ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মসজিদও রেজিস্ট্রি করলেন সাব রেজিস্টার মিরাজ!

খোরশেদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২২
মসজিদও রেজিস্ট্রি করলেন সাব রেজিস্টার মিরাজ!

লালমনিরহাট: মসজিদ শ্রেণির জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা সাব রেজিস্টার এইচএম মিরাজ সৌরভের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের রসূলপাড়া গ্রামে একটি মসজিদ ছিল।

যার কারণে মাঠ জরিপের সময় ওই জমির শ্রেণিতে মসজিদ হিসেবে চিহ্নিত করে রেকর্ডভুক্ত করেন সেটেলমেন্ট বিভাগ। মহিষখোচা মৌজার খতিয়ান নম্বর-২৩২, জেএল নম্বর ১১৫, এসএ দাগ নম্বর -৩১৮০ ও বিআরএস নম্বর ৬০৭৩ দাগের জমির শ্রেণিতে দেওয়া আছে মসজিদ। ওই এলাকার মৃত একাব্বর আলীর ছেলে নুর ইসলাম গংরা পৈত্রিক সূত্রে পাওয়ার দাবি করে ১৮.৫৪ শতক বিক্রি করেন। যা ক্রয় করেন একই এলাকার আব্দুল হামিদ মাস্টারের ছেলে শাহজাহান আলী বাদশা ও ইউনুস গংরা।
ভূমি ক্রয়-বিক্রয় নিয়ম অনুযায়ী ৯০ সালের প্রিন্ট পর্চা ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ সাপেক্ষে জমি রেজিস্ট্রি করা সম্ভব। ভূমি উন্নয়ন কর ব্যতিত কোনোভাবে জমি রেজিস্ট্রির নিয়ম নেই। সরকারি নিয়মানুযায়ী মসজিদসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। তাই এসব বিক্রি যোগ্য নয়।

সরকারি বিধি কাগজ কলমে থাকলেও আদিতমারী উপজেলা সাব রেজিস্টার অফিস চলে সাব রেজিস্টার এইচএম মিরাজ সৌরভের নিয়মে। নিজের গড়া নিয়মেই মসজিদও এ মসজিদ শ্রেণির ১৮.৫৪ শতাংশ জমি নিজ অফিসে রেজিস্ট্রি সম্পাদন করেন গত ২০ ফেব্রুয়ারি। যার দলিল নম্বর ১১১৩। ভূমি উন্নয়ন করের কোনো প্রমাণপত্রও নেই সেই দলিলে। বিষয়টি জানাজানি হলে পুরো উপজেলায় আলোচনার ঝড় ওঠে।

অভিযোগ রয়েছে, মোটা অংকের উৎকোচ দিলে জমি রেজিস্ট্রিতে তেমন কোনো কাগজপত্রও লাগে না এ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। তাই এক শ্রেণির অসাধু দলিল লেখক কাগজপত্র ঘষা মাঝা করে ফটোকপি দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে নিচ্ছেন। এমনই ঘটনা ঘটেছে মসজিদ রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে। এ খতিয়ানের অপর দাগে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে। সেই কাগজে অবিকল নকল করে অপর দাগ লিখে ফটোকপি সংযুক্ত করে সম্পাদন হচ্ছে দলিল। যাতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতা। আর রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

মসজিদ রেজিস্ট্রির দলিলটি লেখেন দলিল লেখক সাইফুল ইসলাম মন্টু। যিনি বিডিআর বিদ্রোহের সময় চাকরিচ্যুত হয়ে বর্তমানে দলিল লেখক হিসেবে গত ২০১৩ সালে দলিল লেখকের সনদ গ্রহণ করেন। যার লাইসেন্স নং ১২/২০১৩।

অভিযোগ রয়েছে, দলিল লেখক সাইফুল ইসলাম ভূমি উন্নয়ন করের রশিদ ফটোকপি করে মসজিদের দাগও কলমে লিখে দিয়ে দলিলটি প্রস্তুত করেন। বর্তমান সাব রেজিস্টারের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় ইতোপূর্বেও এমন কাজ করে অধরাই রয়েছেন এ দলিল লেখক।

শুধু মসজিদই নয়। গত বছরের ১৯ অক্টোবর সম্পাদিত ৪৯০২ ও ৪৯০৩ নম্বর দলিল দুইটিরও ভূমি উন্নয়ন কর আজও প্রদান করা হয়নি বলে নিশ্চিত করেন মহিষখোচা ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা। এভাবে ভূমি উন্নয়ন করের রশিদ ছাড়াই জমি রেজিস্ট্রি করেন সাব রেজিস্টার এইচএম মিরাজ সৌরভ। যাতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

মহিষখোচা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) রেজাউল আলম বলেন, মসজিদ শ্রেণির কোনো ভূমির উন্নয়ন কর গ্রহণ করা হয় না। এ খতিয়ানের ৬০৭৫ দাগের ডাঙ্গার ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহণ করা হয়েছে। ৬০৭৩ নম্বর দাগে মসজিদ থাকায় গ্রহণ করা হয়নি। সাব রেজিস্টার অফিসের প্রতিনিধি এসে রশিদ বহি দেখেও গেছেন। এরপরও মসজিদ রেজিস্ট্রি হওয়ার কথা নয়।

সম্পাদিত দলিলটি হাতে নিয়ে আদিতমারী উপজেলা সাব রেজিস্টার এইচএম মিরাজ সৌরভ বাংলানিউজকে বলেন, মসজিদ শ্রেণি ও ভূমি উন্নয়ন কর ব্যতিত জমি রেজিস্ট্রি সম্পাদনের কোনো নিয়ম নেই। দলিল লেখক মসজিদের স্থলে ডাঙ্গা দেখিয়ে ভুয়া কাগজ দাখিল করে এমনটা করতে পারে। প্রয়োজনে দলিলটি ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়টি তদন্ত করে দলিল লেখকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।