করোনা ভাইরাসের রোগী পাওয়ার পর রাজধানীসহ দেশের অনেক স্থানেই স্বেচ্ছায় লকডাউন ঘোষণা করা করতে দেখা যায়। এলাকার যুবক ও স্বেচ্ছাসেবকরা এসব এলাকা লকডাউন করে পাহারা দিচ্ছে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে ঢাকায় মিরপুরের টোলারবাগে করোনা রোগী শনাক্তের ওই এলাকা লকডাউন করা হয়। এরপর থেকে একে একে পুরান ঢাকায় খাজে দেওয়ান লেনের ২০০ ভবন, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সামনে, তাজমহল রোড মিনার মসজিদ এলাকা, রাজিয়া সুলতানা রোড, বাবর রোডের একাংশ, বছিলা ও আদাবর এলাকার কয়েকটি বাড়ি এবং রাস্তা, মোহাম্মদপুর এবং আদাবরের ৬টি এলাকাসহ রাজধানীর ৫২টি এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে লকডাউন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এলাকাভিত্তিক লকডাউনের ফলে করোনা ভাইরাস এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছড়াবে না। এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। তবে যদি কমিউনিটি সংক্রমণ হয়ে হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে আর করার কিছু নেই। যে এলাকায় সংক্রমণ হয়েছে, সেখানেই যেন তাকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখা যায় এটা সে উদ্দেশ্যেই করা। ’
স্বেচ্ছাসেবক নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন, তাদের অবশ্যই ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিয়ে কাজ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। পাশাপাশি নিয়ম মোতাবেক সামাজিক দূরত্ব অবশ্যই বজায় রেখে কাজ করতে হবে। ’
করোনা ভাইরাস রোধে এলাকাভিত্তিক সচেতনতা প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ এবং স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘লকডাউন মানে প্রত্যেকে অবশ্যই বাড়িতে থাকতে হবে। স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এলাকাবাসী যদি লকডাউন করে তাহলে সেটা ভালো উদ্যোগ। ’
ওই এলাকায় যদি কোনো ইমারজেন্সি ঘটনা ঘটে তাহলে লকডাউনের ফলে কোনো বাধার সৃষ্টি হবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যদি লকডাউন করা এলাকায় আগুন লাগে বা অন্য কোনো ইমার্জেন্সি হয় তাহলে ওই লোকগুলোই সবচেয়ে আগে এগিয়ে আসবে সাহায্য করতে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবকরা অন্যস্থানের লোকদের ওই এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছে না, আবার ওই এলাকার লোকদের বাসা থেকে বের হতে বারণ করছে। আমি মনে করি, এলাকাভিত্তিক পাড়ায় পাড়ায় আমাদের এই জাগরণটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রতিবেশীসুলভ আচরণগুলো আমরা ভুলতে বসেছিলাম। এখন আমরা কেউ কারো খোঁজ নেই না। যার ফলে এখন স্বেচ্ছায় এমন উদ্যোগকে আরও বেশি করে উৎসাহিত করা উচিত। সরকার বা প্রশাসনের অপেক্ষা না করে আমরা নিজেরাই নিজেদের এলাকার দায়িত্ব নেব। একজন আরেকজনকে বারণ করব যে বাসা থেকে বের হবেন না, আপনার কি দরকার আমাকে বলেন, প্রয়োজন হলে আমি খাবার রান্না করে আপনার বাসায় পৌঁছে দেব। আমাদের দেশের এমন সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যই ছিল। গত ২০ থেকে ৩০ বছরে আমরা আমাদের এই ঐতিহ্য থেকে সরে এসেছি। যদি করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের এই সামাজিক আচরণের পরিবর্তন আসে, সেটা অবশ্য ইতিবাচক। ’
ইকবাল হাবিব বলেন, ‘সরকারের উচিত স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে, শহরে হলে কাউন্সিলর মাধ্যমে, গ্রামে হলে মেম্বার-চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে এই উদ্যোগগুলোকে কোঅর্ডিনেট করা। স্বেচ্ছাসেবকদের সুরক্ষিত করা, তাদেরকে স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে গাইড লাইন দেওয়া। পাশাপাশি এই বেসরকারি স্ট্রাকচারকে কিভাবে করোনা প্রতিরোধে আরও বেশি কাজে লাগানো যায় সেই বিষয়টা ভাবা। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২০
আরকেআর/এজে