ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘একটু লাশ খুঁজে দেন’—মর্গে নিখোঁজদের ছবি নিয়ে স্বজনরা

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২১
‘একটু লাশ খুঁজে দেন’—মর্গে নিখোঁজদের ছবি নিয়ে স্বজনরা

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজদের ছবি নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ভিড় করেছেন তাদের স্বজনরা।

মা তার ছেলের খোঁজে, বোন তার ভাইয়ের খোঁজে, মামা তার ভাগ্নের খোঁজে ছবি নিয়ে আহাজারি করছেন।

নিখোঁজ সবাই অগ্নিকাণ্ডের সময় ওই কারখানায় কর্মরত অবস্থায় ছিলেন বলে দাবি তাদের স্বজনদের। তারা ছবি দেখিয়ে বলছেন—একটু আমাদের লাশ খুঁজে দেন!

শুক্রবার (৭ জুলাই) বিকেলে রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানার অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৫২ জনের লাশ মর্গে আনার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ভিড় করেন নিখোঁজদের স্বজনরা।

সাজ্জাদ হোসেন সজিব (২২) ঘটনার সময় ভবনটির চারতলায় কাজ করছিলেন। নিখোঁজ সজীবের মামা মাহমুদুর রহমান বলেন, ঘটনার সময়ে একই ফ্লোরে ডিউটি করেছিল আমার ছোট ভাই মঞ্জুরুল। তাকে উদ্ধার করা হলেও সজীব এখনও নিখোঁজ। মঞ্জুরুলের কাছ থেকে শুনেছি আগুনের ঠিক ৫ মিনিট আগে সজীব তাকে বলেছে—আমি নাস্তা করে আসছি। তারপর দাউ দাউ করে কারখানায় আগুন লাগে। এখন পর্যন্ত সজীব নিখোঁজ।

মশিউর রহমান নামে এক ব্যক্তি জানান, ঘটনার সময় চারতলায় ডিউটিতে ছিলেন তার ছোট ভাই স্বপ্ন। ছোট ভাইয়ের খোঁজে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসেছেন তিনি।

মশিউর বলেন, আমার ভাই বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে কিছুই জানি না। ফায়ার সার্ভিস কাল সন্ধ্যা থেকে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। এখনো পর্যন্ত চেষ্টা করেই যাচ্ছে, আগুন নেভাতে আর পারছে না। আমরা নিজেরা কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে ভাইকে খুঁজবো সেই ব্যবস্থাও নাই।

হাসনাইন নামে ১৩ বছর বয়সী ছোট্ট ভাইয়ের মরদেহ খুঁজতে এসেছে তার কিশোরী বোন তানিয়া। হাসনাইনের ছবি হাতে নিয়ে সে বলতে থাকে—ওর লাশটা কি আছে? একটু খুঁজে দেন।

ভবনের চারতলায় ডিউটিরত নিখোঁজ রাকিব হোসেনের (১৮) খোঁজে আসা তার বাবা কবির হোসেনও ছবি নিয়ে মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে ছেলের লাশ খুঁজে দেওয়া আর্জি জানাচ্ছেন যাকে পাচ্ছেন তাকেই।

নারায়ণগঞ্জ সদরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাস চন্দ্র সাহা জানান, রূপগঞ্জের কারখানাটি থেকে ৫২টি মরদেহ উদ্ধারের পর ঢাকা মেডিক্যা কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। আপাতত লাশগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিটি লাশেরই ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্তের মাধ্যমে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা হবে। এরপর লাশের দাবিদারদের সঙ্গে তা ক্রসম্যাচ করে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর লাশ হস্তান্তর করা হবে। দগ্ধ লাশ দেখে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব নয়।

সংশ্লিষ্ট নিউজ:
>>>সেজানের পোড়া কারখানা থেকে বের হলো ৫২ মরদেহ
>>> রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ড: অর্ধশতাধিক মৃত্যুর ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন
>>>নিয়ন্ত্রণে আসেনি সেজান জুসের কারখানার আগুন, নিহত ৩
>>সেজান জুসের কারখানায় আগুন: কয়েকজন ঢামেকে ভর্তি
>>>রূপগঞ্জে সেজান জুসের কারখানায় আগুন, নিহত ২
>>>১৫ ঘণ্টাও নেভেনি আগুন, ফায়ার সার্ভিসের ক্লান্তিহীন চেষ্টা
>>>জুস কারখানায় অতিরিক্ত দাহ্য পদার্থ থাকায় নিয়ন্ত্রণে আসছে না আগুন
>>>জীবিত নেই কেউ, প্রিয়জনের খবর পেতে স্বজনদের অপেক্ষা


বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২১
এজেডএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।