এসব শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের প্রায় ৮ শতাধিক নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী, সহস্রাধিক কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক, চার শতাধিক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক, সহস্রাধিক প্রাইভেট নির্ভর শিক্ষক ও আট শতাধিক ইসলামিক ফাউন্ডেশনের শিক্ষক।
নাজিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, উপজেলায় রাজলহ্মী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আকুল বালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বৈঠাকাটা আদর্শ বালিকা নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সবদুল খান দাখিল মাদরাসা, রাজলহ্মী কলেজ নন-এমপিও ভুক্ত রয়েছে।
এছাড়া উপজেলা সদরের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহাবিদ্যালয়টি জাতীয়করণ ঘোষণা হলেও কলেজটি এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। ওই কলেজের অধ্যক্ষ ঠাকুরচাঁদ মজুমদার বাংলানিউজকে জানান, কলেজটি গত ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে জাতীয়করণ ঘোষণা হলেও কলেজটি এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। কলেজের ৭২ জন শিক্ষক ও ১৩ জন কর্মচারী মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ওই কলেজের প্রভাষক আবু বক্কর ছিদ্দিক বাংলানিউজকে জানান, বাবা নেই, পরিবারে মা সহ ৫-৬ জনের সদস্যদের দেখভাল করতে হয়। অত্যন্ত কষ্টে দিন কাটে। তাছাড়া ঈদ এলে আমাদের ঘরে ঈদের কোনো আনন্দ দেখা যায় না।
এছাড়া জেলার প্রায় ৯০টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষক বিনা বেতনে পাঠদান করছেন।
জেলার নাজিরপুর উপজেলার কালিকাঠী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মাহমুদা শারমিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে বিনা বেতনে পাঠদান করাতে হচ্ছে। তাছাড়া করোনার কারণে কোনো ধরনের প্রাইভেট না থাকায় একটি টাকাও আয় নেই। ঈদের আনন্দ পুরো পরিবারকে বঞ্চিত করবে।
জেলার সাতটি উপজেলায় প্রায় শতাধিক কিন্ডারগার্টেন ও ক্যাডেট মাদরাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১২শ’ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। এসব শিক্ষক-কর্মচারীদের সবাই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বেতনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু করোনার প্রভাবের কারণে দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
জেলার সদরের ফাতেম শিশু নিকেতনের শিক্ষক মশিউর রহমান রাহাত বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের অধিকাংশ শিক্ষকরা চরম করুণ অবস্থায় রয়েছেন। তারা প্রকাশ্যে ত্রাণ বা কোনো সাহায্য নিতে পারছেন না। অর্থিক অনটনে ঈদে তাদের পরিবার ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জানা যায়, জেলা ঝুড়ে প্রায় ৮০০ মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গণশিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি মসজিদে একজন করে শিক্ষক নিয়ে ৮০০ শিক্ষক ও প্রায় ৫০ জন পরিদর্শক রয়েছে।
জেলা ইমাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রফিকুল ইসলাম জানান, এসব মসজিদভিত্তিক গণ শিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষক ও পরিদর্শকদের গত প্রায় পাঁচ ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। এতে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঈদে তাদের পরিবার এ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সমাজের এক শ্রেণির লোক আছেন যারা তাদের দীর্ঘদিনের লালিত মর্যদার কারণে কোনো ধরনের ত্রাণ নিতে নিজেদের তালিকা ভুক্ত করতে চান না। সেই শ্রেণির লোকই হলেন সমাজের এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা। আর সেক্ষেত্রে সরকারের উচিত তাদের আলাদা মর্যদার জায়গায় রেখে সম্পৃক্ত করা।
তিনি আরও জানান, পিরোজপুর জেলার এসব শিক্ষকদের আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সামান্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৯ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২০
এনটি