ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৯ মে ২০২৫, ০১ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

লালপুরে গুদাম কর্মকর্তার জিম্মা থেকে উদ্ধার হলো ২০০ বস্তা গম!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৩৩, জুন ২৫, ২০২১
লালপুরে গুদাম কর্মকর্তার জিম্মা থেকে উদ্ধার হলো ২০০ বস্তা গম! ...

নাটোর: নাটোরের লালপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) মো. রফিকুল ইসলামকে স্থানীয় এমপির বাড়িতে আটকে রেখে লাঞ্ছিত করা, জোরপূর্বক ৮ লাখ টাকার দলিলে স্বাক্ষর নেওয়ার ঘটনার পর এবার ওই খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার ব্যক্তিগত জিম্মা থেকে ২০০ বস্তা সরকারি গম উদ্ধার করেছে উপজেলা প্রশাসন। এ নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

কেউ কেউ বলছেন, কেঁচো খুড়তে এবার সাপ বেরিয়ে পড়ছে।

শুক্রবার (২৫ জুন) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাম্মী আকতারের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে তার কোয়ার্টারের পাশের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে এসব গম উদ্ধার করা হয়। গমগুলো গুদামে না রেখে নিজ জিম্মায় সংরক্ষণ করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ওই খাদ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। গমগুলো উদ্ধারের পর বর্তমানে গুদামে রাখা হয়েছে। লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাম্মী আকতার বিকেলে বাংলানিউজকে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে অভিযুক্ত ওসি এলএসডি রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলা খাদ্য কর্মকর্তার অনুমতি নিয়েই গুদামের বাইরে আলাদা ভবনে গমগুলো মজুদ করেছিলেন। তবে তা অস্বীকার করেছেন জেলা খাদ্য কর্মকর্তা রবীন্দ্র লাল চাকমা। একই সঙ্গে গুদামের বদলে নিজ জিম্মায় গম রাখার অনুমতিপত্র দেখতে চাইলে অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম উল্টো সাংবাদিকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। এসময় জেলা খাদ্য কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তিনি দ্রুত সটকে পড়েন।

অপরদিকে খাদ্য গুদামে গম সরবরাহকারী কৃষক, নিয়মিত শ্রমিক ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সরকার ধান ও চাল সংগ্রহের মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করলেও কৃষকদের নানাভাবে হয়রানি করেন ওসি এলএসডি রফিকুল ইসলাম। সিন্ডিকেট করে নির্দিষ্ট কয়েকজনের থেকে ধান, গম কিনে প্রকৃত কৃষকদের শস্যের আদ্রতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফিরিয়ে দেন। গুদামে কর্মরত দীর্ঘদিনের শ্রমিকদের বঞ্চিত করে রাতের আঁধারে বাইরে থেকে শ্রমিক এনে লোড-আনলোডের কাজ করানোর পাশাপাশি নিয়মিত শ্রমিকদের ঠিকমতো মজুরি দেন না তিনি। নিজ জিম্মায় রাখা গমগুলোও তিনি রাতের আঁধারে বাইরে বিক্রি করে দেন এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাম্মী আকতার বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার দুপুরে গুদামে গিয়ে এলসির কোনো গম পাওয়া যায়নি। এমনকি গুদামও ছিল পরিপূর্ণ। তবে পার্শ্ববর্তী তালাবদ্ধ ভবনের একটি ঘর থেকে ২০০ বস্তা গম উদ্ধার করা হয়েছে। যা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে গুদামে জায়গা না থাকলে সেগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে হেফাজত করতে পারতেন। কিন্তু উনি সেটি করেননি।  

তিনি বলেন, গমগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে গুদামজাত করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পুরো বিষয়টি অবহিত করে তার বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ব্যবস্থা নিতে জেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নাটোর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা রবীন্দ্র লাল চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, গুদামের বাইরে গম রাখতে হলে নিয়ম অনুযায়ী খাদ্য বিভাগকে অবহিত করে অনুমতিপত্র নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে আমাকে অবহিত করা বা কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। বিষয়টি খাদ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে লালপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলামকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম বকুলের বাড়িতে ডেকে নিয়ে সাড়ে ৪ ঘণ্টা আটকে রেখে লাঞ্ছিত করা, তার কাছ থেকে জোর করে দলিলে ৮ লাখ টাকা পাওয়ার স্বাক্ষর নেওয়া, মামলা দায়ের এবং দুইজন আটক। অতঃপর একদিনের ব্যবধানে ওই কর্মকর্তার জিম্মা থেকে ২০০ বস্তা সরকারি গম উদ্ধার নিয়ে মানুষের মনে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এটা সাজানো নাটক আবার কেউ কেউ বলছেন, কেঁচো খুড়তে এবার সাপ বেরিয়ে পড়েছে। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। একটি ঘটনার পরপরই আরেকটি ঘটনা, বিষয়টি নিয়ে জনমনকে ভাবিয়ে তুলেছে।

এ ব্যাপারে লালপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইসহাক আলী বাংলানিউজকে জানান, গম উদ্ধারের বিষয়টি তার জানা নেই। তবে খাদ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত খারাপ কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। উনি স্থানীয় এমপির লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, এজন্য তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ কেউ আনতে পারেন।  

তিনি অভিযোগ করে বলেন, লালপুর উপজেলার সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক অশোভন আচরণ, ভয়ভিতি দেখিয়ে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেন এমপির লোকজন। এ ব্যাপারে তারা কেউ কোনো অভিযোগ করতে সাহস পাননি। সেক্ষেত্রে খাদ্য কর্মকর্তা অভিযোগ বা মামলা করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। বিষয়টির কতটুকু সত্যতা আছে তা জানা নেই।
 
এদিকে ওই উপজেলায় কর্মরত সরকারি একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, সব কাজেই এমপির লোকজন হস্তক্ষেপ করেন, অশোভন আচরণ করেন। জোর করেই তারা সব কিছু আদায় করে নিতে চায়। কিন্তু কিছু বলা যায় না। কারণ অযথা ঝামেলায় পড়তে হবে।

নাটোর-১ (লালপুর ও বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বাংলানিউজকে বলেন, ওই খাদ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। এক বছরে অন্তত ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই খাদ্য কর্মকর্তা। উদ্ধারকৃত ২০০ বস্তা গমও অবৈধ পন্থায় ব্যবসার উদ্দেশ্যে নিজ হেফাজতে রেখেছিলেন। এভাবে তিনি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।  

বকুল আরো বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। প্রতিপক্ষরা আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।