নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) এ কে এম শামীম ওসমান বলেছেন, যখন ডিএনডি তৈরি করা হয়েছিল তখন ডিএনডি ছিল বেহেশতের টুকরো। এখন তা অভিশাপের কারণ।
রোববার (৪ জুলাই) বিকেলে ফতুল্লা এলাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের লিংক রোডের কাজের জন্য প্রায় আট কিলোমিটার রাস্তায় আমরা বালু ভরাট করছি। ওই আট কিলোমিটার রাস্তায় ডিএনডির যে খালগুলোর সংযোগ রয়েছে কিনা আমরা তা জানি না। কারণ আমরা টেকনিক্যাল পারসন না। ইসদাইর গাবতলী জোনে আগেও পানি জমতো, কিন্তু এভাবে জমতো না। আপনারা জানেন আমাদের ডাবল রেললাইন হচ্ছে। এ জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। সেই রেললাইন তৈরি করার পর যেখান দিয়ে পানি সাবরেজিস্ট্রার অফিসের পাশের খাল হয়ে বেরিয়ে যেতো সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ৪০ ফুটের মতো স্টিলের স্ট্রাকচার দিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমি সেই এলাকার চেয়ারম্যানদের বলেছি, সেটে ভেঙে ফেলুন, প্রয়োজনে এর দায় আমার ওপর দেবেন।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের কুতুবপুরে ওয়াসার পাশে আমাদের একটা রাস্তা রয়েছে। আগে সেই এলাকায় প্রতি বর্ষায় ওয়াসা ১০টি করে অস্থায়ী পাম্প বসাতো। এখন ঢাকা সিটি করপোরেশন ওয়াসার দায়িত্ব নিয়েছে। এর ফলে সেই পাম্পটা এখন চলছে না। তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আশা করি তারা সেই পাম্পগুলো চালু করে দেবে। আমাদের আরেকটি এলাকা রয়েছে। যা অভিশপ্ত এলাকা হয়ে গেছে। সেটা হলো ফতুল্লার লালপুর এলাকা। সেই জায়গাটা হলো নিচু আর পানি বের হওয়ার যে রাস্তাগুলো রয়েছে সেগুলো উচু। নিচু জায়গা থেকে তো পানি আর উচু জায়গায় যেতে পারবে না। ডিএনডির খাল হচ্ছে, তার সঙ্গে যদি লোকাল ড্রেনের সংযোগ না করি তাহলে পানিটা বের হবে কীভাবে এই সমন্বয়হীনতা একটি সমস্যা।
শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ছোট একটি এলাকা। এ এলাকায় মাত্র চার থেকে পাঁচ লাখ ভোটার। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মানুষ সমস্যা পড়ে ডিসি সাহেবকে বলছে। উপজেলা পরিষদকে বলছে। পানিতে ও মাটিতে চলতে পারে আমাদের এমন একটি ভেকু দরকার যা বর্তমানে নেই। সেখানে কিছু শিল্পপতিসহ সাধারণ মানুষ ময়লা ফেলতে ফেলতে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থান একেবারে ভরাট হয়ে গেছে। এটা ক্লিয়ার থাকলে এনায়েতনগরের পানিটা বের হয়ে যায়। ডিএনডির যারা রয়েছেন তারা সাহায্য করলে লালপুরের পানিটাও আমরা বের করতে পারি। আমাদের স্থানীয় নেতাকর্মীরা ও চেয়ারম্যানরা এখন ড্রেজারের পাইপ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের কাজ করছেন। গত বছরও সিদ্ধিরগঞ্জ পুরো পানির নিচে চলে গিয়েছিল। তখন আপনারা অটো মেশিন দিয়ে শত কোটি টাকার সম্পত্তির রিস্ক নিয়ে বুদ্ধি ও মেধা খাটিয়ে অটো মেশিনটি ম্যানুয়্যাল করে চালু করেছিলাম। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ ঘণ্টায় পানিটা বেরিয়ে যায়, ফলে মানুষ ভোগান্তির শিকার হয়নি।
তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন গতবছর বৃষ্টিতে তো এমন বাজে অবস্থা হয়নি। এবার অনেক বাজে অবস্থা। সিটি করপোরেশন এলাকার পানিটা কবরস্থানের দিক দিয়ে এসে ফতুল্লা গাবতলী হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। সেটা যেখান দিয়ে বের হওয়ার কথা সেই জায়গাটা আটকে যাচ্ছে এবং এসব এলাকার মানুষ পানিতে ভাসছে।
তিনি আরও বলেন, এখানে জনসচেতনতার একটা ব্যাপার রয়েছে। ড্রেন পরিষ্কার করার বাজেট একবারই আসে। পরিষ্কার করার পর দেখা যায় ড্রেনটা দুই-তিন মাসে ভরে যাচ্ছে। ময়লার সঠিক ব্যবস্থাপনা করা হলে এই সমস্যাটা কমে যেতো। দুই বছর আগে সিটি করপোরেশনকে ডাম্পিং করার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যেন সেখানের ময়লা দিয়ে ইলেক্ট্রিসিটি উৎপাদন করা যায়। জালকুড়ির মানুষের চরম আপত্তির পরেও জেলা প্রশাসন ওই জায়গা বরাদ্দ দেন। আজ পর্যন্ত সেই কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২১
আরআইএস/আরআইএস