ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঈদে অবিক্রিত পশু নিয়ে বিপাকে ব্যবসায়ীরা

মুস্তাফিজুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০২১
ঈদে অবিক্রিত পশু নিয়ে বিপাকে ব্যবসায়ীরা

পাবনা: একটু লাভের আশায় রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরের হাটে বিক্রির জন্য তোলা পশু নিয়ে চরম বিপাকে পরেছেন পাবনার পশু ব্যবসায়ীরা। হাট থেকে ফেরত অনা অবিক্রিত পশু নিয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছেন জেলার কয়েক হাজার ব্যবসায়ী ও খামারিরা।

 

করোনা আর লকডাউনের কারণে এবারের ঈদে হাটে ক্রেতার উপস্থিতি ছিলো খুবই কম। তাইতো এবারে হাটগুলোতে আমদানি হওয়া পশু অবিক্রিত রয়ে গেছে অনেক। রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় জেলা শহরগুলোতে নেওয়া বেশিরভাগ পশুই বিক্রি করতে না পেরে ফেরত নিয়ে আসতে হয়েছে তাদের। হাট থেকে ফেরত আনা পশু এখন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই দেনাদারের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের সূত্রমতে, এবারের ঈদুল আজহায় পাবনায় তিন লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত ছিলো। এসব মোঠা তাজা গরু ব্যবসায়ীরা পাবনা থেকে নিয়ে রাজধানী ঢাকা, চিটাগং, সিলেট ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তাদের আশায় যেন গুড়েবালি হয়েছে। ধার দেনা আর ঋণ করে লাখ লাখ টাকার গরু কিনে নিয়ে চার/পাঁচদিন গরুর পায়ের নিচে শুয়ে বসে থেকেও বিক্রি হয়নি বেশির ভাগ পশু। এছাড়াও ফিরতি পথে দ্বিগুণ পরিবহন ভাড়া দিয়ে আবার বাড়িতে আনতে হয়েছে অবিক্রিত পশুগুলো। এতে প্রতিটা গরু ব্যবসায়ীদের চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। একটু লাভের আশায় বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ ঘুরে পশু কিনে সেই পশু না বিক্রি করতে পেরে চরম বিপাকে পরেছেন তারা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের চাহিদাবহুল হাটগুলোতে কোরবানির পশু বিক্রি করতে না পারায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পাবনা অঞ্চলের পশু ব্যবসায়ীরা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণ বা অন্য কোনো সুবিধা দিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করার ব্যবস্থা করবেন সরকার এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

পাবনা সদরের চর তারাপুর গ্রামের পশু ব্যবসায়ী মোকাদ্দেস প্রামাণিক বলেন, এবারে কোরবানির ঈদে ২২টি গরু ঢাকায় নিয়েছিলাম। ৬টি গরু কম দামে বিক্রি করে ১৬টি ফেরত আনতে হয়েছে। দেনা করে পশু কিনে এখন চরম বিপদের মধ্যে পরেছি। গৃহস্থরা টাকার জন্য ফোন দিচ্ছে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে এখন। টাকার জন্য পাওনাদাররা বাড়ির উপর আসছে। কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আওতাপাড়া এলাকার পশু ব্যবসায়ী কালাম শেখ বলেন, বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৪৫টি পশু কিনে ঢাকায় নিয়েছিলাম। ১৪টি বিক্রি হয়েছে ৩১টি ফেরত নিয়ে আসতে হয়েছে। প্রতিদিন গরুর খাদ্য বাবদ অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন এই পশু আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদের পরে বাজারে মাংসের চাহিদাও কম। লকডাউনে বাজারে ক্রেতা নেই। হাটে বাজারে গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করবো তাও তো করতে পারছি না। ব্যাংক, সমিতি আর মানুষের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে এখন বিপদে পড়ে গেছি। সরকারিভাবে এখন যদি একটু সহযোগিতা পেতাম তা হলে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পেতাম।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আল মামুন হোসাইন বলেন, এবার কোরবানির হাটে চাহিদার চাইতে পশুর সরবরাহ বেশি ছিলো। যার কারণে ব্যবসায়ীরা চড়া দাম পাননি। তবে বড় গরুর চাইতে এবার মাঝারি ধরনের গরুর চাহিদা বেশি ছিল। অনলাইনে পশু বিক্রি হয়েছে অনেক। তবে লকডাউন আর করোনার জন্য হাটে ক্রেতার উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিলো। করোনা সংক্রমণের জন্য আমরাও হাটে ভিড় না হওয়ার জন্য অনলাইনের প্রতি জোড় দিয়ে ছিলাম। জেলার পশু ব্যসায়ীরা রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পশু নিয়ে সবগুলো বিক্রি করতে পারেনি। যেহেতু চাহিদা কম পশু বেশি তাই অবিক্রিত থেকে গেছে অনেক পশু। তবে এই পশু ঈদ পরবর্তীতে মাংসের চাহিদা পূরণ করবে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের আমরা তালিকা তৈরি করছি। সরকারিভাবে কোনো সুযোগ সুবিধা এলে অবশ্যই তাদের দেওয়া হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যমতে করেনা মহামারির সময়ের জন্য জেলাতে প্রায় ৬৯টি অনলাইন পশুর হাট বসেছিলো। প্রায় লক্ষাধিক পশু বিক্রি হয়েছে অনলাইনে। সেই কারণে হাটে ক্রেতার উপস্থিতি কম হয়েছে। জেলার আতাইকুলা, পুস্পপাড়া, একদন্ত, নাজিরপুর, বাঁশেরবাধা, আটঘড়িয়া, দেবত্বর অঞ্চল ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।  

এছাড়া জেলার ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, চাটহোর অঞ্চলেও পশু ব্যবসায়ীরা চরম সমস্যার মধ্যে রয়েছে। তবে এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারের কাছে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।