ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেটে স্ত্রী-দুই সন্তান হত্যার ঘটনায় হিফজুর গ্রেফতার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৮ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২১
সিলেটে স্ত্রী-দুই সন্তান হত্যার ঘটনায় হিফজুর গ্রেফতার

সিলেট: সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলায় স্ত্রী ও দুই সন্তান হত্যার ঘটনায় আহত হিফজুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
 
শনিবার (১৯ জুন) দুপুর ১টার দিকে সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।


 
তিনি বলেন, নয়টি আলামতের পরিপ্রেক্ষিতে হিফজুর রহমানকে স্ত্রী ও দুই সন্তান হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
 
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ঘটনার পর্যবেক্ষণসহ ফোনের কললিস্ট তুলে দেখলাম ভোরে হিফজুর তিন জন মানুষকে কল করেন। প্রথমজনকে সকালে পান দেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি পান দিতে পারবো না, অসুস্থ বোধ করছি। দ্বিতীয় জনকে বলেন, ভাই- তুমি একটু সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে আসো, আমি অসুস্থ বাইরে যাবো। তৃতীয় জনকে বলেন, আমি অসুস্থ, আমাকে নিয়ে যাও। কিন্তু স্ত্রী সন্তানকে হত্যার কথা কিছুই বলেননি। এই কলগুলো করা হয়েছে ভোর ৫টা ১৭, ৩৭ ও ৩৮ মিনিটে।
 
এছাড়া ঘটনার পরের একটি ছবিতে দেখা গেছে হিফজুর রহমান নিজের স্ত্রী ও সন্তানের ওপরে অনেকটা শুয়ে আছেন। তার পা অন্যদের গায়ের ওপর। তার পায়ে মাটি লাগানো। তাতে অনুমেয় হত্যার সময় তিনি অনেকক্ষণ ঘুরাফেরা করেছে ঘরের ভেতরে।  

এছাড়া ঘরে একমাত্র আলামত পেয়েছি বটি ও দা। বটি ও দা-য়ে শুধুমাত্র রক্তের দাগ ছিল।

বাচ্চাদের ঘাড়ের কোপগুলো এবড়ো-তেবড়ো। সাধারণ বটি ও দা দিয়ে কোপালে এটা সম্ভব। আমরা পুলিশ পাহারায় তাকে চিকিৎসা করাচ্ছিলাম। তখন তিনি বলেন, আমার বাসায় অনেকগুলো মাছ এসেছিল। সেগুলো কেটেছি। এছাড়া চিকিৎসক তার কোনো মানসিক সমস্যা খোঁজে পাননি।

নিহত আলিমা বেগম পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। আলিমার সঙ্গে পেটের বাচ্চাটিও মারা গেছে জানিয়ে পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমরা নয়টি আলামত থেকে হত্যার ঘটনায় হিফজুরকে গ্রেফতার দেখিয়েছি। এরমধ্যে প্রথমত, ঘটনার সময় বাইরে থেকে কোনো লোক ঘরের ভেতরে ছিল বলে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয়ত, ঘরের দরজা বাইরে থেকে ভাঙার আলামত নেই। তৃতীয়ত, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া ও বিবাদ ছিল। চতুর্থত, হিফজুর প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঘর থেকে বের হতেন পানের টাকা উঠাতে। যার সঙ্গে যাওয়ার কথা তাকে কল করে বলেছেন, পানের টাকা নিতে আজকে যেতে পারবো না। পঞ্চমত, তিনি ভোরে তিন জনকে কল করে বলেছেন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা। ষষ্ঠ, তার মানসিক সমস্যার কথা বলা হলেও চিকিৎসকরা মানসিক সমস্যার খোঁজ পাননি। সপ্তমত, তার দেহের আঘাত গভীর না, সেগুলো নিজে নিজেই করা সম্ভব, মত দিয়েছেন চিকিৎসকরা। অষ্টম, তার ঘরে কেউ ঢুকলে আগে তাকে মারার কথা। নবম, বাসার সবার ওপর তিনি অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিল, তার পায়ে মাটি ছিল, তাতে বুঝা যায় হত্যার সময় তিনি হাঁটাহাটি করেছেন। এতেই বোঝা যায় হত্যাকাণ্ড তিনিই ঘটিয়েছেন।
 
পুলিশ সুপার ফরিদ আরো বলেন, তবে হাসপাতালে ঘুমের ঘরে অনেকটা প্রলাপ করেছেন ঘরে তিনি অনেক মাছ কেটেছে। হিফজুর এখনো চিকিৎসাধীন। তবে আশঙ্কামুক্ত, তাই তাকে স্ত্রী ও দুই সন্তান হত্যার দায়ে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।  
 
গত বুধবার (১৬ জুন) ভোরে সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলায় বসতঘর থেকে দুই শিশুসহ গৃহবধূর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় ঘর থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় গৃহকর্তা হিজবুর রহমানকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

নিহত তিনজন হলেন- গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুরের বিন্নাকান্দি ফুলেরতল গ্রামের হিজবুর রহমানের স্ত্রী আলেমা বেগম (৩৫), তাদের ছেলে মিজান (৮) ও মেয়ে তানিশা (৫)।  

বুধবার মধ্যরাতে নিহত আলিমা বেগমের বাবা আয়ুব আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলায় হিজবুরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

আরও পড়ুন>>

** সিলেটে ট্রিপল মার্ডার: আলিমা ছিলেন ৫ মাসের গর্ভবতী
** সিলেটে তিন খুন: সন্দেহের তীর স্বজনদের দিকে
** সিলেটে ট্রিপল মার্ডার: অজ্ঞাত আসামি করে মামলা
** একই পরিবারের তিনজনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২১
এনইউ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।