ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আশ্রয়ণের বাড়ি পরিদর্শনে গ্রামে গ্রামে ছুটছে পিএমও টিম

মহিউদ্দিন মাহমুদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪১ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২১
আশ্রয়ণের বাড়ি পরিদর্শনে গ্রামে গ্রামে ছুটছে পিএমও টিম

ঢাকা: করোনা মহামারির কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি পরিদর্শনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছুটে গেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) পাঁচটি টিম। আগামী কয়েকদিন আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ও নির্মাণাধীন বাড়িগুলোর অবস্থা দেখতে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম চষে বেড়াবে এসব টিম।

শুক্রবার (৯ জুলাই) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একযোগে এসব টিম সারাদেশের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে রওনা হয়। প্রথম দফায় সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাকে পাঁচটি ব্লকে ভাগ করে পরিদর্শন শুরু করেছে এসব টিম।

পরিদর্শনকারী টিমগুলোকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নির্মিত এবং নির্মাণাধীন বাড়িগুলোর নির্মাণশৈলী ও গুণগতমান, অনুমোদিত ডিজাইন ও প্রাক্কলন অনুযায়ী হয়েছে কিনা, তা যাচাই করার এবং ছবিসহ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শনে যাওয়া উচ্চ পর্যায়ের পাঁচটি টিমের একটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন নিজেই।

দুপুরে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে দু’টি টিম মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় পৌঁছায়। সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িগুলো পরিদর্শন ও উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারা।

এ দু’টি টিমে অন্যান্যের মধ্যে মুন্সিগঞ্জে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এ বি এম সরওয়ার-ই-আলম সরকারসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মাঠ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি পরিদর্শন শেষে টিম দু’টি আলাদা হয়ে ভিন্ন ভিন্ন জেলায় যাবে।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা এবং বগুড়া জেলার বগুড়া সদর, শেরপুর ও শাহজাহানপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত ও নির্মাণাধীন বাড়িগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করবে।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমানের নেতৃত্বে অপর টিম হবিগঞ্জ সদর, মৌলভীবাজার সদর ও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বাড়িগুলো পরিদর্শন করবে।

এছাড়া বাকি তিনটি টিমের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একটি টিম ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলা, প্রকল্পের উপ-প্রকল্প প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলা, সহকারী প্রকল্প পরিচালক বদরুল আলমের নেতৃত্বে একটি টিম পাবনা, মানিকগঞ্জ, নাটোর জেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়ি সরেজমিন পরিদর্শনে গেছে।

মুন্সিগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি পরিদর্শনকালে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন,  আমরা পাঁচটি টিম করে দিয়েছি, সারাদেশে আজকে থেকে পরিদর্শন শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব জেলাতে যাবে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় এ কথাগুলো (অনিয়মের অভিযোগ) উঠছে। যে এ কথাগুলো সঠিক কিনা। সেটা যাচাইয়ের জন্য কমিটি করে তদন্ত করতে বলি।

কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প, স্বপ্নের প্রকল্প। একটা গরিব লোক যিনি ঘর পাচ্ছেন এটা তার একটা স্বপ্নের সূচনা হয়। কাজেই এটা নিয়ে আমরা কোনো অবহেলা করবো না এবং কোনো অবহেলা সহ্য করবো না।

মাহবুব হোসেন বলেন, আপনারা জানেন যে প্রধানমন্ত্রীর ড্রিম প্রজেক্ট হলো আশ্রয়ণ প্রকল্প। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বিনে পয়সায় ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে বিনে পয়সায় জমি ও ঘরের মালিকানা দেওয়া হচ্ছে। যেটাকে আমরা বলি ' অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল'।

মুন্সিগঞ্জে একটি এলাকায় কিছু বাড়ির ফ্লোর ফেটে যাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এটা নিয়ে আমরা কমিটি গঠন করেছি। প্রাথমিকভাবে আমি যে তথ্য পেয়েছি ওখানে ইটের সলিং দেওয়ার কথা সেটা তারা দেয়নি। ঢালাইটাও মানসম্মত না। সেটি পাওয়ার পর কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী মেরামত শুরু করা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ সদরে এ কাজের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিল তারা সবাই ওএসডি হয়েছেন।

মাহবুব হোসেন বলেন, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সবাই মিলে কিন্তু কাজটা করছেন। এ করোনাকালীন ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৮০টি ঘর দেওয়া এটা কম কথা নয়। তাদের কাজকে আমরা অবশ্যই সাধুবাদ জানাই এবং কৃতজ্ঞতা জানাই। কিন্তু আমাদের মনটাই খারাপ হয় যখন আমরা দুই চারটা সমস্যার কথা শুনি।

অতিবৃষ্টি, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয়ণের কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া নির্মাণে ত্রুটির কারণেও বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  

আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি নির্মাণে ত্রুটির বিষয়টি সামনে আসতেই নড়ে চড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে অনিয়ম, অবহেলা ও অর্থ আত্মসাৎকারীদের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে এগোচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে সরকার। এরইমধ্যে পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে।

‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ বাস্তবায়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত সর্বমোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৮০টি পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমিসহ দুই কক্ষ বিশিষ্ট আধা পাকা বাড়ি দেওয়া হয়েছে।

‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার এবং জমি আছে ঘর নেই অথবা অত্যন্ত জরাজীর্ণ ঘর এ রকম ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১টি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে বাড়ি নির্মাণ করে দেবে সরকার।

আরও পড়ুন
** আশ্রয়ণ প্রকল্প: পরিদর্শনে নামছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টিম
** আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়ম: ফেঁসে যাচ্ছেন শতাধিক কর্মকর্তা! 

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২১, আপডেট: ১৭৩৫ ঘণ্টা
এমইউএম/এসআই/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।