সার-সংক্ষেপের চিঠিতে বলা হয়, বিদ্যমান এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ অনুযায়ী ধর্ষণ মামলার ভিকটিমকে জেরার সময় তার চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করার সুযোগ রয়েছে। যা নারীর জন্য মর্যাদাহানিকর ও ‘আইনের চোখে সমতা’ নীতি পরিপন্থী। এমতাবস্থায়, বিদ্যামান এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ আইন সংশোধন করে ধর্ষণ মামলার ভিকটিমকে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করা সম্পর্কিত বিধানটি বিলুপ্ত করা আবশ্যক।

এতে বলা হয়, এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ ইংরাজি ভাষায় প্রণীত। ওই আইনের বিভিন্ন ধারা বা গুরুত্বপূর্ণ অভিব্যক্তিসমুহ উচ্চ আদালত কর্তৃক ইংরেজি ভাষায় ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে ইতোমধ্যে নজির আকারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাক্ষ্য আইন বাংলা ভাষায় নতুন করে প্রণয়ন করা হলে উচ্চ আদালতের রায়ে ব্যবহৃত অভিব্যক্তিসমুহ পুণরায় ব্যাখ্যার প্রয়োজন হতে পারে, যা পরবর্তীতে আইনি জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ ইংরেজি ভাষায় থাকা সমীচীন হবে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে, বিচারকার্যে সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে সম্পাদানের লক্ষ্যে বিদ্যামান আইন সংশোধন করে ‘এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০২২’ এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়।  

প্রস্তাবিত সংশোধনীর মাধ্যমে ডিজিটাল রের্কড ও ফরেনসিক পদার্থ বা বস্তুসমূহকে সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য করে তার গ্রহণযোগতা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিধান বিদ্যমান আইনে সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণ মামলার ভিকটিমকে তার চরিত্র সম্পর্কে জেরা করা সম্পর্কিত বিধান বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিজিটাল রেকর্ড ও ফরেনসিক সাক্ষ্য-সংক্রান্ত বিধান এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২-এ সংযোজন করা হলে বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থায় ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে বিচারকার্য নিম্পত্তি করার হবে।

আইন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তুত করা খসড়া আইনটির ওপর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পুলিশ হেডকোয়ার্টারস, সিআইডি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ, বিচারক, পাবলিক প্রসিকিউটর ও আইনজীবীদের উপস্থিততে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রস্তাবিত আইটির ওপর বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া খসড়া আইনটি প্রস্তুতকালে দেশের সাক্ষ্য আইন পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে।

এমতাবস্থায়, ‘এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০২২’ এর খসড়া যৌক্তিকতা সংবলিত তুলনামূলক বিবরণী ও বিদ্যমান আইনসহ এই সার-সংক্ষেপ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত প্রদান সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশের জন্য উপস্থাপন করা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২২
এমআইএইচ/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।