ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

করোনা আতঙ্কে জমছে না উদ্যান ও চিড়িয়াখানা

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০২০
করোনা আতঙ্কে জমছে না উদ্যান ও চিড়িয়াখানা করোনা আতঙ্কে জমছে না উদ্যান ও চিড়িয়াখানা

রাজশাহী: বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে এমনিতেই বিনোদনের সুযোগ কম। কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা এবং একটি মাত্র শিশু পার্ক।

তাও করোনার ছোবলে বন্ধ। তবে ঈদের দিন (১ আগস্ট) থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজশাহীর শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দর্শনার্থীর অভাবে তা জমছেনা! আর এজন্য আয়ও কমেছে উদ্যান ও চিড়িয়াখানার।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশ মুখেই জীবাণুনাশক ট্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। তার মধ্যে দিয়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশ ও বাহির হতে হচ্ছে। এছাড়া ভেতরে থাকা রাইডে ওঠানোর আগে হাত স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। এছাড়া উদ্যানের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘোরফেরা করার জন্য দর্শনার্থীদের সতর্ক করে বার বার মাইকিং করা হচ্ছে। আর দর্শনার্থীদের কাছ থেকে যেন চিড়িয়াখার কোনো পশু বা চিড়িয়াখানার কোনো পশু থেকে দর্শনার্থীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ না ছড়ায় সেজন্য নিরাপদ দূরত্বে থেকে প্রতিটি খাচার সামনে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।  

ঈদের দিন থেকে এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজশাহীর শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা খোলা রাখা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা টিকিট কেটে উদ্যানের ভেতরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেন, শিশুরা বিভিন্ন রাইডে উঠে আনন্দ নিচ্ছে এবং চিড়িয়াখানার পশু-পাখি দেখা যাচ্ছে।  

তবে রাজশাহী সিটি করপোরেশন পরিচালিত শহীদ জিয়া শিশু পার্কটি এখনও বন্ধ। সেই হিসেবে একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেওয়ায় এখানে ভিড় হওয়ার কথা বেশি। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই বিনোদন কেন্দ্র খোলা থাকলেও করোনা আতঙ্কে আগের সেই উপচে পড়া ভিড় এখন আর নেই। বছরের সব সময়ই মানুষে গমগম করে উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। আর ঈদের মৌসুমে তো ভেতরে পা ফেলারই জায়গা থাকেনা। কিন্তু এই করোনাকালের ঈদে ভেতরে ঢুকে দেখা যায় সব জায়গায় ফাঁকা ফাঁকা। ভেতরে যারা যাচ্ছেন ঘুরে ফিরেই বেরিয়ে আসছেন। উদ্যানের সঙ্গে থাকা পার্কে বিভিন্ন রাইডস বেশিরভাগ সময় অলসই পড়ে থাকছে। কেউ কেউ আবার লেকের ধারে থাকা প্যাডেল নৌকা নিয়ে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরছেন।

স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে কেন্দ্রীয় উদ্যানে আসা ফায়সাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, করোনাকালে সবকিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে মানুষ এখনও ঘরবন্দি। আগে করোনা সংক্রমণ কম ছিল। এরপরও তখন সবাই লকডাউনের আওতায় ছিল। আর এখন প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়লেও সব খুলে দেওয়া হচ্ছে। এরপরও যারা সচেতন তারা এই সংকটময় পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে নিজেরাই স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি থাকছেন। সন্তানদেরও বাইরে বের হতে দিচ্ছেন না। যে কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই বিনোদনকেন্দ্র খোলা হলেও আগের মতো লোক সমাগম হচ্ছে। যারা আসছেন তারা নিতান্তই সন্তানদের জেদের বসে আসছেন।  
  
এদিকে, চিড়িয়াখানা কম্পাউন্ডে থাকা দর্শনার্থী আজিজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, এই চিড়িয়াখানায় আগে বাঘ-ভাল্লুক, সিংহসহ অনেক আকর্ষণীয় পশুই ছিল। কিন্তু প্রায় এক যুগ হতে চলেছে এই পশুগুলার খাচা বর্তমানে শূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। বাঘ নেই সিংহ নেই! কি দেখবে মানুষ। আকর্ষণীয় পশু না থাকায় ক্রমে শ্রীহীন হয়ে পড়ছে চিড়িয়াখানা। তাই লোকজন আসছে কম। যারা আসছেন তারা উদ্যানের অংশে ঘুরে বের হওয়ার সময় চিড়িয়াখানা অংশে গিয়ে বানর, অজগর, বিভিন্ন জাতের পাখি, হরিণ ইত্যাদি পশু-পাখি দেখে মন ভোলাচ্ছেন। মূলত উদ্যানের কারণেই মানুষ বেশি আসছে। তবে সবার পছন্দের বাঘ-সিংহ আনলে আরও বেশি মানুষ আসবে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন- চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসা সাধারণ এই দর্শনার্থী।  

শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান উদ্যান ও চিড়িয়াখানার সুপারভাইজার শরীফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় পাঁচ মাস পর মহানগরের প্রধানতম এই বিনোদনকেন্দ্রের তালা খুলেছে। এর মধ্যে গত ১ আগস্টই বেশি ভিড় ছিল।  

ওই দিন লক্ষাধিক টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। বলা যায়, ঈদের পর দিন থেকেই দর্শনার্থী কম। এখন গড়ে ৮০০ থেকে একহাজার দর্শনার্থী আসছেন। আগে ঈদ মৌসুমে বাসে করে বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসতো। এখন তারাও আসছে না। এতে উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় ভিড় কম হচ্ছে। আর তাই আয়ও কমেছে।

তবে করোনা সংক্রমের কথা চিন্তা করে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন- শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা ও উদ্যানের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক এবং ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ উদ্দীন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দর্শনার্থীদের প্রবেশ থেকে বাহির হওয়া পর্যন্ত সবাইকে স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে দিয়েই চলতে হচ্ছে। এ বিষয়টি যারা এখনও জানেন না তারা আসছেন না। তবে ধীরে ধীরে সবাই এই বিষয়টি জেনে গেলে আবারও দর্শনার্থী বাড়বে।  

আর বর্তমান মেয়র ক্ষমতা গ্রহণের পর রাজশাহী সিটি করোপরেশন পরিচালিত এই কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার হারানো সৌন্দর্য আবারও ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বিগত সময়ে ক্ষমতায় থাকাকালে নগরপিতা উদ্যান ও চিড়িয়াখানাকে ঢেলে সাজিয়ে ছিলেন। এবার দায়িত্ব নেওয়ার পর তার আরও শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে। এরই মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, জিরাফসহ আরও বেশ কিছু পশু আনার ব্যাপারে সকল বিষয় চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে সব বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে  চিড়িয়াখানাও স্বকীয়তা ফিরে পাবে, আকর্ষণীয় পশু-পাখিতে ভরে উঠবে। এছাড়া এর পরিধিও বাড়বে বলেও ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানান ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২০
এসএস/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।