কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা অনুদানের পাশাপাশি চীনের উহান শহরের গোটা দুনিয়া আলোড়ন সৃষ্টিকারী ১ হাজার শয্যার ‘হুশেনশান হাসপাতালের’ চেয়ে ৫ গুণ বড় হাসপাতাল বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ।
বৈশ্বিক মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস।
এ অবস্থায় মানবসেবার ব্রত নিয়ে এগিয়ে এসেছে দেশের শীর্ষ শিল্প গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। করোনা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা অনুদানের চেক হস্তান্তর করা হয়েছে।
রোববার (২৯ মার্চ) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর অনুদানের এ চেক হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুদানের চেক গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন। অনুদানের চেক প্রদানের পর বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন।
বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার ও বসুন্ধরা ট্রেড সেন্টারকে করোনা চিকিৎসা ও কোয়ারেন্টিন হাউস হিসেবে ব্যবহার করতে প্রধানমন্ত্রীকে প্রস্তাব দেন বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর।
সায়েম সোবহান আনভীর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য ১০ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করলাম। সাথে আমাদের যে ইন্টারন্যাশন্যাল কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরা ও বসুন্ধরা ট্রেড সেন্টার আছে, আমরা চাই আপনি কাউকে বলে দেন এটাকে হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করার জন্য বা কোয়ারেন্টাইনের জন্য এটা ব্যবহার করা যেতে পারে। ’
‘এখানে ৫ হাজার লোক থাকার মতো ব্যবস্থা করা সম্ভব। সব কিছু রেডি করা আছে আপনি কাউকে বলে দেন তাহলে এটা এখনই ব্যবহার করতে পারে। ’
ত্রাণ তহবিলে আর্থিক অনুদানসহ হাসপাতাল বানানোর উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক ধন্যবাদ জাতির ক্রান্তিলগ্নে পাশে দাঁড়ানোর জন্য। ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে লিখিতভাবেও এ প্রস্তাব জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ চিঠি হস্তান্তর করেন বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর।
লিখিত প্রস্তাবে রাজধানীর কুড়িলে বসুন্ধরার চারটি কনভেনশন সেন্টার ও একটি ট্রেড সেন্টারকে ৫ হাজার শয্যার হাসপাতালে রূপান্তরিত করার কথা বলা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বসুন্ধরা গ্রুপের এ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর।
দীর্ঘদিন ধরে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছে বসুন্ধরা গ্রুপ। নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজের পাশাপাশি জাতির যে কোনো সংকটে সহায়ক শক্তি হয়ে সরকারের পাশে দাঁড়ায় প্রতিষ্ঠানটি।
তারই ধারাবাহিকতায় করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি রাজধানীর তিন’শ ফিট সড়কের পাশে ইন্টারন্যাশন্যাল কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরা ও বসুন্ধরা ট্রেড সেন্টারকে হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করার প্রস্তাব দেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর।
ইন্টারন্যাশন্যাল কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরার চারটি হল রুম আছে। বড় হল রুমটি ৩০ হাজার স্কয়ার ফিট এবং বাকি তিনটি হল রুমের প্রতিটি ২৪ হাজার স্কয়ার ফিট। এছাড়া বসুন্ধরা ট্রেড সেন্টারের আয়তন এক লাখ ৫০ হাজার স্কয়ার ফিট। এসব স্থাপনায় ৫ হাজার বেডের হাসপাতাল তৈরি করা সম্ভব।
পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ, আলাদা রান্নার ব্যবস্থা ছাড়াও আধুনিক পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থাপণাসহ করোনা ভাইরাস হাসপাতালের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে এখানে।
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বিভিন্ন সরকারী সংস্থা ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের দেয়া অনুদান সরাসরি গ্রহণ করতে না পারায় প্রধানমন্ত্রী দুঃখপ্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ভিডিও কনফারেন্সে আছি, আমার পক্ষ থেকে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি তা গ্রহণ করছেন। এটা আমার কাছে খারাপও লাগছে কারণ আপনাদেও সঙ্গে মুখোমুখি দেখা করতে পারলাম না। ’
‘কারণ এটার আরেকটা কারণ হচ্ছে আমি নিজেই যদি না মানি তাহলে অপরকে মানতে বলবো কিভাবে? কারণ যেহেতু সবাইকে বলছি দুরত্ব বজায় রাখতে, ঘরে থাকতে। ’
বসুন্ধরা গ্রুপ ছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে আর্থিক অনুদান এবং পিপিই ও মাস্ক দেয়।
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সেনাবাহিনী ২৫ কোটি টাকা, নৌবাহিনী ৪ কোটি ৫০ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৩ টাকা, বিমান বাহিনী ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ১ কোটি টাকা, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ১ কোটি টাকা অনুদান দেয়।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, সীমান্তরক্ষা বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব, জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস অনুদানের চেক গ্রহণ করেন।
গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া ওরিয়ন গ্রুপ ৩ কোটি টাকা, নাভানা গ্রুপ ২৫ লাখ টাকা, হোসাফ গ্রুপ ৫ কোটি টাকা, আবুল খায়ের গ্রুপ ৫০ লাখ টাকা, সামিট পাওয়ার লিমিটেড ৩ কোটি টাকা, কনফিডেন্স পাওয়ার কোম্পানি ৩ কোটি টাকা, দি ওয়েস্টিন হোটেল ২ কোটি, লা মেরিডিয়ান ২ কোটি টাকা অনুদান দেয়।
সিএমসি-চায়না ১০ লাখ মাস্ক, ১০ হাজার পিপিই এবং কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স ১০ হাজার পিপিই দেয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে।
** করোনা: ৫ হাজার শয্যার হাসপাতাল বানাবে বসুন্ধরা গ্রুপ
** প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে ১০ কোটি টাকা দিল বসুন্ধরা গ্রুপ
** করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর বার্তা
** ‘ঘাবড়াবেন না, করোনা সংকটে সবকিছু নিয়ে পাশে আছে সরকার’
বাংলাদেশ সময়: ০২০৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২০
এমইউএম/এসআরএস