ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জেব্রার মৃত্যু: ফৌজদারি ও বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২
জেব্রার মৃত্যু: ফৌজদারি ও বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত ফাইল ছবি

ঢাকা: গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে জানুয়ারি মাসে ১১টি জেব্রার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও বিভাগীয় মামলা করার সিদ্দান্ত নিয়েছে সরকার।

ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সুপারিশ অনুযায়ী দায়ীদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপ-মন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব মো. মোস্তফা কামালসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় অতিরিক্ত সচিব(প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, মিজানুল হক চৌধুরী ও অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ) কেয়া খান এবং তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, উপসচিব ও তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখে সভায় জানানো হয়, ঘাসে অতিরিক্ত নাইট্রেটের প্রভাব ও মিশ্র ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে সব জেব্রার মৃত্যু ঘটেছে।

তবে, প্রথম দিকের তিনটি জেব্রার মৃত্যু ধামাচাপা দেওয়া এবং আঘাত জনিত কারণ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে মৃত তিনটি জেব্রার পেট ধারালো কিছু দিয়ে কাটা হয়েছে বলে কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। কে বা কারা মৃত তিনটি জেব্রার পেট কেটেছে, তা উদঘাটন করার জন্য নিবিড় তদন্তের প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কর্তব্যরত ভেটেরিনারি অফিসারের চাহিদা মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাফারি পার্ক মেডিক্যাল বোর্ডের সভা আহ্বান করবেন বলে বিধান থাকা সত্ত্বেও এতগুলো জেব্রার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরও জরুরিভিত্তিতে মেডিক্যাল বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়নি, যা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার শামিল। কোনো প্রাণীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় জিডি করার প্রচলন থাকলেও এক্ষেত্রে থানায় কোন জিডি করা হয়নি, যা রহস্যজনক।  

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব গত ২২ জানুয়ারি সাফারি পার্ক পরিদর্শন করেন। সেদিন পর্যন্ত ৮টি জেব্রা মারা গেলেও প্রকল্প পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ভেটেরিনারি কর্মকর্তা বা কর্মরত অন্য কেউ জেব্রার মৃত্যুর ঘটনাটি সচিবকে অবহিত করেননি। এতে প্রতীয়মান হয়, প্রথম থেকেই জেব্রা মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। বিষয়টি অস্বাভাবিক, অগ্রহণযোগ্য ও সরকারি কর্মচারী আচরণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, যা দায়িত্ব অবহেলার শামিল।

তদন্ত কমিটির এসকল মতামত বিবেচনায় নিয়ে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিতপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ফৌজদারি মামলা ও বিভাগীয় মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এছাড়াও, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে প্রাণীর মৃত্যুরোধ ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য করণীয় বিষয়ে তদন্ত কমিটির সুপারিশকৃত ১১টি স্বল্পমেয়াদি, ৪টি মধ্যমেয়াদি এবং ৯টি দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

জেব্রা মৃত্যুর ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন, দায়-দায়িত্ব নিরূপণ ও ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশ দিতে পরিবেশ, বন পরিবর্তন জলবায়ু মন্ত্রণালয় ২৬ জানুয়ারি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ৩০ জানুয়ারি ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করেন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পরবর্তীতে কমিটিতে আরও দুজন বিশেষজ্ঞ সদস্য এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমেগাজীপুর জেলা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে কো-অপ্ট করা হয়। এছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটিকে কাজের সহায়তা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের জন্য তিনজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

আট সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি এবং তিন সদস্য বিশিষ্ট সহায়ক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি ও ১২ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। সর্বশেষ ১৯ ফেব্রুয়ারি কমিটির সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।

তদন্ত কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের মেয়াদ ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে আরও সাত কার্যদিবস বৃদ্ধি করা হয়।

তদন্তের স্বার্থে কমিটি ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ ও ফার্মাকোলজি বিভাগ, ঢাকার কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান গবেষনাগার (সিডিআইএল), সাভারের প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাব, মহাখালীর রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনিষ্টিউিট(আইইডিসিআর), সিআইডির কেমিক্যাল ল্যাব এবং মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে রাসায়নিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে। সার্বিক তদন্ত শেষে ২০ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।