ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘পুলিশ আমার ছেরাডার বুক ঝাঁঝরা কইর‍্যা দিছে’

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
‘পুলিশ আমার ছেরাডার বুক ঝাঁঝরা কইর‍্যা দিছে’ .

ময়মনসিংহ: বাবা নেই, নিজেই সংসার চালান। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের খেলনাসহ খাওয়ার নানা জিনিস বিক্রি করেন রায়হান (৩০)।

ইউপি নির্বাচনের দিন গোলযোগের মধ্যে পুলিশের ছোড়া গুলিতে শত শত স্প্লিন্টার দেহে বিদ্ধ হয়েছে তার। একদিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে চলে এসেছেন। এখন বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি।

ছেলের কষ্ট তার মা সহ্য করতে পারছেন না। আর্তনাদ করে বারবার তিনি বলছেন, আমার ছেরাডার তো কোনো দোষ ছিল না। কেরে আইনের লোকরা (পুলিশ) এই রহম বেআইনি কাম করলো। নির্বাচনে তো তারা (পুলিশ) আমার ছেরাডার বুহে (বুক) গুলি মাইর‌্যা ঝাঁঝরা কইর‌্যা দিছে। হে (ছেলে) মইর‌্যা গেলে আমি কারে নিয়া বাঁচবাম।

চিৎকার করতে করতে তিনি বলেন, এই পর্যন্ত (গত তিনদিন) কেউ দেখতেও আইলো না। কিবায় (কিভাবে) চিকিৎসা করাইয়াম। ’

রায়হানের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামে।

ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরে উঠানে চাটাই বিছিয়ে গুরুতর অসুস্থ ছেলের পাশে বসে আছেন বৃদ্ধ মা রাবিয়া খাতুন (৬৫)। ছেলের মাথার কাছে বসে থেমে থেমে কান্না করে ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তিনি।

হাসপাতালে একদিন চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসক। এখানে বুকে স্প্লিন্টার বিদ্ধ রায়হানের চিকিৎসা চলছে না। ব্যান্ডেজের ভেতর থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত বের হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে যে কয়েকটা ওষুধ দেওয়া হয়েছে তাই খাওয়ানো হচ্ছে।

জানতে চাইলে রায়হানের মা বৃদ্ধা রাবিয়া খাতুন জানান, সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে বাড়ির পাশেই কেন্দ্রে ভোট দিয়ে কেন্দ্রের বাইরে ছিলেন তার ছেলে রায়হান। ওই সময় ভোটগণনা শেষ করে কেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ফলাফল ঘোষণা না দিয়ে পিকআপ ভ্যানে করে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চলে যেতে চাইলে পথরোধ করে এক মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা। এ সময় পুলিশ অতর্কিতে গুলি ছুড়ে পিকআপ ভ্যান নিয়ে দ্রুত চলে যায়। এতে তার ছেলে ছাড়াও দুই শিশুসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন।

জানা যায়, পুলিশের ভয়ে বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা আহত লোকজনের আর্ত-চিৎকারের শব্দ শুনে অন্ধকারের মধ্যে উদ্ধার করে শিশু তফাজ্জল (৯) ও শুভ (১২) নামের দুই শিশু ছাড়াও মোট ৮ জনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখাইনেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে দুই শিশুকে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।  

চাঁন মিয়া নামে স্থানীয় একজন জানান, ভোটের ফলাফল ঘোষণা না করেই নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে গাড়িতে করে চলে যাচ্ছিলেন ভোটকেন্দ্রে কর্মরত নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন। এ খবর পেয়ে আব্দুর হাই (ফুটবল প্রতীক) নামে একজন মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা সড়কে দাঁড়িয়ে গাড়িটিকে বাধা দেয়। এ সময় গাড়ি থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নেমে জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করেন।

তখন ভয়ে লোকজন সড়ক ছেড়ে আশপাশের ধান ক্ষেতে নেমে আত্মগোপন করেন। পরে নির্বাচনী কর্মকর্তা, সরঞ্জাম ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বোঝাই গাড়িটি দ্রুত উপজেলা সদরের দিকে চলে যায়।

তিনি জানান, এ ঘটনার পর এলাকার লোকজন নিখোঁজ কয়েকজন শিশু ও তরুণের খোঁজ করতে শুরু করে। পরে গোঙানির আওয়াজ শুনে তফাজ্জল ও শুভ নামে দু’জনসহ আর অনেককেই রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে হাসপাতালের আইসিইউতে তফাজ্জল ও ওয়ার্ডে চিকিৎসাধিন আছে শুভ। আহত অন্যদের মধ্যে অনেকেই চিকিৎসা শেষে বাড়িতে চলে এলেও দেহের বিভিন্ন জায়গায় স্প্লিন্টার বিদ্ধ থাকায় যন্ত্রণায় ভুগছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।