ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠানো টাকাতে নয়-ছয়ের অভিযোগ 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৭ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২০
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠানো টাকাতে নয়-ছয়ের অভিযোগ 

লালমনিরহাট: করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠানোর জন্য আদায় করা টাকাতেও নয়-ছয় করার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে। 

জানা গেছে, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে সরকারিভাবে অঘোষিত লকডাউনে রয়েছে দেশ। ফলে দেশে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

কর্মহীন এসব মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছে সরকার। পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা এবং ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ বিতরণ করছেন অনেকেই। অনেকেই দেশের ক্লান্তিকালে সরকারকে সহায়তা করতে ব্যক্তিগত টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দিচ্ছেন। সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান তার বিশাল কর্মীবাহিনীর বেতনের অংশ ওই ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বিত্তবানের পাশাপাশি ভিক্ষুকও দান করেছেন।  

এরই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সব কর্মকর্তা কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতার ২০ শতাংশ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান  করেন। দেশের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সব কর্মকর্তা কর্মচারী ও শিক্ষকদের ওই টাকা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা জারি করে অধিদফতর।  

লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ৪টিতে বৈশাখী ভাতা ছাড় দেওয়ার আগেই ২০ শতাংশ কেটে ব্যাংকে দেওয়া হলেও আদিতমারী উপজেলায় সমুলে ছাড় দিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে হাতে হাতে বা বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায় করেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এনএম শরীফুল ইসলাম খন্দকার। কিন্তু আদায়ের চেয়ে অনেক কম পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। যা নয়-ছয় হিসাব দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।  

শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মোট ১০৮ জন প্রধান শিক্ষক ও ৫৫৬ জন সহকারী শিক্ষকের বিপরীতে ৪টি বিল সিটের মাধ্যমে ২১ লাখ ৬৫২ টাকা এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ৩২ হাজার ১৫০ টাকা বৈশাখী ভাতা দেয় সরকার। যার ২০ শতাংশ ৪ লাখ ২৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং শিশু কল্যাণের ২ হাজার ২২৫ টাকা নিয়ে সর্বমোট ৪ লাখ ২৮ হাজার ৭৮৫ টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এনএম শরীফুল ইসলাম খন্দকার শিক্ষা অধিদফতরে পাঠিয়েছেন মাত্র ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৭০ টাকা। যার মধ্যে ১৬ হাজার ৮১৫ টাকার কোনো হদিস নেই। অবশিষ্ট এ অর্থ শিক্ষা অফিস আত্মসাৎ করেছে বলে শিক্ষকদের অভিযোগ।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, প্রতিজন শিক্ষক বিকাশ খরচসহ পাঠিয়েছি। কম দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বরং বিকাশ খরচ হিসাবের চেয়ে অনেকেই বেশি পাঠিয়েছেন। টাকা নয়-ছয় করতেই শিক্ষা অফিস ভাতা ছাড় দিয়ে বিকাশে আদায় করেছেন। মোট ভাতার ২০ শতাংশের হিসাব করে তো পাঠাতে পারতেন। আত্মসাতের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় শিক্ষকদের দায়ী করতে কম বা না দেওয়ার মত ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছেন শিক্ষা অফিসার। ইতোপূর্বেও সরকারি টাকা উত্তোলন করে নিজের হিসাব নম্বরে রাখার দায়ের উকিল নোটিশ পেয়েছিলেন এই কর্মকর্তা। যা পরে বিদ্যালয় কমিটিকে পরিশোধও করেন বলেও জানান শিক্ষকরা।  

তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এনএম শরীফুল ইসলাম খন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, বেতন ভাতা কর্তন করার নিয়ম নেই। তাই সবাইকে তাদের প্রাপ্য বুঝে দিয়ে ত্রাণ তহবিলের জন্য এটিওদের মাধ্যমে ২০ শতাংশ বিকাশে আদায় করা হয়েছে। আত্মসাৎ নয়। শিশু কল্যাণসহ ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৭০ টাকা আদায় করে পাঠানো হয়েছে। হয়তো কেউ জমা দেননি। তাই কম গেছে। অফিস খুললে তদন্ত করে দেখা হবে কে জমা দেয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।