বাংলানিউজে গত সোমবার (১৮ মে) ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠানো টাকাতে নয়-ছয়ের অভিযোগ’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে দায় এড়াতে তিনি এ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।
জানা যায়, করোনা প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন মানুষের জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা এবং ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার চারটিতে বৈশাখী ভাতা ছাড় দেওয়ার আগেই ২০ শতাংশ কেটে ব্যাংকে দেওয়া হলেও আদিতমারী উপজেলায় শিক্ষকদের কাছ থেকে হাতে হাতে বা বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায় করেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এনএম শরীফুল ইসলাম খন্দকার।
শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর বৈশাখী ভাতা বাবদ এ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে মোট ২২ লাখ ৩০ হাজার ১৭০ টাকা পাস করা হয়। যার ২০ শতাংশ ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪ টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু পাঠানো হয় ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৭০ টাকা। অবশিষ্ট এ অর্থ শিক্ষা অফিস আত্মসাৎ করেছে বলে শিক্ষকরা অভিযোগ তোলেন।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলানিউজে গত সোমবার (১৮ মে) ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠানো টাকাতে নয়-ছয়ের অভিযোগ’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এনএম শরীফুল ইসলাম।
পরে নিজের অবস্থান জানাতে বাংলানিউজে প্রতিবাদ পাঠান। যেটা ফেসবুকেও তিনি প্রচার করছেন।
নিজের অবস্থান জানিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, উপজেলার ৬৮০ জন শিক্ষক, ৭ জন কর্মকর্তা কর্মচারী, ২৫ জন দপ্তরি কাম প্রহরী ও শিশু কল্যাণ বিদ্যালয় মিলে মোট ২২ লাখ ৩০ হাজার ১৭০ টাকা বৈশাখী ভাতা পাস করা হয়। যার ২০ শতাংশ ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪ টাকা ত্রাণ তহবিলে পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠানো হয় ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৭০ টাকা। যার ঘাটতি ৩৪ হাজার ৪৬ টাকার মধ্যে দপ্তরিদের ৮ হাজার ২৫০ টাকা ও অবসরজনিত ৩ জন শিক্ষকের ২ হাজার ২২৫ অনাদায় এবং পাঠানো ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৭০ টাকা বিকাশ থেকে ক্যাশে রূপান্তরে খরচ হয়েছে ৭ হাজার ৪১৫ টাকা। অবশিষ্ট ১৬ হাজার ১৭৩ টাকা তিনি ঘাটতি দেখালেও উপযুক্ত ব্যাখ্যা দেননি।
এতে তার হিসাবে এখনও গরমিল স্পষ্ট।
শিক্ষা অফিসারের তথ্যমতে, পাঠানো পুরো টাকাই বিকাশ থেকে ক্যাশে রূপান্তর করেছেন। এমনকি নিজের টাকাও তিনি বিকাশে ভরিয়ে আবার উত্তোলন দেখিয়েছেন। যদিও অনেক শিক্ষক হাতে হাতে এবং বিকাশে পাঠানো সব শিক্ষকই হাজারে ২০ টাকা হিসাবে খরচসহ টাকা পাঠিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
ত্রুটিপূর্ণ সেই হিসাবের কম্পোজ করা কপি তিনি ফেসবুকে প্রচার করতে শিক্ষকদের চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, অনেকেই হাতে হাতে টাকা জমা দিয়েছি। বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিজন শিক্ষক হাজারে ২০ টাকা বিকাশ খরচসহ ১০-৫০ টাকা অতিরিক্ত পাঠিয়েছি। ত্রাণ তহবিলে দানের টাকা আত্মসাতের ঘটনার উচ্চতর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এনএম শরীফুল ইসলাম খন্দকারকে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, খবর প্রকাশের পরে তার কাছে ব্যাখা চাওয়া হলে তিনি একটা হিসাব দাখিল করেছেন। ঈদের ছুটির পরে সেই হিসাবে সত্যতা যাচাই করা হবে।
** প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠানো টাকাতে নয়-ছয়ের অভিযোগ
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২০
এএ