বাগেরহাট: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি বেড়ে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
শরণখোলার বলেশ্বর, মোরেলগঞ্জের পানগুছি, মোংলার পশুর, বাগেরহাটের ভৈরব, দড়াটানাসহ সব নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট বেড়েছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বাগেরহাটে অবিরাম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বুধবার (২৮ জুলাই) সকাল ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় বাগেরহাট জেলায় গড়ে ৯৩ দশমিক ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে কৃষিবিভাগ। এর মধ্যে সব থেকে বেশি ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে শরণখোলা উপজেলায়। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বর্ষাকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষিবিভাগ।
বাগেরহাট সদর উপজেলা, কচুয়া, ফকিরহাট, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলার বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের রুস্তম শেখ বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে বৃষ্টিতে প্রচুর পানি বেড়েছে। ঘরের চারপাশে পানি উঠেছে। ঘেরও তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। নেট দিয়ে মোটামুটি ঠেকিয়েছি। এ অবস্থা শুধু নরেন্দ্রপুরের নয় আশপাশের বেশিরভাগ গ্রামের অবস্থা এ রকম।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর এলাকার দবির উদ্দিন বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রাস্তায় হাঁটুপানি। অনেকের ঘর ও দোকানের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। বৃষ্টি হলেই আমাদের এলাকার সড়কে পানি উঠে যায়। এই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগও নেই। একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।
হাড়িখালী মাঝিডাংগা আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার সোহরাব হোসেন রতন বলেন, শুধু বৃষ্টি নয় জোয়ার হলেই এলাকায় পানি উঠে যায়। দুর্ভোগে পড়তে হয় আমাদের। জলাবদ্ধতা নিরসনে লোক দেখানো নয় কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা রোধ করা যায়। না হলে আমাদের দুর্ভোগ কখনো যাবে না।
শরণখোলা উপজেলার তালতলী এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা সবুর বয়াতি, আবুল হারেস খানসহ কয়েকজন বলেন, বৃষ্টির ফলে আমরা ঘরে থাকতে পারিনি। ঘরের ভেতরে পানি উঠে গেছে। কখন পানি নামবে বুঝতেছি না। রান্না-খাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে।
মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া গ্রামের রিয়াদুল ইসলাম, রাকিব হাসানসহ কয়েকজন বলেন, রাতেই আমাদের অনেক ঘের ভেসে গেছে। সকালের জোয়ারে পানি আরো বেড়েছে। ঘের থেকে মাছও বের হয়ে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাগেরহাটের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাটে অবিরাম বৃষ্টিতে আউশ-আমনের বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে শরণখোলা উপজেলায়। এছাড়া জেলায় গড়ে ৯৩ দশমিক ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যদি এভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তবে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবীর জানান, সুন্দরবনে পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট পানি বেড়েছে। প্রজনন কেন্দ্র এলাকার পাকা রাস্তায় এক থেকে দেড় ফুট পানি ছিলো। তবে সকাল থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২১
আরএ