জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে ৩২ সেণ্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩৫ সেণ্টিমিটার উপর দিয়ে, ধলেশ্বরী নদীর পানি ২৩ সেণ্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৭ সেণ্টিমিটার উপর দিয়ে এবং ঝিনাই নদীর পানি ১৬ সেণ্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৭ সেণ্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সূত্র মতে, প্রথম দফা বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই গত রোববার (১২ জুলাই) বিকেল থেকে দ্বিতীয় দফায় নদীতে পানি বাড়ায় জেলার বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিচ্ছে। প্রথম দফা বন্যার পর পানি কমতে থাকায় চরাঞ্চলের যেসব মানুষ বাড়িতে ফিরছিলেন তারা আবার নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র জানায়, জেলায় এ পর্যন্ত টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, দেলদুয়ার, ভূঞাপুর, কালিহাতী এবং গোপালপুর এ ছয়টি উপজেলার ১৬২ বর্গকিলোমিটার এলাকায় পানি ঢুকে ২৪টি ইউনিয়নের ন্যূনতম ১৩৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
অপরদিকে জেলার উপ-শহর খ্যাত এলেঙ্গা পৌরসভার আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে ২১ হাজার ১৭৮টি পরিবারের প্রায় সোয়া লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৯ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে ভাঙনের শিকার হয়ে ৫৮৬টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও এক হাজার ৭৫টি ঘরবাড়ি আংশিক নদীতে বিলীন হয়েছে।
এছাড়া নাগরপুরে একটি সম্পূর্ণ স্কুল ভবন নদীতে ধসে পড়েছে এবং দুইটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলি জমি নিমজ্জিত হওয়ার পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে।
মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) পর্যন্ত ৫ হাজার ৯২৮ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে বোনা আমন ২৩ হেক্টর, রোপা আমন (বীজতলা) ৩ হেক্টর, পাট ৭৬৫ হেক্টর, আউশ ৮৯৬ হেক্টর, সবজি ২৮৫ হেক্টর, তিল এক হাজার ৬৫২ হেক্টর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার জানান, ফসলি জমিগুলোতে পানি স্থিতিশীল থাকায় ৫০ ভাগ ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাকি ৫০ ভাগ ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। জেলা কৃষি বিভাগ বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে থেকে সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফের জেলার নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। দ্বিতীয় দফায় নদীতে পানি বাড়ায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
তিনি আরো জানান, যেসব নদীর তীর ভাঙনের কবলে পড়ছে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২০
আরএ